জেলার নামকরণ
প্রকাশ | ০৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
খুলনা বিভাগ
১. বাগেরহাট জেলা : এক সময় বাগেরহাটের নাম ছিল খলিফাতাবাদ বা প্রতিনিধির শহর। খানজাহান আলী (রা.) গৌড়ের সুলতানদের প্রতিনিধি হিসেবে এ অঞ্চল শাসন করতেন। কেউ কেউ মনে করেন, বরিশালের শাসক আঘা বাকেরের নামানুসারে বাগেরহাট হয়েছে। কেউবা বলেন, পাঠান জায়গিদার বাকির খাঁর নামানুসারে বাগেরহাট হয়েছে। আবার কারো মতে, বাঘ শব্দ থেকে বাগেরহাট নাম হয়েছে। জনশ্রম্নতি আছে খানজাহান আলীর (রা.) একটি বাগ (বাগান, ফার্সি শব্দ) বা বাগিচা ছিল। এ বাগ শব্দ থেকে বাগেরহাট। কারো মতে, নদীর বাঁকে হাট বসত বিধায়, বাঁকেরহাট। বাঁকেরহাট থেকে বাগেরহাট।
২. চুয়াডাঙ্গা জেলা : চুয়াডাঙ্গার নামকরণ সম্পর্কে কথিত আছে, এখানকার মলিস্নক বংশের আদিপুরুষ চুঙ্গো মলিস্নকের নামে এ জায়গার নাম চুয়াডাঙ্গা হয়েছে। ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে চুঙ্গো মলিস্নক তার স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ভারতের নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার সীমানার ইটেবাড়ি-মহারাজপুর গ্রাম থেকে মাথাভাঙ্গা নদীপথে এখানে এসে প্রথম বসতি গড়েন। ১৭৯৭ সালের এক রেকর্ডে এ জায়গার নাম চুঙ্গোডাঙ্গা উলেস্নখ রয়েছে। ফার্সি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করার সময় উচ্চারণের বিকৃতির কারণে বর্তমান চুয়াডাঙ্গা নামটা এসেছে। চুয়াডাঙ্গা নামকরণের আরো দুটি সম্ভাব্য কারণ প্রচলিত আছে। চুয়া < চয়া চুয়াডাঙ্গা হয়েছে।
৩. যশোর জেলা : ১৭৮১ সালে যশোর একটি পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং এটিই হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম জেলা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্বাধীন হওয়া জেলাটি যশোর। যশোর, সমতটের একটা প্রাচীন জনপদ। নামটি অতি পুরনো। যশোর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। যশোর (জেসিনরে) আরবি শব্দ যার অর্থ সাঁকো। অনুমান করা হয় কসবা নামটি পীর খানজাহান আলীর দেয়া (১৩৯৮ খ্রি.)। এককালে যশোরের সর্বত্র নদী-নালায় পরিপূর্ণ ছিল। আগে নদী বা খালের ওপর সাঁকো নির্মিত হতো। খানজাহান আলী বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে ভৈরব নদী পার হয়ে মুড়লীতে আগমন করেন বলে জানা যায়। এই বাঁশের সাঁকো থেকে যশোর নামের উৎপত্তি। তবে এই মতে সমর্থকদের সংখ্যা খুবই কম। ইরান ও আরব সীমান্তে একটি স্থানের নাম যশোর যার সঙ্গে এ যশোরের কোনো সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না। খানজাহান আলীর আগ থেকেই এ যশোর নাম ছিল। অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেন, প্রতাপ আদিত্যের পতনের পর চাঁচড়ার রাজাদের যশোরের রাজা বলা হতো। কেননা তারা যশোর রাজ প্রতাপাদিত্যের সম্পত্তির একাংশ পুরস্কারস্বরূপ অর্জন করেছিলেন। এই মতও সঠিক বলে মনে হয়। জে. ওয়েস্টল্যান্ড তার যশোর প্রতিবেদনের ১৯৩ পৃষ্ঠায় উলেস্নখ করেছেন, রাজা প্রতাপাদিত্য রায়ের আগে জেলা সদর কসবা মৌজার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বনগাঁ-যশোর পিচের রাস্তা ১৮৬৬-৬৮ কালপর্বে তৈরি হয়। যশোর-খুলনা ইতিহাসের ৭৬ পাতায় লেখা আছে 'প্রতাপাদিত্যের আগে লিখিত কোনো পুস্তকে যশোর লেখা নাই'। সময়ের বিবর্তনে নামের পরিবর্তন স্বাভাবিক।