৪. ঝালকাঠি জেলা : জেলার নামকরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ জেলার জেলে সম্প্রদায়ের ইতিহাস। মধ্যযুগ-পরবর্তী সময়ে সন্ধ্যা, সুগন্ধা, ধানসিঁড়ি আর বিষখালী নদীর তীরবর্তী এলাকায় জেলেরা বসতি স্থাপন করে। এর প্রাচীন নাম ছিল 'মহারাজগঞ্জ'। মহারাজগঞ্জের ভূ-স্বামী শ্রী কৈলাশ চন্দ্র জমিদারি বৈঠক সম্পাদন করতেন এবং পরে তিনি এ স্থানটিতে এক গঞ্জ বা বাজার নির্মাণ করেন। এ গঞ্জে জেলেরা জালের কাঠি বিক্রি করত। এ জালের কাঠি থেকে পর্যায়ক্রমে ঝালকাঠি নামকরণ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। জানা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে জেলেরা এখানে মাছ শিকারের জন্য আসত এবং যাযাবরের মতো সুগন্ধা নদীর তীরে বাস করত। এ অঞ্চলের জেলেদের পেশাগত পরিচিতিকে বলা হতো 'ঝালো'। এরপর জেলেরা বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে এখানে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তোলে। এভাবেই জেলে থেকে ঝালো এবং জঙ্গল কেটে বসতি গড়ে তোলার কারণে কাটি শব্দের প্রচলন হয়ে ঝালকাটি শব্দের উৎপত্তি হয়। পরে ঝালকাটি রূপান্তরিত হয় ঝালকাঠিতে। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রম্নয়ারি ঝালকাঠি পূর্ণাঙ্গ জেলার মর্যাদা লাভ করে।
৫. পটুয়াখালী জেলা : ঐতিহাসিক ঘটনাবলি থেকে জানা যায়, পটুয়াখালী চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পটুয়াখালী নামকরণের পেছনে প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের লুণ্ঠন অত্যাচারের ইতিহাস জড়িত আছে বলে জানা যায়। পটুয়াখালী শহরের উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত নদীটি পূর্বে ভরণী খাল নামে পরিচিত ছিল। ষোড়শ শতাব্দীর শুরু থেকে পর্তুগিজ জলদসু্যরা এই খালের পথ দিয়ে এসে সন্নিহিত এলাকায় নির্বিচারে অত্যাচার, হত্যা, লুণ্ঠন চালাত। স্থানীয় লোকেরা এই হানাদারদের 'নটুয়া' বলত এবং তখন থেকে খালটি নটুয়ার খাল নামে ডাকা হয়। কথিত আছে, এই 'নটুয়ার খাল' খাল থেকে পরে এ এলাকার নামকরণ হয় পটুয়াখালী।
৬. পিরোজপুর জেলা : 'ফিরোজ শাহের আমল থেকে ভাটির দেশের ফিরোজপুর, বেনিয়া চক্রের ছোঁয়াচ লেগে পাল্টে হলো পিরোজপুর'।
উপরোক্ত কথন থেকে পিরোজপুর নামকরণের একটা সূত্র পাওয়া যায়। নাজিরপুর উপজেলার শাঁখারী কাঠির হেলাল উদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবি করেছিলেন বলে জানা যায়। বাংলার সুবেদার শাহ। সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার কাছে পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণাঞ্চলে এসে আত্মগোপন করেন। একপর্যায়ে নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পাড়ে একটি কেলস্না তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয়, শাহ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকান রাজ্যে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অন্য এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী ও এক শিশুপুত্র রেখে যান। পরে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে ধীরে পশ্চিমে চলে আসেন এবং বর্তমান পিরোজপুরের পার্শ্ববর্তী দামোদর নদীর মুখে আস্তানা তৈরি করেন। এ শিশুর নাম ছিল ফিরোজ এবং তার নামানুসারে হয় ফিরোজপুর। কালের বিবর্তনে ফিরোজপুরের নাম হয় 'পিরোজপুর'। পিরোজপুর ১৯৫৯ সালের ২৮ অক্টোবর পিরোজপুর মহকুমা এবং পরে ১৯৮৪ সালে জেলার রূপান্তরিত হয়।