অষ্টম শ্রেণির বাংলা

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

মোচ্ছা. রুবিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক, দখিনা রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বাগাইছড়ি, রাঙামাটি
চতুর্থ অধ্যায় বানান ও অভিধান শুদ্ধতা ভাষার প্রাণ। ভাষার শুদ্ধ ও সঠিক ব্যবহারের জন্য শব্দের শুদ্ধ ও সঠিক বানানরীতি জানা প্রয়োজন। শব্দে বর্ণের বিন্যাসকে বানান বলে। বাংলা ভাষায় বিভিন্ন ভাষার শব্দ রয়েছে। ফলে শব্দের বানানরীতিও ভিন্ন ভিন্ন। শুদ্ধভাবে সেসব শব্দ লেখা ও বলার জন্য বানানরীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লেখার ক্ষেত্রে বাংলা বানান অশুদ্ধ হওয়ার নানা কারণ রয়েছে। বর্ণানুক্রমে শব্দ সাজাই : নিচের বাম কলামের শব্দগুলোকে অভিধানের বর্ণক্রম অনুযায়ী সাজিয়ে ডান কলামে লেখ। লেখা শেষ হলে সহপাঠীর সঙ্গে মিলিয়ে দেখ এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো। উত্তর: এলোমেলো শব্দ বর্ণক্রম অনুযায়ী সজানো শব্দ তাল পাটি দই আতা জাহাজ টমেটো শসা আতা জাহাজ টমেটো তাল দই পাটি শসা কাক কৃতজ্ঞ কোল কৌতুক কুলা কলা কলা, কাক, কুলা, কৃতজ্ঞ, কোল, কৌতুক তিসি তুলনা তুলা তাল তারুণ্য তারুণ্য, তাল, তিসি, তুলনা, তুলা পরিবর্তন একতা ভয় আজ শহর গ্রাম আজ, একতা, গ্রাম, পরিবর্তন, ভয়, শহর জুই ঝাল চাঁদ জামা জাঁতা চিল ছাল চাই। চাঁদ, চাই, চিল, ছাল, জামা, জাঁতা, জুঁই, ঝাল নকশা নির্ভয় নিঃশঙ্ক নিঃসংকোচ নিষ্পেষণ নিদ্রা নকশা, নিঃশঙ্ক, নিঃসংকোচ, নিদ্রা, নির্ভয়, নিষ্পেষণ রাক্ষস ব্যয় স্বাধীনতা স্বার্থ সার্থক ভ্রাতা শশ্মশান রশ্মি ব্যয়, ভ্রাতা, রশ্মি, রাক্ষস, শ্মশান, সার্থক, স্বাধীনতা, স্বার্থ কাজের ধরন : দলগত। কাজের উদ্দেশ্য: শিক্ষার্থীদের অভিধানের ধারণা অনুযায়ী বর্ণানুক্রম নির্ধারণ ও শব্দে সঠিক বানান প্রয়োগে দক্ষতা বৃদ্ধি করে তোলা। উপকরণ:পাঠ্যবই, খাতা, সাদা কাগজ, কলম প্রভৃতি। কাজের ধারা: ক। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসরণে প্রথমে সহপাঠীরা মিলে কয়েকটি দল গঠন কর। খ। দলের ছাত্রছাত্রীরা আলোচনা করে কারা কোন নমুনা উত্তরটি তৈরি করব তা ঠিক করে নেবে। গ। বানান ও অভিধানের বর্ণানুক্রমগুলো ভালো করে জেনে নেবে। ঘ। নমুনা উত্তরের জন্য প্রয়োজনে অভিভাবক, এলাকার ব্যক্তিবর্গের মতামত নাও। বানান ঠিক করি: নিচের লেখায় কিছু শব্দের বানান পরিবর্তন করে দেওয়া হলো। এসব শব্দের বানান অভিধানের সহায়তা নিয়ে ঠিক করো। [এখানে পাঠ্যবইয়ের সবুজ রঙের চিহ্নিত শব্দগুলো দাগ দেওয়া হয়েছে] শিক্ষা-প্রসঙ্গে কাজী মোতাহার হোসেন কোন জাতী কতটা সভ্য, তা নির্নয় করবার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মাপকাঠি হচ্ছে তার শিক্ষাব্যাবস্থা, পাঠ্যপুস্তক ও সাধারণ সাহিত্য। এ সবের ভিতর দিয়ে জাতির আশা-আকাংখা পরিস্ফুট হয়; নৈতিক ও সামাজিক মানের পরিমাপ করা যায়; এবং কর্মক্ষমতা, চরিত্রগত বৈশিষ্ট, এক কথায় জাতীয় আদর্শের ভিত্তি-ভূমির সঙ্গে পরিচয় ঘটে। জাতিয় ঐতিহ্য অবশ্যই অতীতের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং বর্তমানের চেষ্টায় পরিপুষ্ট হয়। তাছাড়া এর ভবিষ্যৎ স্থায়ীত্ব ও উন্নতির জন্য শিশু, কিশোর ও নওজোয়ানদের উপযুক্তভাবে প্রস্তুত করে দিতে হয়। এই শেষোক্ত কাজটি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার উপরেই সর্বাধিক নির্ভর করে। তাই শিক্ষাব্যবস্থার এত গুরুত্ব। মায়ের পেট থেকে পড়েই শিশুর শিক্ষা আরম্ভ হয়। কিন্তু এর আগে পিতামাতার মনবৃত্তি, পারস্পরিক সম্পর্ক, দৈহিক দোষগুণ প্রভৃতির প্রভাব কিছুটা উত্তরাধীকার-সূত্রে শিশুর উপর বর্তে। এই কারণে বয়ষ্কদেরও বিশেষ শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে এই ধরনের শিক্ষার অস্তিত্ত নেই বললেই চলে। ফলে, অনেক দম্পতিকেই সারা জীবন শিশুর পরিবেশ-সৃষ্টি এবং বাল্যশিক্ষার ব্যবস্থায় অসংখ্য ভূল করে শেষ জীবনে পস্তাতে দেখা যায়। উন্নত দেশে দুই থেকে পাঁচ-ছয় বছর বয়সের শিশুর শিক্ষায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়। এই বয়সে অনেক শিশু স্কুলে একত্র জড়ো হয়ে খেলাধুলা করে, নক্সা আঁকে, কাঠের বা মোটা কাগজের টুকরো জোড়া দিয়ে অনেক রকম প্যাটার্ন বা আকৃতি তৈরী করে; চিত্র-বিচিত্র বইয়ের ছবি দেখে, কাঠের অক্ষর দিয়ে খেলা করতে করতে শব্দ তৈরি করতে শেখে, বস্তু গণনা করতে করতে সংখ্যার ধারণা লাভ করে, আশে-পাশের সাধারণ জিনিষ ও পশু-পাখীর নাম শেখে, মজার মজার ছড়া আবৃত্তি করে। এই ধরণের ক্রিয়াকলাপের মধ্য দিয়ে সহজে ও স্বাধীনভাবে তাদের আপন আপন স্বাভাবিক বৃত্তিগুলোর চর্চা হতে থাকে। শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রীরা ধৈর্য্য ধরে অনেকটা অলক্ষ্যে প্রত্যকটি শিশুর বিশেষ প্রবনতা লক্ষ করে সেইসব দিকে ওদের বিকাশ লাভের সুযোগ করে দেন। এইভাবে, বেত ও ধমকের সাহায্য ছাড়াই শিশুরা আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা লাভ করে। আমাদের দেশে এর কতকটা আরন্ড হয়েছে। আমরা বিলেতি পদ্ধতির স্কুলে কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের পাঠিয়ে ইংরেজি বোল শেখাচ্ছি, আর এইসব ছেলেমেয়ে ইংরেজির মাধ্যমে শিক্ষালাভ করে নিজেদের দেশের লোকের থেকে স্বতন্ত্র বলে ভাবতে শিখছে। এতে উক্ত স্কুলসমূহের পরিচালকদের অর্থাগমের সুবিধা হচ্ছে বটে, কিন্তু ছোট ছোট ছেলেরা দেশের লোকের কাছে পর বনে যাচ্ছে। আমাদের নিজেদের বাল্যশিক্ষার কোনো প্রকার ব্যবস্থা না থাকাতেই দেশের বড় লোকেরা বহু অর্থ ব্যায় করে এই ধরনের শিক্ষার সহায়তা করবার একটা মস্ত অজুহাত পেয়েছেন। আসল কথা, যতদিন আমরা মাতৃভাষাকে সম্মান দিতে না পারব, যতদিন আমরা বিদেশী ভাষাকেই উচ্চ চাকুরির সোপান বলে জানব, যতদিন আমাদের কাজে দেশিয় ঐতিহ্যের চেয়ে বৈদেশিক চাকচিক্যই অধিক মনোহর বলে বোধ হবে, ততদিন পর্যন্ত শিক্ষা-সংস্কার নিরর্থক হয়েই থাকবে। \হপরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়