সপ্তম শ্রেণির বাংলা
প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
মোচ্ছা. রুবিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক, দখিনা রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বাগাইছড়ি, রাঙামাটি
প্রবন্ধের শ্রেণিবিভাগ
প্রবন্ধকে দুভাগে ভাগ করা হয়।
যথা্ত ক. তন্ময় বা বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধ।
খ. মন্ময় বা ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধ।
ক. তন্ময় বা বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধ : যে প্রবন্ধের মধ্যে বিষয়বস্তুর প্রাধান্য লক্ষণীয় থাকে তাকে তন্ময় বা বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধ বলে। এই বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধের নানা উপভাগ রয়েছে সেগুলো হলো-
১. বিবরণমূলক প্রবন্ধ : বিবরণমূলক প্রবন্ধে কোনো বিষয়ের বিবরণ দেওযা হয়।
২. বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ : বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধে তথ্য ও উপাত্তের বিশ্লেষণ করা হয়।
৩. তথ্যমূলক প্রবন্ধ : তথ্যমূলক প্রবন্ধে মূলত তথ্য তুলে ধরা হয়।
৪. চিন্তামূলক প্রবন্ধ : বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে পরিচিতি নির্ণয় করাই হলো এই প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য।
৫. বিতর্কমূলক প্রবন্ধ : এই প্রবন্ধের মাধ্যমে মতবাদের বিশ্লেষণ, পক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তিগুলো আলোচনা করা হয়।
৬. নীতিকথামূলক প্রবন্ধ : প্রচলিত নীতিকথা এই প্রবন্ধে স্থান লাভ করে।
খ. ব্যক্তিগত বা মন্ময় প্রবন্ধ : ডাবনিষ্ঠ বা মন্ময় প্রবন্ধকে ব্যক্তি প্রবন্ধ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। এ ধরনের প্রবন্ধে লেখক বিষয় অপেক্ষা পাঠককেই বেশি গুরুত্ব দেন। নিজের অনুভূতিকে পাঠকের অনুভূতি ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত করতে চান। বলা যায়, এ-জাতীয় প্রবন্ধে লেখকের ব্যক্তিসত্তার 'আত্মপ্রকাশ ঘটে।
প্রবন্ধ লেখার কৌশল
১. প্রবন্ধের বিষয় স্থির করার পর তার উপকরণ ও তথ্য প্রস্তুত করতে হবে।
২. প্রবন্ধের মধ্যে সাধারণত তিনটি অংশ থাকে। প্রবন্ধটি এই তিনটি অংশে সাজাতে হবে। যথা্ত
১. সূচনায় বিষয়বস্তুর আভাস,
২. মূলবক্তব্যে পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত এবং
৩. উপসংহারে সমাপ্তিসূচক মন্তব্য।
৪. প্রবন্ধ লিখতে হবে সহজ-সরল ভাষায়, সংক্ষেপে, ছোটো অনুচ্ছেদ অনুযায়ী।
৫. প্রবন্ধের শুরুতে লিখতে হবে গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদগুলো।
৬. বিষয় অনুযায়ী যুক্তি ও তথ্যের প্রতিফলন ঘটাতে হবে। পরস্পরবিরোধী যুক্তি ও ভাব রচনায় স্থান পাবে না।
৭. প্রবন্ধ রচনায় সাধু ও চলিত ভাষায় মিশ্রণ পরিহার করতে হবে।
৮. প্রবন্ধের বিষয় যেন খুব বেশি বড় বা ছোট না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
পাঠ মূল্যায়ন
প্রশ্ন: কোন ধরনের সাহিত্যের মূল উদ্দেশ্য থাকে পাঠকের জ্ঞানতৃষ্ণাকে পরিতৃপ্ত করা?
উত্তর : প্রবন্ধ।
প্রশ্ন : সাহিত্যের প্রধান লক্ষণ কী?
উত্তর : সৃজনশীলতা।
প্রশ্ন : খবরের কাগজে প্রকাশিত লেখাকে প্রবন্ধ বলা যায় না কেন?
উত্তর : সৃজনশীলতা থাকে না বলে।
প্রশ্ন : যিনি প্রবন্ধ লেখেন, তাঁকে কী বলা হয়?
উত্তর : প্রাবন্ধিক বা প্রবন্ধকার।
প্রশ্ন : প্রবন্ধের মধ্যে সাধারণত কী প্রাধান্য পায়?
উত্তর : যুক্তি।
প্রশ্ন : প্রবন্ধের মধ্যে সাধারণত কয়টি অংশ থাকে?
উত্তর : তিনটি।
প্রশ্ন : বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধের আরেক নাম কী?
উত্তর : তন্ময় প্রবন্ধ।
প্রশ্ন : ব্যক্তিগত প্রবন্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় কোন প্রবন্ধকে?
উত্তর : মন্ময় প্রবন্ধকে।
রচনামূলক প্রশ্নোত্তর
'বাংলা নববর্ষ' প্রবন্ধটি পড়ে বুঝে নিয়ে দুটি দলে ভাগ হও। এরপর প্রবন্ধটি কেমন বুঝতে পেরেছ তা যাচাই করার জন্য একদল আরেক দলকে নিচের প্রশ্নগুলো করো এবং উত্তর দাও।
ক. বাংলা নববর্ষ কোন মাসের কোন তারিখে উদযাপন করা হয়?
উত্তর : বাংলা সনের বৈশাখ মাসের পয়লা তারিখে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয়।
খ. পাকিস্তানি আমলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে দেওয়া হয়নি কেন?
উত্তর: পাকিস্তানি আদর্শের পরিপন্থী বলে পাকিস্তানি আমলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করতে দেওয়া হয়নি।
গ. বাঙালি সংস্কৃতির ইতিহাসে ১৯৫৪ সাল গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তর : ১৯৫৪ সালে পূর্ববাংলার যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক বাংলা নববর্ষের ছুটি ঘোষণা করেন এবং দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। সেটা ছিল বাঙালির এক তাৎপর্যপূর্ণ বিজয়ের দিন। তাই বাঙালি সংস্কৃতির ইতিহাসে ১৯৫৪ সাল এতটা গুরুত্বপূর্ণ।
ঘ. নববর্ষ উদযাপনে ছায়ানটের ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর : পাকিস্তানি আমলে সরকারিভাবে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়নি; কিন্তু বেসরকারিভাবে উদযাপিত হয়েছে প্রবল আগ্রহ ও গভীরতর উৎসাহ-উদ্দীপনায়। এর মধ্যে সবচেয়ে সুসংগঠিত এবং সুপরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। ১৯৬৭ সাল থেকে রমনার বটমূলে ছায়ানট নববর্ষের উৎসব শুরু করে।
ঙ. ঢাকার নববর্ষ উৎসবের দ্বিতীয় আকর্ষণ কী এবং কেন?
উত্তর : ঢাকার নববর্ষ উৎসবের দ্বিতীয় প্রধান আকর্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীদের বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রায় মুখোশ, কার্টুনসহ যেসব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীকধর্মী চিত্র বহন করা হয়, তাতে আবহমান বাঙালিত্বের এবং সমকালীন সমাজ-রাজনীতির সমালোচনাও থাকে।
চ. 'হালখাতা' কী? 'বাংলা নববর্ষ' প্রবন্ধটি পড়ে হালখাতা সম্পর্কে যা জানতে পেরেছ তা লেখো।
উত্তর: হালখাতা আবহমান বাংলার একটি সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ। বছরের শুরুতে দোকানে পুরোনো হিসাবের খাতা বন্ধ করে নতুন হিসাব খোলার যে আয়োজন করা হয়, তাকে হালখাতা বলে।
"বাংলা নববর্ষ' প্রবন্ধটি পড়ে আমি যা জানতে পেরেছি, তা হলো আগে গ্রামবাংলার কৃষকদের কাছে নগদ অর্থ তেমন বেশি থাকত না। ফলে তাদের প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস বাকিতে কিনতে হতো। বছর শেষে ফসল বিক্রি করে দোকানের পাওনা মেটাতেন তাঁরা। আগের বছরের পুরো বা আংশিক বাকি টাকা জমা দিয়ে তাঁরা নতুন হিসাব খুলতেন। দোকানিরা এই দিনকে উৎসবের মতো করে উদযাপন করতেন। বর্তমানে নগদ লেনদেন বেশি হওয়ার কারণে হালখাতার উৎসব প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়