শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

সপ্তম শ্রেণির বাংলা

মোচ্ছা. রুবিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক, দখিনা রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বাগাইছড়ি, রাঙামাটি
  ০১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
সপ্তম শ্রেণির বাংলা

পঞ্চম পরিচ্ছেদ

বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর আরো একটি ঐতিহাসিক গৌরবময় ও আনন্দঘন দিন। এই দিনে বাঙালি অর্জন করেছে তার প্রাণের সম্পদ একুশে ফেব্রম্নয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা টঘঊঝঈঙ প্যারিসে অনুষ্ঠিত ৩০তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে একুশে ফেব্রম্নয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। জাতিসংঘের ১৮৮টি দেশের এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন বাংলা ভাষার জন্য বাঙালির গৌরবময় আত্মদান বিশ্বমর্যাদা পায় তেমনি পৃথিবীর ছোট-বড় প্রত্যেকটি জাতির মাতৃভাষার প্রতিও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শিত হয়।

বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে নিজের মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের মতোই পরম সমাদরের বস্তু। মাতৃভাষাই আত্মপ্রকাশর যথার্থ মাধ্যম। ২১-এ ফেব্রম্নয়ারির মতো একটি ঐতিহাসিক দিনকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসাবে পালন করার মধ্যে প্রতিটি মানুষকে তার মাতৃভাষার প্রতি দায়িত্বশীল করে তোলার একটি শুভ প্রচেষ্টা নিহিত আছে।

'একুশ আমার চেতনা/একুশ আমার গর্ব' কেবল বাংলা ভাষাকে নয়, পৃথিবীর সকল ভাষার নিজস্ব মহিমা অক্ষুন্ন রাখার দীপ্ত শপথ নেবার দিন হচ্ছে একুশে ফেব্রম্নয়ারি- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালি হিসেবে আজ আমাদের সবার অঙ্গীকার সর্বস্তরে বাংলা-ভাষার প্রচার ও প্রসার।

প্রবন্ধ লেখা হয়ে গেলে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করো : (মূল বইয়ের ১৭০ নম্বর পৃষ্ঠা)

১. প্রবন্ধটি কোন বিষয় নিয়ে লেখা? (ইতিহাস, বিজ্ঞান, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ধর্ম খেলাধুলা ইত্যাদি)

উত্তর : প্রবন্ধটি ইতিহাস নিয়ে লেখা। এখানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

২. প্রবন্ধটির ধরন কী এবং কেন? (বিবরণমূলক, তথ্যমূলক বিশ্লেষণমূলক)

উত্তর : প্রবন্ধটি একটি তথ্যমূলক রচনা। এই প্রবন্ধে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট, ইতিহাস স্বীকৃতি সম্পর্কিত তথ্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

প্রবন্ধ কী? প্রবন্ধ কাকে বলে?

প্রবন্ধ হলো এক ধরনের সুবিন্যস্ত গদ্য রচনা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ রচিত হয়; যেমন-ইতিহাস, বিজ্ঞান, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ধর্ম, খেলাধুলা ইত্যাদি। এই বইয়ের 'পিরামিড লেখাটি ইতিহাস বিষয়ক, 'জগদীশচন্দ্র বসু' লেখাটি বিজ্ঞান বিষয়ক, 'কত কাল ধরে" লেখাটি সমাজ বিষয়ক এবং 'বাংলা নববর্ষ লেখাটি সংস্কৃতি বিষয়ক। ধরন অনুযায়ী প্রবন্ধ নানা রকম হতে পারে; যেমন : বিবরণমূলক প্রবন্ধ, তথ্যমূলক প্রবন্ধ, বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ ইত্যাদি।

বিবরণমূলক প্রবন্ধে কোনো বিষয়ের বিবরণ দেওয়া হয়, তথ্যমূলক প্রবন্ধে মূলত তথ্য তুলে ধরা হয়, আর বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধে উপাত্ত ও তথ্যের বিশ্লেষণ করা হয়। যিনি প্রবন্ধ লেখেন, তাঁকে বলা হয় প্রাবন্ধিক বা প্রবন্ধকার। প্রবন্ধের মধ্যে সাধারণত আবেগের চেয়ে যুক্তি প্রাধান্য পায়। বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদে প্রাবন্ধিক তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন। প্রবন্ধের প্রথম অংশ ভূমিকা নামে পরিচিত। ভুমিকায় মূল আলোচনার ইঙ্গিত থাকে। প্রবন্ধের শেষ অংশ উপসংহার নামে পরিচিত। উপসংহারে প্রাবন্ধিকের সমাপ্তিসূচক মন্তব্য থাকে।

মূলবক্তব্য : বাংলা নববর্ষ বাঙালির খুবই গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে নববর্ষের প্রেরণাও সক্রিয় ছিল। কারণ, পাকিস্তানিরা বাঙালির প্রাণের উৎসব নববর্ষ উদযাপনে বাধা দিয়েছিল এবং এর প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিল বাঙালি। ধরে নেওয়া হয় সম্রাট আকবরের সময় থেকে বাংলা সনের গণনা আরম্ভ হয়। পরে জমিদার ও নবাবেরা নববর্ষে পুণ্যাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন।

নববর্ষে হালখাতা, বৈশাখী মেলা, ঘোড়দৌড়, বিভিন্ন লোকমেলার আয়োজন করে সাধারণ মানুষ এ উৎসবকে প্রাণে ধারণ করেছে। পাহাড়ি অবাঙালি জনগোষ্ঠী বৈসাবি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নববর্ষ উদযাপন করে। ভাষা আন্দোলনের পর থেকে আমরাও নববর্ষ উৎসব ব্যাপকভাবে উদযাপন করি এবং বর্তমানে এই উৎসব বাঙালির জীবনে এক গৌরবময় অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে।

পাঠ বিশ্লেষণ

পাঠের উদ্দেশ্য : শিক্ষার্থীদের প্রবন্ধ পড়তে, বুঝতে ও লিখতে পারদর্শী করে তোলা।

নামকরণ : পরিচ্ছেদটি পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রবন্ধ লেখা সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে। এরই অংশ হিসেবে পরিচ্ছেদটিতে বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব বাংলা নববর্ষ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সে বিবেচনায় রচনাটির নাম 'বাংলা নববর্ষ' নামকরণ সার্থক হয়েছে।

রূপশ্রেণি : 'বাংলা নববর্ষ' একটি প্রবন্ধ।

প্রবন্ধ

প্রবন্ধ হলো গদ্যে লিখিত এমন রচনা, যার মূল উদ্দেশ্য থাকে পাঠকের জ্ঞানতৃষ্ণাকে পরিতৃপ্ত করা। তাই বলে তথ্যবহুল রচনা হলেই তাকে প্রবন্ধসাহিত্যের উদাহরণরূপে গণ্য করা চলবে না, যদি-না লেখাটি সাহিত্য পদবাচ্য হয়। সাহিত্যের প্রধান লক্ষণ সৃজনশীলতা। লেখকের সৃজনীশক্তির কোনো পরিচয় যদি পরিস্ফুটিত না হয়, তো তেমন কোনো লেখাকে প্রবন্ধসাহিত্যের লক্ষণযুক্ত বলা চলবে না।

এ কারণে খবরের কাগজে প্রকাশিত সমস্ত লেখাই গদ্যে রচিত হলেও সেগুলোকে প্রবন্ধসাহিত্যের নমুনা হিসেবে বিবেচনা করা সঙ্গত নয়। তাহলে তো জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত সকল রচনাই প্রবন্ধসাহিত্য বলে গণ্য হতে পারত। তা না হওয়ার কারণ ঐ সৃজনশীলতার অভাব। অর্থাৎ প্রবন্ধ হলো এক ধরনের সুবিন্যস্ত গদ্য রচনা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ রচিত হয়; যেমন- ইতিহাস, বিজ্ঞান, সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ধর্ম, খেলাধুলা ইত্যাদি।

পাঠ্যবইয়ের 'পিরামিড' লেখাটি ইতিহাস বিষয়ক, 'জগদীশচন্দ্র বসু' লেখাটি বিজ্ঞান বিষয়ক, 'কত কাল ধরে' লেখাটি সমাজ-বিষয়ক এবং 'বাংলা নববর্ষ' লেখাটি সংস্কৃতি-বিষয়ক। যিনি প্রবন্ধ লেখেন, তাঁকে বলা হয় প্রাবন্ধিক বা প্রবন্ধকার। প্রবন্ধের মধ্যে সাধারণত আবেগের চেয়ে যুক্তি প্রাধান্য পায়। বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদে প্রাবন্ধিক তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন। প্রবন্ধের প্রথম অংশ 'ভূমিকা' নামে পরিচিত। ভূমিকায় মূল আলোচনার ইঙ্গিত থাকে। প্রবন্ধের শেষ অংশ 'উপসংহার' নামে পরিচিত। উপসংহারে প্রাবন্ধিকের সমাপ্তিসূচক মন্তব্য থাকে।

প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রবন্ধ রচনার কতকগুলো বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়-

১. প্রবন্ধ মননশীল সাহিত্য। তাই প্রবন্ধের মধ্যে সাধারণত আবেগের চেয়ে যুক্তি প্রাধান্য পায়।

২. প্রবন্ধ সাহিত্যে মানুষের চিন্তা, মনন ও তত্ত্বই প্রাধান্য পেয়ে থাকে। প্রবন্ধ মস্তিষ্কপ্রসূত রচনা। তথ্য, তত্ত্ব, যুক্তি, তর্ক, সিদ্ধান্ত প্রবন্ধের প্রধান উপকরণ।

৩. সাধারণত প্রবন্ধ সাহিত্যে জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য, ধর্ম ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পেয়ে থাকে।

৪. কোনো বিষয় সম্পর্কে লেখকের চিন্তাগ্রাহ্য তত্ত্বকে কেন্দ্র করে প্রবন্ধ গড়ে ওঠে।

৫. বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদে প্রাবন্ধিক তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন।

৬. প্রবন্ধের প্রথম অংশ 'ভূমিকা' নামে পরিচিত। ভূমিকায় মূল আলোচনার ইঙ্গিত থাকে।

৭. প্রবন্ধের শেষ অংশ 'উপসংহার' নামে পরিচিত। উপসংহারে প্রাবন্ধিকের সমাপ্তিসূচক মন্তব্য থাকে।

পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে