১০) উয়ারী-বটেশ্বরের মাটি খনন করে কী কী নিদর্শন পাওয়া গেছে?
উত্তর : উয়ারী-বটেশ্বরের মাটি খনন করে মহামূল্যবান সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ-নগর, ইটের স্থাপত্য, বন্দর, রাস্তা, গলি, পোড়ামাটির ফলক, মূল্যবান পাথর, পাথরের বাটখারা, কাচের পুঁতি, মুদ্রাভান্ডার ইত্যাদি।
১১) প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বলতে কী বোঝ? বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সম্পর্কে যা জানো লেখো।
উত্তর :প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বলতে আমরা বুঝি এমন একটি ঐতিহাসিক স্থানকে যেখান থেকে অনেক পুরাতন জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হলো- সোনারগাঁ, পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়, ময়নামতি ইত্যাদি।
সোনারগাঁ : সোনারগাঁ অবস্থান ঢাকা থেকে সাতাশ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে নারায়ণগঞ্জ জেলায়। এটি মুঘল আমলের প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র ছিল। এখানে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলোর মধ্যে ধ্বংসপ্রাপ্ত কেলস্না, মসজিদ, পানাম নগরের ধ্বংসাবশেষ ইত্যাদি উলেস্নখযোগ্য।
পাহাড়পুর : রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলায় অবস্থিত। এখানে পালবংশের রাজাদের সময়ের প্রত্নস্থলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এখানকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তিটি সোমপুর মহাবিহার নামে পরিচিত।
মহাস্থানগড় : এটি খ্রিষ্টপূর্ব চার শতক থেকে পরবর্তী পনেরো শত বছরের বেশি সময়কালের বাংলার ইতিহাসের চিহ্ন বহন করে। এখানে প্রাচীন 'পুন্ড্রনগর'-এর ধ্বংসাবশেষ আছে। এটি বগুড়া শহর থেকে তেরো কিমি উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত। এখানকার মাটি খুঁড়ে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন উদ্ধার করা হয়েছে।
ময়নামতি : কুমিলস্না শহর থেকে আট কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এর অবস্থান। এখানে অনেকগুলো প্রত্নস্থলের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ স্থানগুলোতে মিলেছে বৌদ্ধ সভ্যতার অনেক নিদর্শন। হিন্দু ও জৈন ধর্মের অনেক দেব-দেবীর মূর্তিও পাওয়া গেছে।
১২) উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কীভাবে মানুষের নজরে এলো?
উত্তর :১৯৩৩ সালে উয়ারী গ্রামে শ্রমিকরা মাটি খনন করার সময় কিছু মুদ্রার সন্ধান পায়। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক হানিফ পাঠান সেখান থেকে ২০-৩০টি মুদ্রা সংগ্রহ করেন।
পরবর্তীতে তার ছেলে হাবিবুলস্নাহ পাঠান এখান থেকে ত্রিকোণাকার ও একমুখ চোখা দুটি লৌহপিন্ড, রৌপ্য মুদ্রা ইত্যাদি সংগ্রহ করেন। ১৯৭৪-৭৫ সালের পর থেকে উয়ারী-বটেশ্বরের প্রচুর নিদর্শন সংগ্রহ করে জাদুঘরে জমা দেন।
২০০০ সালে অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে এ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে খননকাজ শুরু হয়। এ সময় নানা রকম মূল্যবান প্রত্নসম্পদের সন্ধান পাওয়া যায় এবং স্থানটি বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করে।
১৩) উয়ারী-বটেশ্বর এলাকাটি বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে অবস্থিত? এই এলাকাটির প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলে পরিণত হওয়ার পিছনে কী কারণ তা লেখো।
উত্তর : উয়ারী-বটেশ্বর এলাকাটি নরসিংদী জেলার বেলাব ও শিবপুর উপজেলায় অবস্থিত। এ এলাকাটি মধুপুর গড় অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।
ভূমিকম্প, বন্যা-পস্নাবন, নদীভাঙন ইত্যাদি নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে একটি অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতিতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে। উয়ারী-বটেশ্বর এলাকাটিতেও একইভাবে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ফলে সুসভ্য এই নগর-জনপদটি কালের বিবর্তনে মাটিচাপা পড়ে হারিয়ে যায়। এভাবেই এটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনে পরিণত হয়েছে।
১৪) ব্রহ্মপুত্র নদ আগে কোথা দিয়ে প্রবাহিত হতো আর এখন কোথায়?
উত্তর : ব্রহ্মপুত্র নদটি ১৭৭০ সাল পর্যন্ত প্রাচীন সোনারগাঁ নগরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হতো। পরবর্তীতে এর গতিপথ পরিবর্তিত হয়। বর্তমানে এটি নরসিংদী দিয়ে বয়ে চলেছে।
১৫) কোন কোন নিদর্শন থেকে উয়ারী-বটেশ্বরের সময়কাল জানা যায়?
উত্তর : ১৯৩৩ সালে উয়ারী গ্রামে শ্রমিকরা মাটি খননের সময় কিছু মুদ্রার সন্ধান পান। এ মুদ্রাগুলো ছিল বঙ্গদেশের ও ভারতের প্রাচীনতম রৌপ্যমুদ্রা। পরবর্তী সময়ে ২০০০ সালে উয়ারী-বটেশ্বরে খননকাজ শুরু হয়। এ সময় এখান থেকে প্রাপ্ত নিদর্শনগুলোকে গবেষণা করে বিশেষজ্ঞদের ধারণা হয় যে মাটির নিচে থাকা এ স্থানটি প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনো।
১৬) উয়ারী-বটেশ্বর এলাকাটি সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা যা ধারণা করেছেন তা বর্ণনা করো।
উত্তর : ঐতিহাসিকদের ধারণা, উয়ারী-বটেশ্বরের মাটির নিচে থাকা স্থানটি প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনো। ব্রহ্মপুত্র নদ হয়ে বঙ্গোপসাগরের মধ্যদিয়ে এই জনপদের ব্যবসায় বাণিজ্য চলত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সুদূর রোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত 'উয়ারী-বটেশ্বর' রাজ্যের যোগাযোগ ছিল।
১৭) ১৯৩৩ সালে উয়ারী গ্রামে শ্রমিকরা মাটি খননকালে কী পায়?
উত্তর : ১৯৩৩ সালে উয়ারী গ্রামে শ্রমিকরা মাটি খননকালে একটি পাত্রে জমানো কিছু রৌপ্যমুদ্রা পায়।
১৮) উয়ারী-বটেশ্বরের নিদর্শন সংগ্রহে মোহাম্মদ হানিফ পাঠানের ভূমিকা সম্পর্কে দুটি বাক্য লেখো
উত্তর : ১। মোহাম্মদ হানিফ পাঠান ১৯৩৩ সালে উয়ারী-বটেশ্বর থেকে প্রাপ্ত রৌপ্যমুদ্রা সংরক্ষণ করেন।
\হ২। এখানকার নির্দশন সংগ্রহের ব্যাপারে তার ছেলে হাবিবুলস্নাহ পাঠানকে সচেতন করে তোলেন।
১৯) হাবিবুলস্নাহ পাঠান তার সংগ্রহ করা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন জাদুঘরে জমা দেন কেন?
\হউত্তর : হাবিবুলস্নাহ পাঠানের সংগ্রহ করা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো বাংলার প্রাচীন সভ্যতার পরিচয় বহন করে। জাদুঘরে সেগুলো রাখা হলে তা থেকে মানুষ অনেক কিছু জানতে পারবে। এই বিষয়টি বুঝেছিলেন হাবিবুলস্নাহ পাঠান। তাই তিনি নিদর্শনগুলো জাদুঘরে জমা দেন।
পাঠ্যবই থেকে মূলভাব লিখন
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়