সপ্তম শ্রেণির বাংলা
প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০০
মোচ্ছা. রুবিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক, দখিনা রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বাগাইছড়ি, রাঙামাটি
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
৯. 'জব্বারের বলী খেলা' কে প্রবর্তন করেন?
উত্তর : আবদুল জব্বার।
১০. 'বাংলা নববর্ষ' প্রবন্ধে বাংলাদেশের কোন দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে?
উত্তর : বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের দিক।
বলি ও লিখি
'বাংলা নববর্ষ' প্রবন্ধটি নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো। (মূল বইয়ের ১৬৭ নম্বর পৃষ্ঠা)
উত্তর : পহেলা বৈশাখ বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিন, পুরো জাতির জীবনেই আনন্দ-উৎসবের দিন, সবার জন্য কল্যাণ কামনারও দিন।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখকে ঘিরে বাঙালির আনন্দ উৎসব ও নানা আচার অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। বাংলা নববর্ষ বর্তমানে আমাদের প্রধান জাতীয় উৎসব। কিন্তু পাকিস্তানি শাসনামলে বাঙালি জাতিকে এ উৎসব উদযাপন করতে দেয়নি তৎকালীন শাসকরা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এ উৎসব উদযাপনের জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো। সুতরাং বাঙালি জাতিসত্তার গঠন-প্রক্রিয়ার সাথে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন যুক্ত হয়ে যায়।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বাংলা নববর্ষে ছুটি ঘোষণা করেন এবং দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। কিন্তু বাঙালির এই তাৎপর্যপূর্ণ দিন যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দিয়ে ও সামরিক শাসন জারি করে রুখে দেয়া হয়েছিল। তবুও বাঙালিরা পিছু হটেনি। ১৯৬৭ সাল থেকে রমনার বটমূলে ছায়ানট নববর্ষের উৎসব শুরু করে।
বর্তমানে এটি দেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। রাজধানী ঢাকার নববর্ষের দ্বিতীয় প্রধান আকর্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় আবহমান বাঙালিত্বের পরিচয়বাহী এবং সমকালীন সমাজ-রাজনীতির সমালোচনামূলক নানান ধরনের মুখোশ-কার্টুন বহন করা হয়।
বাংলা সনের ইতিহাস আলোচনায় দেখা যায়- মোগল সম্রাট আকবর চন্দ্র হিজরি সনের সাথে সৌরসনের সমন্বয় করে ১৫৫৬ সাল বা ৯৯২ হিজরিতে বাংলা সন চালু করেন। বাংলা সন চালুর পর নববর্ষ উদযাপনের নানা আনুষ্ঠানিকতা যুক্ত হয়। নবাব এবং জমিদারেরা চালু করেন 'পুণ্যাহ' অনুষ্ঠান।
এই দিনে প্রজারা নবাব বা জমিদারের বাড়িতে আমন্ত্রিত হতেন। তাদের মিষ্টি মুখ করানো হতো, পান-সুপারির আয়োজন থাকত। তবে মূল উদ্দেশ ছিল খাজনা আদায়। জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ার পরে 'পুণ্যাহ' এর প্রচলন আর নেই। পহেলা বৈশাখের দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠান ছিল হালখাতা।
হালখাতা উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা নানা রঙের কাগজ দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠান সাজাতেন, গ্রাহকদের করানো হতো মিষ্টিমুখ। হালখাতাও এখন আর সাড়ম্বরে উদযাপিত হয় না। বাংলা নববর্ষের আরেকটি প্রধান অনুষ্ঠান হলো বৈশাখী মেলা। এসব মেলা থেকেই গ্রামাঞ্চলের মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে রাখত। মেলায় থাকত কবিগান, কীর্তন, যাত্রা, পুতুল নাচসহ নানা আনন্দ আয়োজন।
প্রবন্ধ লিখি
প্রবন্ধ লেখার জন্য কোনো একটি বিষয় নির্বাচন করো। বিষয়টির কোন দিক নিয়ে আলোচনা করবে, তা প্রথমে একটি কাগজে টুকে রাখো। এবার আলোচনার দিকগুলো সাজিয়ে নিয়ে আলাদা আলাদা অনুচ্ছেদে গদ্যভাষায় বিষয়টি উপস্থাপন করো। লেখার উপরে একটি শিরোনাম দাও।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
'মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতন।' এ কেবল নোবেল বিজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দধনাথ ঠাকুরের ব্যক্তিগত অনুভূতি নয়, এ হচ্ছে সর্বকালের মানুষের চিরন্তন অনুভূতি। মাতৃদুগ্ধ যেমন শিশুর সর্বোত্তম পুষ্টি, তেমনি মাতৃভাষার মাধ্যমেই ঘটতে পারে একটি জাতির শ্রেষ্ঠ বিকাশ। মানুষের পরিচয়ের সেরা নির্ণায়ক মাতৃভাষা। মাতৃভাষা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের এক মৌলিক সম্পদ। মা ও মাটির মতোই প্রতিটি মানুষ জন্মসূত্রে এই সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রম্নয়ারিতে পূর্ব বাংলার জনগণ রক্তের বিনিময়ে অর্জন করেছিল সেই মাতৃভাষার মর্যাদা।
সাধারণ অর্থে মাতৃভাষা বলতে আক্ষরিক অর্থে মায়ের ভাষাই বোঝায়। একটি বৃহত্তর অঞ্চলে একই সাথে বিভিন্ন ভাষা প্রচলিত থাকে। এর মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ যে ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে, সেটাই হচ্ছে সে অঞ্চলের মানুষের মাতৃভাষা।
মাতৃভাষা বহতা নদীর মতো শত ধারায় প্রবহমান। বাঙালির মাতৃভাষা হচ্ছে বাংলা। বাংলা আমাদের প্রাণের স্পন্দন, বাংলা আমাদের অহঙ্কার। কবি অতুল প্রসাদ সেন এর ভাষায়- 'মোদের গরব মোদের আশা/আমরি বাংলা ভাষা।'
প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুলস্নাহ বলেছেন- 'মা, মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষা এই তিনটি জিনিস সবার কাছে পরম শ্রদ্ধার বিষয়।' মাতৃভাষার মাধ্যমেই মানুষ প্রকাশ করে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা, আবেগ-অনুভূতি। জাতীয় জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় জীবনের সার্বিক ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করতে হলে মাতৃভাষার কোনো বিকল্প হতে পারে না। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-
বিজ্ঞান চর্চা, শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের বিকাশে মাতৃভাষা হচ্ছে প্রধান মাধ্যম। কবি রামনিধিগুপ্তের ভাষায়- 'নানান দেশের নানান ভাষা/বিনা স্বদেশি ভাষা; পুরে কি আশা।'
১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরে বাংলার উপরে নেমে আসে উর্দুর অপচ্ছায়া। পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মুহম্মদ আলী জিন্নাহ যখন ঢাকার বুকে দাঁড়িয়ে দম্ভ করে ঘোষণা দেন 'টৎফঁ ধহফ ড়হষু টৎফঁ ংযধষষ নব :যব ংঃধঃব ষধহমঁধমব ড়ভ চধশরংঃধহ' তখন প্রতিবাদে, ক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলাভাষী লাখো জনতা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রম্নয়ারি স্বৈরাচারী পাকিস্তানি মিলিটারির রাইফেলের গুলিকে উপেক্ষা করে বীর বাঙালি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ঢাকার রাজপথ সেদিন লাল হয়ে যায় রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অনেক তরুণের তাজা রক্তে। ভাষার জন্য জীবন দেওয়ার এরকম নজির পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই। এজন্যই বাঙালি একুশে ফেব্রম্নয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে পালন করে।
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়