সপ্তম শ্রেণির বাংলা

প্রকাশ | ২১ জুন ২০২৪, ০০:০০

মোচ্ছা. রুবিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক, দখিনা রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বাগাইছড়ি, রাঙামাটি
২য় পরিচ্ছেদ শব্দের গঠন উপহার পেতে প্রত্যেকের ভালো লাগে। তবে প্রতিদিন তা পাওয়া যায় না। বিশেষ বিশেষ দিনে আমরা উপহার পাই। নিঃসন্দেহে এর মধ্যে নিখাদ আনন্দ আছে। অচেনা অজানা লোকের উপহার সাধারণত আমরা গ্রহণ করি না। জয়-পরাজয়কে সামনে রেখে যে উপহার দেওয়া হয়, তাকে বলে পুরস্কার। পুরস্কার পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় বিশেষ অবস্থান পেতে হয়। বিশেষ কোনো সুকীর্তি বা অবদানের জন্যও মানুষকে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার বা উপহার পাওয়ার ব্যাপারটি অবশ্যই সম্মানের এবং উপভোগ করার মতো। কোনো কোনো উপহার ও পুরস্কার মানুষ আজীবন মনে রাখে। নমুনা-২ থেকে অর্থযুক্ত শব্দগুলো নিচে লেখা হলো। (মূল বইয়ের ৩৪ নম্বর পৃষ্ঠা) নিঃসন্দেহ, নিখাদ, অচেনা, অজানা, পরাজয়, অবস্থান, সুকীর্তি, অবদান, উপভোগ, আজীবন। উপসর্গ যেসব শব্দের প্রথম অংশ সাধারণত কোনো অর্থ প্রকাশ করে না, কিন্তু দ্বিতীয় অংশের সুনির্দিষ্ট অর্থ থাকে, সেসব শব্দকে বলা হয় উপসর্গ-সাধিত শব্দ। কোনো শব্দের আগে উপসর্গ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন, বেদখল শব্দের 'বে' একটি উপসর্গ। যেমন- অ+ গভীর = অগভীর অধি + বাসী = অধিবাসী অনু + রূপ = অনুরুপ অব + রোধ = অবরোধ আ + জীবন = আজীবন উপ + গ্রহ = উপগ্রহ অতি + মারি = অতিমারি অনা + বৃষ্টি = অনাবৃষ্টি অপ + কর্ম = অপকর্ম অভি + জাত = অভিজাত উৎ + ক্ষেপণ = উৎক্ষেপণ কদ + বেল = কদবেল উপসর্গ দিয়ে শব্দ তৈরি করি বি + কাল = বিকাল কু + বৃত্তি = কুবৃত্তি সু + ফল = সুফল বে + খেয়াল = বেখেয়াল অ + শেষ = অশেষ আ + কার = আকার পরা + জয় = পরাজয় প্র + জন্ম = প্রজন্ম উপ + গ্রহ = উপযোগ অনুচ্ছেদ লিখে উপসর্গ-সাধিত শব্দ খুঁজি মীনা খুবই মেধাবী একজন ছাত্রী। সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ভালো ফলাফল লাভের জন্য সে প্রতিদিন অনেক পরিশ্রম করে। সে প্রতিদিন অন্তত পাঁচ ঘণ্টা সময় পড়ার পেছনে ব্যয় করে। তার মতে মানুষের অসাধ্য বলতে কিছুই নেই। সে জানে সুফল পেতে হলে আগ্রহ নিয়ে কাজ করতে হবে। তাই সে পরিশ্রমের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করতে চায়। তার ছোট ভাই রাজু অনেক অলস। সে মেধাবী হলেও সফল হওয়ার কোনো প্রচেষ্টা তার মধ্যে নেই। সে তার পড়াশোনার প্রতি বেখেয়াল। তাদের বাবা চান, তার অবর্তমানে রাজু-মীনা তার পরিবারকে দেখে রাখবে। তাই তিনি তার দুই সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে তুলতে চান। অ + সাধ্য = অসাধ্য সু + ফল = সুফল আ + গ্রহ = আগ্রহ প্র + চেষ্টা = প্রচেষ্টা বে + খেয়াল = বেখেয়াল অ + বর্তমানে = অবর্তমানে নমুনা-৩ খেলার মাঠে আমরা রোজ খেলতে যাই। সেখানে মাঝে মাঝে এক চানাচুরওয়ালাকে দেখা যায়। তিনি চানাচুর বিক্রি করতে আসেন। লোকটার পরনে থাকে রঙিন জামা, তাতে অনেক রঙের ছোপ। জামাটা আলখেলস্নার মতো লম্বা আর ঢোলা। তবে জামাটার হাতা খাটো, তাই তার হাত দেখা যায়। বেঢপ আকারের হলেও সেই জামাটা তার গায়ে দারুণ মানানসই লাগে। স্কুল গেটে দাঁড়ালে নিশ্চয় তার কাছ থেকে ছাত্রছাত্রীরা চানাচুর কিনত। তবে, কখনো তাকে স্কুলের গেটে আমি দাঁড়াতে দেখিনি। ওই চানাচুরওয়ালাকে নিয়ে একটা মজার ঘটনা বলি। একদিন তার সামনে ছেঁড়া জামা পরা একটি ছেলে এসে দাঁড়াল। ছেলেটির বয়স সাত-আটের বেশি হবে না। তার হাতে একটা ভাঙা খেলনা। ছেলেটি সেই খেলনাটি দেখিয়ে চানাচুরওয়ালাকে বলল, 'আমার কাছে পয়সা নেই। এই খেলনা নিয়ে আমাকে চানাচুর দেবেন?' এই বলে ছেলেটি তার হাতের খেলনাটি চানাচুরওয়ালার দিকে এগিয়ে দিল। আমি দেখলাম, খেলনাটি হয়তো একসময়ে দামি ছিল, তবে এখন আর সেটা কেউ দাম দিয়ে কিনবে না। চানাচুরওয়ালা ছেলেটির কথা শুনে মধুর হাসি হাসল। চানাচুর বানিয়ে ঠোঙায় করে ছেলেটির হাতে দিলেন। তারপর বললেন, 'তুমি তো বেশ বুদ্ধিমান!' আমার কাছে চানাচুরওয়ালাকে দয়ালু মনে হলো। লোকটির সরলতায় আমি মুগ্ধ হলাম। নমুনা-৩ থেকে অর্থযুক্ত শব্দগুলো নিচে লেখা হলো। (মূল বইয়ের ৩৭ নম্বর পৃষ্ঠা) চানাচুরওয়ালা, মধুর, বুদ্ধিমান, মজার, খেলনা, দয়ালু। প্রত্যয় কী? যেসব শব্দের প্রথম অংশ অর্থযুক্ত এবং দ্বিতীয় অংশ অর্থহীন, সেসব শব্দকে বলা হয় প্রত্যয়-সাধিত শব্দ। প্রত্যয় শব্দগঠনের একটি প্রক্রিয়া। প্রত্যয়ের নিজের কোনো অর্থ নেই। অর্থযুক্ত কোনো শব্দের পরে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন, মধু + র = মধুর। এখানে 'র' যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি হয়েছে; তাই 'র' একটি প্রত্যয়। কিন্তু বাড়ি + র- বাড়ির। এখানে 'র' যোগ হয়ে নতুন কোনো শব্দ তৈরি হয়নি; তাই এই 'র' কোনো প্রত্যয় নয়। উদাহরণ- পড় + অ = পড়ো পঠ + অক = পাঠক দাপ + অট = দাপট খেল + অনা = খেলনা মান + অনীয় = মাননীয় উড় + অন্ত = উড়ন্ত সিল্‌ + আই= সেলাই বাঘ + আ = বাঘা ঢাকা + আই = ঢাকাই প্রত্যয় দিয়ে শব্দ তৈরি করি ঢাকা + আই = ঢাকাই ফুল + ওয়ালা = ফুলওয়ালা র্ক + অনীয় = করণীয় দয়া + বান = দয়াবান কলম + দানি = কলমদানি দরিদ্র + তা = দরিদ্রতা গুরু + ত্ব = গুরুত্ব বুদ্ধি + মান = বুদ্ধিমান চল্‌ + আ = চলা পাহারা + দার = পাহারাদার হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়