শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র

আতাউর রহমান সায়েম সহকারী শিক্ষক মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
  ১৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র

'প্রতিবেদন' শব্দটি ইংরেজি ্তুজবঢ়ড়ৎঃ্থ-এর পারিভাষিক রূপ। ্তুজবঢ়ড়ৎঃ্থ শব্দের আভিধানিক অর্থ সমাচার, বার্তা, বিবৃতি, বিবরণী ইত্যাদি। কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় অবলম্বন করে সেই বিষয়ের সব দিক তথ্যানুসন্ধানের পর যথাযথ গঠন কাঠামো অনুসরণ করে ধারাবাহিক বিবরণী উপস্থাপন করাকে প্রতিবেদন বলে। অর্থাৎ আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা, বিষয় বা প্রসঙ্গ সম্পর্কে নির্মোহ, নিরপেক্ষভাবে তথ্যমূলক বিবৃতি উপস্থাপনই হলো প্রতিবেদন

লিখন। তাই প্রতিবেদন হচ্ছে প্রত্যক্ষদর্শীর শিল্পশোভন বিশ্বস্ত বিবরণ। প্রতিবেদন রচয়িতাকে 'প্রতিবেদক' বলে। প্রতিবেদন লিখতে হয় গদ্যরীতিতে।

প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি

ক. প্রতিবেদন লেখার মূল কথাই হলো সঠিক তথ্যের ধারাবাহিক বিবরণী। তাই যে ঘটনা, বিষয় বা প্রসঙ্গ সম্পর্কে প্রতিবেদন লিখতে বলা হয় সর্বপ্রথম সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এরপর সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি আগে এবং কম গুরুত্বপূর্ণগুলো পরে সাজাতে হবে।

খ. প্রতিবেদনের জন্য বিষয়ভিত্তিক সুন্দর শিরোনাম নির্ধারণ একান্তভাবে কাম্য। শিরোনামটি এমন হবে যেটি পড়েই উক্ত প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে মোটামুটি স্পষ্ট একটি ধারণা পাওয়া যায়।

গ. প্রতিবেদন লিখনে কোনোভাবেই আবেগের প্রাধান্য দেওয়া যাবে না এবং কোনো পক্ষপাতিত্বও করা যাবে না।

ঘ. প্রতিবেদনের ভাষা হবে সহজ-সরল-প্রাঞ্জল। কারণ, সমাজের সর্বস্তরের মানুষই প্রতিবেদনের পাঠক হয়ে থাকে। আকর্ষণীয় উপস্থাপনা ও রসাত্মক বর্ণনা কৌশল প্রতিবেদনের উলেস্নখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।

ঙ. বিষয়বৈচিত্র্য অনুসারে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবেদনের গঠনকৌশল আবার ভিন্ন ভিন্ন। যে ধরনের প্রতিবেদনের গঠনশৈলী যেরকম, সেরকম গঠনকাঠামো দিয়ে সেই প্রতিবেদন লিখতে হবে।

প্রতিবেদনের প্রকারভেদ

বিষয়বৈচিত্র্য অনুসারে প্রতিবেদন বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন-

১. সাধারণ প্রতিবেদন/প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন/দাপ্তরিক প্রতিবেদন

২. সংবাদ প্রতিবেদন

৩. তদন্ত প্রতিবেদন

৪. কারিগরি প্রতিবেদন

\হ৫. গোয়েন্দা প্রতিবেদন

৬. বার্ষিক গোপন প্রতিবেদন

৭. অর্থনৈতিক প্রতিবেদন

৮. উন্নয়ন প্রতিবেদন

৯. সমীক্ষা প্রতিবেদন

১০. বিশেষ প্রতিবেদন ইত্যাদি।

তবে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বয়স ও সক্ষমতা বিবেচনায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন ও সংবাদ প্রতিবেদন লিখনে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

১. সাধারণ প্রতিবেদন/ প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন :

সাধারণত আমরা যে প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকি সেই প্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা, বিষয় বা প্রসঙ্গ সম্পর্কে যে প্রতিবেদন লিখতে হয় সেটিই প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন বা সাধারণ প্রতিবেদন। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেসব অনুষ্ঠান হয়ে থাকে যেমন- বার্ষিক বিজ্ঞানমেলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বিতর্ক উৎসব, নবীনবরণ, বর্ষবরণ, বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বিদায় অনুষ্ঠান, বইমেলা, গ্রন্থাগার, শিক্ষাসফর, বার্ষিক পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান ইত্যাদি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন লিখতে বলা হয়।

সাধারণ প্রতিবেদন/ প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখায় বিবেচ্য বিষয়সমূহ

ক. সাধারণ প্রতিবেদন লেখার জন্য সর্বপ্রথম কর্তৃপক্ষের কাছে একটি সাধারণ আবেদনপত্র লিখতে হয়।

যেমন- তুমি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হলে সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষের কাছে একটি সাধারণ আবেদনপত্র লিখবে।

খ. আবেদনপত্রের উপরে বামদিকে তারিখ, কর্তৃপক্ষের পদবি-ঠিকানা, বিষয় ও সূত্র/স্মারক নম্বর (কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত চিঠির নম্বরই সূত্র/স্মারক নম্বর) লিখতে হয়।

গ. আবেদনপত্রের শেষে নিচে বামদিকে শিক্ষার্থী তার নাম ঠিকানা (প্রশ্নপত্রে উলিস্নখিত নাম-ঠিকানা) লিখবে। এরপর শিরোনামসহ মূল প্রতিবেদন লিখতে হয়।

ঘ. মূল প্রতিবেদনের প্রথম অনুচ্ছেদটি ৫ড+১ঐ ঋড়ৎসঁষধ ব্যবহার করে লিখতে হয়। অর্থাৎ ড= ডযধঃ, ড= ডযবৎব, ড= ডযবহ, ড= ডযড়, ড= ডযু ও ঐ= ঐড়ি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর একত্রিত করে শিক্ষার্থী প্রথম অনুচ্ছেদটি লিখবে।

ঙ. প্রথম অনুচ্ছেদের পর একাধিক অনুচ্ছেদে ধারাবাহিকভাবে পুরো বিষয়টি বর্ণনা করতে হবে।

চ. মূল প্রতিবেদন লেখা শেষে 'বিনীত নিবেদক', 'প্রতিবেদক', 'ইতি'- এ ধরনের কথাগুলো লেখা যাবে না।

ছ. প্রতিবেদন লেখায় কোনো খাম দিতে হয় না। তবে প্রতিবেদন লেখা শেষে প্রতিবেদক ও প্রতিবেদন সম্পর্কিত একটি তথ্য-ছক দিতে হবে।

২. সংবাদ প্রতিবেদন

সাধারণত নাগরিক জীবনের বিভিন্ন সমস্যা, কোথাও ঘটে যাওয়া জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনা, দুর্ঘটনা, বিষয় বা প্রসঙ্গ সম্পর্কে তথ্যমূলক বিবৃতি লিখনই সংবাদ প্রতিবেদন। উক্ত বিষয় সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই সংবাদ প্রতিবেদনের লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে আমরা হয়ে যাই কোনো পত্রিকার সাংবাদিক অর্থাৎ নিজস্ব সংবাদদাতা/স্টাফ রিপোর্টার/নিজস্ব প্রতিবেদক বা কোনো জেলা/থানা প্রতিনিধি। একজন রিপোর্টার হিসেবে সংবাদপত্রে প্রকাশ উপযোগী করে আমাদের এ ধরনের প্রতিবেদন লিখতে হয়।

সংবাদ প্রতিবেদন লেখায় বিবেচ্য বিষয়সমূহ :

ক. সংবাদ প্রতিবেদন লিখতে সম্পাদক/কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো আবেদনপত্র লিখতে হয় না।

খ. হেডলাইন (শিরোনাম) দিয়ে প্রতিবেদন লেখা শুরু করতে হয়।

গ. এরপর ডেটলাইন (প্রতিবেদকের নাম/পদবি, স্থান ও তারিখ) লিখে প্রথম অনুচ্ছেদ (ওহঃৎড়) লিখতে হয়।

ঘ. প্রথম অনুচ্ছেদের পর একাধিক অনুচ্ছেদে ধারাবাহিকভাবে পুরো বিষয়টি বর্ণনা করতে হয়।

ঙ. মূল প্রতিবেদন লেখা শেষে 'বিনীত নিবেদক', 'প্রতিবেদক', 'ইতি'- এ ধরনের কথাগুলো লেখা যাবে না।

চ. প্রতিবেদন লেখায় কোনো খাম দিতে হয় না। তবে প্রতিবেদন লেখা শেষে প্রতিবেদক ও প্রতিবেদন সম্পর্কিত একটি তথ্য-ছক দিতে হবে।

ছ. সংবাদ প্রতিবেদন লিখনে প্রতিবেদককে অবশ্যই নির্মোহ ও নৈর্ব্যক্তিক হতে হবে।

জ. সংবাদ প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে উত্তম পুরুষে লেখার (যেমন- গিয়ে দেখলাম) দরকার নেই। ভাববাচ্যে (যেমন- গিয়ে দেখা গেল) লেখা বাঞ্ছনীয়।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে