সপ্তম শ্রেণির বাংলা
প্রকাশ | ১৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
মোচ্ছা. রুবিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক, দখিনা রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বাগাইছড়ি, রাঙামাটি
৪র্থ অধ্যায়
১০. আমন্ত্রণপত্র
কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষে আত্মীয়স্বজন বা পরিচিতজনদের আগমন প্রত্যাশা করে যে পত্র লেখা হয়, তাকে আমন্ত্রণপত্র বলা হয়। বিভিন্ন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান উপলক্ষে আমন্ত্রণপত্র তৈরি করা হয়। জন্মদিন, বিয়ে, ভোজসভা ইত্যাদি উপলক্ষে এ ধরনের আনুষ্ঠানিকপত্র ব্যবহৃত হয়। এছাড়া দিবস পালন, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, জন্মজয়ন্তী, মৃতু্যবার্ষিকী, পুনর্মিলন, সংবর্ধনা শোকসভা ইত্যাদি উপলক্ষেও আমন্ত্রণপত্রের প্রয়োজন হয়।
আমন্ত্রণপত্রের বিভিন্ন অংশ
আমন্ত্রণপত্র অন্যান্য পত্র থেকে একটু আলাদা ধরনের। এ ধরনের পত্রে নিচের অংশগুলো থাকে।
১. পত্রশীর্ষ : জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্য আমন্ত্রণ প্রযোজ্য বলে সাধারণত এ ধরনের পত্রের শীর্ষে ধর্মীয় মঙ্গলসূচক কথা ব্যবহৃত হয় না। তবে বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রের পত্রশীর্ষে কেউ কেউ মুসলমান রীতিতে 'পরম করুণাময়ের নামে এবং হিন্দু রীতিতে 'শ্রী শ্রী প্রজাপতয়ে নমঃ' লিখে থাকেন। পত্রশীর্ষে অনুষ্ঠানের শিরোনামও থাকতে পারে। যেমন : স্বাধীনতা উৎসব ও লোকমেলা ২০২৩।
২. সম্ভাষণ : আমন্ত্রণপত্রের প্রাপককে সম্বোধন করার জন্য বিশেষ কিছু শব্দ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এদের মধ্যে 'সুধী' শব্দটি অধুনা বহুল প্রচলিত। এছাড়া সৌম্য, সবিনয় নিবেদন, জনাব, মহাশয়, মহোদয়, মহাত্মন, মান্যবর, সুহৃদ, সুজন ইত্যাদি সম্ভাষণও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৩. মূল অংশ : আমন্ত্রণের উপলক্ষ্য জানিয়ে তাতে যোগ দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। অনুষ্ঠানের উপলক্ষ্য, তারিখ, সময় ও স্থানের উলেস্নখ থাকতে হয়। এ ধরনের পত্রের ভাষা সহজ, সরল, সাবলীল ও স্পষ্ট হওয়া উচিত। বক্তব্যের মধ্যে বিনম্র ভাবও থাকা চাই।
৪. ইতি বা সমাপ্তি : এ ধরনের পত্রে একসময় 'পত্র দ্বারা নিমন্ত্রণের ত্রম্নটি মার্জনীয়', 'নিবেদন ইতি' ইত্যাদি লেখার চল ছিল। আধুনিক রীতিতে এগুলো লেখা হয় না।
৫. নাম-স্বাক্ষরে সৌজন্য : চিঠির বিষয় অনুসারে এ ধরনের পত্রে 'বিনীত', 'বিনয়াবনত', 'শ্রদ্ধাবনত', 'ভবদীয়' ইত্যাদি বাম দিকে লিখে তার নিচে আমন্ত্রণকারীর নাম লিখতে হয়।
৬. ঠিকানা ও তারিখ : আমন্ত্রণপত্রের বাম দিকে তারিখ এবং ডান দিকে আমন্ত্রণকারীর নামের নিচে ঠিকানা লেখাই প্রচলিত নিয়ম।
৭. অনুষ্ঠানসূচি : কোনো কোনো অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে আলাদাভাবে তারিখ ও স্থানসহ অনুষ্ঠানসূচি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এর ফলে আমন্ত্রিত ব্যক্তি অনুষ্ঠানের প্রকৃতি, ব্যাপ্তিকাল ইত্যাদি সম্পর্কে আগেভাগেই ধারণা করে নিতে পারেন।
পাঠ মূল্যায়ন
প্রশ্ন : কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষে আত্মীয়স্বজন বা পরিচিতজনদের শুভাগমন প্রত্যাশা করে যে পত্র লেখা হয় তাকে কী বলা হয়?
উত্তর : আমন্ত্রণপত্র।
প্রশ্ন : অনুষ্ঠানের শিরোনাম আমন্ত্রণপত্রের কোথায় থাকতে পারে?
উত্তর : পত্রশীর্ষে।
প্রশ্ন : সৌম্য, সবিনয় নিবেদন, জনাব, মহাশয়, মহোদয়, মহাখন, মান্যবর, সুহৃদ, সুজন ইত্যাদি সম্ভাষণ কোথায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে?
উত্তর : আমন্ত্রণপত্রে।
প্রশ্ন : আমন্ত্রণপত্রের ভাষা কেমন হবে?
উত্তর : সহজ, সরল, সাবলীল ও স্পষ্ট।
ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণমূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন : পাঠ্যবই বা গল্পের বইয়ের লেখা বাদে তোমরা দৈনন্দিন জীবনে আর কত রকমের লেখা দেখতে পাও বলতে পারো?
উত্তর : পাঠ্যবই বা গল্পের বইয়ের লেখা বাদে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ লেখা দেখতে পাই। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে- টু-লেট, দেয়ালিকা, যানবাহনের পিছনের লেখা যেমন : রিকশা, ট্রাক ও বাসের পিছনে, ইলেকট্রনিক ব্যানার, শুভেচ্ছা কার্ড প্রভৃতি। টু-লেট মূলত ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে একপ্রকার বিজ্ঞাপন বার্তা। অফিস, বাড়ি, ছাত্রাবাস, অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় এর মাধ্যমে।
দেয়ালিকা হচ্ছে দেয়াল লিখন। বিভিন্ন মনীষীর বাণী, অসংগতি বা দিবসভিত্তিক দেয়ালিকা করা হয়। যানবাহনের পিছনেও অনেক ধরনের লেখা থাকে। যেমন : একটি দুর্ঘটনা, সারা জীবনের কান্না; নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখুন; সাবধান প্রভৃতি। এছাড়া আমাদের আশপাশে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ব্যানার দেখতে পাওয়া যায়। যেখানে নানা রকম জনকল্যাণমূলক তথ্য প্রচার করা হয়। শুভেচ্ছা কার্ডও অনেক বেশি প্রচলিত। সাধারণত শুভেচ্ছা কার্ডে কোনো দিবসভিত্তিক উদযাপন বা শুভকামনা জানিয়ে শুভবার্তা প্রেরণ করা হয়।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়