তৃতীয় অধ্যায়
প্রশ্ন : নন-পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি কাকে বলে?
উত্তর : যে সংখ্যা পদ্ধতিতে সংখ্যার মান সংখ্যায় ব্যবহৃত অঙ্কসমূহের অবস্থানের উপর নির্ভর করে না তাকে নন-পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে। এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন চিহ্ন বা প্রতীকের মাধ্যমে হিসাব-নিকাশের কাজ করা হতো। এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত প্রতীক বা অঙ্কগুলোর পজিশন বা অবস্থান গুরুত্ব পায় না। ফলে অঙ্কগুলোর কোনো স্থানীয় মান থাকে না। শুধু অঙ্কটির নিজস্ব মানের উপর ভিত্তি করে হিসাব-নিকাশ কার হয়। প্রাচীন কালে ব্যবহৃত হায়ারোগিস্নফিক্স (ঐরবৎড়মষুঢ়যরপং), মেয়ান ও রোমান, ট্যালি সংখ্যা পদ্ধতি নন-পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতির উদাহরণ।
প্রশ্ন : বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি কাকে বলে?
উত্তর : যে সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি দুই (২) তাকে দুইভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি বলে। একে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি বা বুলিয়ান সংখ্যা পদ্ধতিও বলা হয়। বুলিয়ান সংখ্যা পদ্ধতিতে অঙ্ক দুটি ০ ও ১। বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য সহজ নয়। সপ্তদশ শতকে বাইনারি সম্পর্কে প্রথম ধারণা দেন গটফ্রিড লিবনিজ। ১৮৫৪ সালে ব্রিটিশ গণিতবিদ জর্জ বুল বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি এবং এতদ্বসংক্রান্ত অ্যালজেবরার ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। তার নাম অনুসারে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতির আরেক নাম বুলিয়ান অ্যালজেবরা।
প্রশ্ন : অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি কাকে বলে?
উত্তর : যে সংখ্যা পদ্ধতিতে ৮টি (০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭) প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে অকটাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে। যেমন- (১২০)৮। অকটাল সংখ্যা পদ্ধতিতে ০ থেকে ৭ পর্যন্ত মোট ৮টি প্রতীক বা চিহ্ন নিয়ে যাবতীয় গাণিতিক কর্মকান্ড সম্পাদন করা হয় বলে এর বেজ বা ভিত্তি হলো ৮। অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতিকে তিন বিট সংখ্যা পদ্ধতিও বলা হয়। কারণ অকটাল সংখ্যা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ০ থেকে ৭ পর্যন্ত মোট ৮টি প্রতীক বা চিহ্নকে তিন বিটের মাধ্যমেই প্রকাশ করা যায়। ডিজিটাল সিস্টেমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাইনারি সংখ্যাকে নির্ভুল ও সহজে উপস্থাপন করার জন্য অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন : ডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি কাকে বলে?
উত্তর : যে সংখ্যা পদ্ধতিতে ১০টি (০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬,৭, ৮, ৯) প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে ডেসিমেল বা দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি বলে। যেমন- (১২০) ১০। দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে ০ থেকে ৯ পর্যন্ত মোট ১০টি প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় বলে এর বেজ বা ভিত্তি হচ্ছে ১০। ইউরোপে আরবরা এই সংখ্যা পদ্ধতির প্রচলন করায় অনেকে এটিকে আরবি সংখ্যা পদ্ধতি নামেও অভিহিত করেন। মানুষ সাধারণত গণনার কাজে ডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করে।
প্রশ্ন : হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি কাকে বলে?
উত্তর : যে সংখ্যা পদ্ধতিতে ১৬টি (০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, অ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ) প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি বলে। যেমন- (১২০৯অ)১৬। হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতিতে মোট ১৬টি প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় বলে এর বেজ বা ভিত্তি হচ্ছে ১৬। হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতিকে চার বিট সংখ্যা পদ্ধতিও বলা হয়।
কারণ হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ১৬টি (০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, অ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ) প্রতীক বা চিহ্নকে চার বিটের মাধ্যমেই প্রকাশ করা যায়। ডিজিটাল সিস্টেমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাইনারি সংখ্যাকে নির্ভুল ও সহজে উপস্থাপন করার জন্য হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন মেমোরি অ্যাড্রেস ও রং-এর কোড হিসেবে হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
প্রশ্ন : চিহ্নযুক্ত সংখ্যা (ঝরমহবফ ঘঁসনবৎ) বলতে কি বুঝ? ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর : দৈনন্দিন গাণিতিক কাজে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। ধনাত্মক ও ঋণাত্মক সংখ্যা বোঝানোর জন্য সংখ্যার আগে +/- চিহ্ন দিতে হয়। চিহ্ন বা সাইনযুক্ত সংখ্যাকে চিহ্নযুক্ত সংখ্যা বা সাইন্ড নাম্বার বলে।
প্রশ্ন : কাউন্টার কি?
উত্তর :কাউন্টার এক ধরনের সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সফার রেজিস্টার।
প্রশ্ন : বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ কাকে বলে?
উত্তর : বুলিয়ান অ্যালজেবরায় সমস্ত গাণিতিক কাজ করা হয় যৌক্তিক যোগ ও যৌক্তিক গুণের সাহায্যে। বুলিয়ান অ্যালজেবরায় শুধু যৌক্তিক যোগ ও যৌক্তিক গুণের নিয়মগুলোকে বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ বলে।
প্রশ্ন : অ্যাসকি (অঝঈওও) কি?
উত্তর : অঝঈওও-এর পূর্ণ নাম অসবৎরপধহ ঝঃধহফধৎফ ঈড়ফব ঋড়ৎ ওহভড়ৎসধঃরড়হ ওহঃবৎপযধহমব। অঝঈওও আধুনিক কম্পিউটারে বহুল ব্যবহৃত কোড। কম্পিউটার এবং ইনপুট বা আউটপুট ডিভাইসের মধ্যে তথ্য স্থানান্তরের জন্য এ কোড ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন : ইঈউ কী?
উত্তর : ইঈউ-এর পূর্ণরূপ হলো ইরহধৎু ঈড়ফবফ উবপরসধষ. দশমিক সংখ্যার প্রতিটি অঙ্ককে অর্থাৎ ০ থেকে ৯ পর্যন্ত দশটি অঙ্কের প্রতিটিকে উহার সমতুল্য ৪ (চার) বিট বাইনারি ডিজিট দ্বারা প্রতিস্থাপন করাকে ইঈউ কোড বলে।
প্রশ্ন : হেক্সাডেসিমেল ৪ বিটের কোড ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : হেক্সাডেসিমাল সংখ্যা পদ্ধতিতে ০ - ঋ পর্যন্ত মোট ১৬টি সংখ্যা ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ এই সংখ্যা পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সংখ্যাটি ঋ, এর বাইনারি (ঋ)২ = (১১১১)২। যেহেতু হেক্সাডেসিমালের সর্বোচ্চ সংখ্যাটি প্রকাশ করতে ৪টি বিটের প্রয়োজন পড়েছে। সেহেতু বলা যায় যে, হেক্সাডেসিমাল ৪ বিটের কোড।
প্রশ্ন : বুলিয়ান অ্যালজেবরা কি?
উত্তর : ১৮৪৭ সালে ইংরেজ গণিতজ্ঞ জর্জ বুলি (এবড়ৎমব ইড়ড়ষব) সর্বপ্রথম যে অ্যালজেবরা নিয়ে আলোচনা করেন তাই বুলিয়ান অ্যালজেবরা। বুলিয়ান অ্যালজেবরায় শুধুমাত্র বুলিয়ান যোগ ও গুণ-এর সাহায্যে সমস্ত কাজ করা হয়। যোগ ও গুণের ক্ষেত্রে বুলিয়ান অ্যালজেবরা কতকগুলো নিয়ম মেনে চলে। এ নিয়মগুলোকে বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ বলে।
প্রশ্ন : দশমিক ও বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতির পার্থক্য লিখ।
উত্তর : যে সংখ্যা পদ্ধতিতে সংখ্যা গণনা করার জন্য ১০টি অঙ্ক বা প্রতীক ব্যবহৃত হয় তাকে ডেসিম্যাল বা দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি বলে। অপরদিকে, যে সংখ্যা পদ্ধতিতে সংখ্যা গণনা করার জন্য ২টি অঙ্ক বা প্রতীক ব্যবহৃত হয় তাকে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি বলে।
দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির বেজ ১০। অপরদিকে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতির বেজ ২।
প্রশ্ন : ২-এর পরিপূরক কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর : সাধারণত যোগ এবং বিয়োগ দুটি ভিন্ন অপারেশন। কম্পিউটারে সব ডেটা এবং তথ্য শুধুমাত্র ০ এবং ১ দিয়ে গঠিত হওয়ায় এবং কম্পিউটারের শুধু যোগ করার ক্ষমতা থাকায় এতে ২-এর পরিপূরক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। এতে যে সংখ্যাটিকে বিয়োগ করতে হবে তাকে ২ এর পরিপূরক করে অন্যটির সাথে যোগ করলেই হয়। তাই যোগ ও বিয়োগের জন্য আলাদা অপারেশন করার দরকার পড়ে না। তাই ২-এর পরিপূরক গুরুত্বপূর্ণ।
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়