রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

সপ্তম শ্রেণির বাংলা

মোচ্ছা. রুবিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক, দখিনা রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বাগাইছড়ি, রাঙামাটি
  ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
সপ্তম শ্রেণির বাংলা

৪র্থ অধ্যায়

চারপাশের লেখার সাথে পরিচিত হই

সাহিত্য বা পাঠ্যবইয়ের লেখার বাইরেও প্রাত্যহিক জীবনে আমরা বিভিন্ন ধরনের লেখা দেখি। দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এগুলোর আকার, রং ও উপাদান নানা রকম হতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবসায়িক প্রচারণা, জনসংযোগ, সর্বসাধারণের জন্য নির্দেশনা বা কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর মতো নানামুখী কাজে এসব লেখা ব্যবহার করা হয়।

উদাহরণ হিসেবে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, পস্ন্যাকার্ড প্রভৃতির কথা উলেস্নখ করা যায়। প্রচলিত লেখার বাইরে ব্যতিক্রম এসব লেখাও ভাষিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। এ ধরনের প্রায়োগিক লেখার মাধ্যমে অল্পকথায় সুনির্দিষ্ট বার্তা সহজেই বহুসংখ্যক মানুষকে জানানো যায়। এ কারণে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, প্রচারণা বা জনসংযোগের ক্ষেত্রে এ ধরনের লেখার জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে।

প্রায়োগিক লেখা

যে লেখার মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনের বা বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে সবার কাছে তথ্য বা বার্তা স্পষ্ট করা যায় তা-ই প্রায়োগিক লেখা। সৃজনশীল ও পেশাগত ক্ষেত্রে নির্দিষ্টভাবে মনের ভাব প্রকাশে প্রায়োগিক লেখা ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে লেখার অর্থ সরাসরি সাধারণ মানুষের কাছে সহজবোধ্য হয়ে ওঠে। ভাষা-নির্মিতির প্রয়োগ কৌশল সঠিকভাবে অনুসরণ করে প্রায়োগিক লেখা চর্চা করা হয়। এতে ভাষা ও শৈলী নির্ধারিত হয় ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুসারে।

প্রায়োগিক লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ

প্রায়োগিক লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে উলেস্নখ করা হলো :

ক. প্রায়োগিক লেখার প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তা সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনে লেখা হয়।

খ. এ লেখা তথ্য বা বার্তাভিত্তিক; কখনওই বিবৃতিভিত্তিক নয়।

গ. বিষয়ভিত্তিক ও সাধারণ মানুষের পরিচিত শব্দে প্রায়োগিক লেখা চর্চা করা হয়।

ঘ. সহজে যোগাযোগ করার জন্য সরল বাক্যই এ লেখায় প্রযোজ্য।

ঙ. জনসংযোগ গুণ থাকার ফলে প্রায়োগিক লেখার মাধ্যমে ভাষার প্রসার বিস্তৃত হয়।

চ. ভাষার আবেদন ক্ষমতা এ লেখার মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়।

ছ. সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রায়োগিক লেখার প্রভাব লক্ষণীয়।

জ. প্রায়োগিক লেখা যেকোনো আকস্মিক ঘটনা বা আন্দোলনের বিষয়বস্তুকে জনসমাজে সুপরিচিত করে তোলার মোক্ষম মাধ্যম।

প্রায়োগিক লেখা প্রস্তুতের কৌশল

ভাষা প্রয়োগ করে বিশেষ প্রয়োজনে যোগাযোগ স্থাপন করা প্রায়োগিক লেখার মূল উদ্দেশ্য। যে বিষয়ে লেখা হবে তা যেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্যে সে বিষয়ে সব তথ্য জেনে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রায়োগিক লেখা সাধারণ মানুষের কাছে নিয়মিত পাঠ্য কিছু নয়।

নৈমিত্তিক জীবন থেকে মনোযোগ সরিয়ে মানুষকে এ লেখার প্রতি আকৃষ্ট করে তোলা আবশ্যক। তার জন্য প্রয়োজন চুম্বক তথ্যভিত্তিক সংক্ষিপ্ত লেখা। সুপরিচিত শব্দে, সহজ বাক্যে লেখা হলেই কেবল তা লক্ষ্য অর্জনে সফল হবে। তার পাশাপাশি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে বাক্যের সাজসজ্জা। পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড, ফেস্টুন, পস্ন্যাকার্ডে ডিজাইন করে লিখলে তা আকর্ষণীয় হয়। কোনো কোনো চুম্বক শব্দ বড় অক্ষরে লেখা যায়।

বিশেষ কার্যক্রম বা অফার বড় অক্ষরে লিখলে প্রস্তুতকারীর উদ্দেশ্য সহজে বাস্তবায়িত হয়। আমন্ত্রণপত্রে অনুষ্ঠানের উপলক্ষ্য ও বিশেষ ব্যক্তির নাম রঙিন করে মানুষের আগ্রহ বাড়ানো সম্ভব। ব্যক্তিগত, বাণিজ্যিক বা প্রাতিষ্ঠানিক সব প্রায়োগিক লেখাতেই সময়সূচি, স্থান ও লেখার উদ্দেশ্য সংক্ষিপ্ত কিন্তু মনোযোগ তৈরিতে সক্ষম হতে হবে।

১. ব্যানার

ব্যানার হলো প্রতীক, লোগো, সেস্নাগান কিংবা কোনো বার্তা সংবলিত এক টুকরা কাপড়। সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, জাতীয় চেতনা, পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা প্রভৃতি প্রকাশে সংক্ষিপ্তভাবে ব্যানার লেখা হয়। ব্যানার মূলত মিছিল, জনসমাবেশ বা জনাকীর্ণ স্থানে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পোস্টারের তুলনায় ব্যানার আকারে অনেক বড় হয়। ব্যানার সাধারণত এমনভাবে বানানো হয়, যেন অনেক দূর থেকেও পড়া যায়। ব্যানার তৈরির উপকরণ হিসেবে কাপড়, রং, চক, পেনসিল, হাতুড়ি, স্কেল, তুলি, রং মেশানোর পাত্র ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। সাধারণত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নির্দেশনার ভিত্তিতে ব্যানার তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে ব্যানারের কাপড়, রং, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের মাপ নির্দেশনাকারীর নির্দেশ অনুসারে নির্বাচন করা হয়।

ব্যানার তৈরির কৌশল

ঙ্ ব্যানার লেখার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করতে হবে।

ঙ্ বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে মাপ, রং ও ধরন অনুযায়ী কাপড় নিতে হবে।

ঙ্ ব্যানারে যে বিষয়টি লেখা হবে, সেটা লেখার জন্য কাপড়ের ওপর চক ও স্কেলের সাহায্যে দাগ টানতে হবে যেন প্রতিটি লেখা একই মাপের হয়।

ঙ্ এরপর দাগের ভেতরে যে তথ্য দেওয়া হবে, সেটা লিখতে হবে। লেখাটা প্রথমে চক দিয়ে লিখে নিতে হবে যেন কোনো ভুল হলে তা সংশোধন করার উপায় থাকে।

ঙ্ লেখা শেষ হলে ব্যানার যে রং দিয়ে লেখা হবে তা ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।

ঙ্ ব্যানারটা সমান মেঝে বা দেয়ালে টাঙিয়ে চকের লেখার ওপর রং ও তুলির সাহায্যে লিখতে হবে।

ঙ্ লেখা শেষ হলে রং শুকানোর জন্য ব্যানারটা কিছুক্ষণ বাতাসে রাখতে হবে।

ঙ্ ব্যানারটিকে চাইলে হাতুড়ি ও পেরেকের সাহায্যে কাঠের ফ্রেমে আটকেও ব্যবহার করা যায়।

ঙ্ সম্প্রতি কম্পিউটারে ব্যানার ডিজাইন করে পিডিসিতে মুদ্রণ করে ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করা হয়।

পাঠ মূল্যায়ন

প্রশ্ন :প্রতীক, লোগো, সেস্নাগান কিংবা কোনো বার্তা সংবলিত এক টুকরা কাপড়কে কী বলে?

উত্তর : ব্যানার।

প্রশ্ন : কীসের ওপর ব্যানার দেখা হয়?

উত্তর : কাপড়ের।

প্রশ্ন : সম্প্রতি ডিজিটাল ব্যানার কীসে ডিজাইন করা হয়?

উত্তর : কম্পিউটারে।

প্রশ্ন : সম্প্রতি ডিজিটাল ব্যানার কীসে মুদ্রণ করা হয়?

উত্তর : পিভিসিতে।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে