শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র

আতাউর রহমান সায়েম সহকারী শিক্ষক মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
  ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র

৯. আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে। ভাবসম্প্রসারণ : কাজই মানুষের পরিচয়কে ধারণ করে। তাই মুখে বড় বড় কথা বলার পরিবর্তে কাজে মনোনিবেশ করলে দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধিত হবে। আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ রয়েছে বিশেষ করে রাজনীতিবিদরা, যারা অনেক কথা বলতে ভালোবাসেন, কিন্তু কাজের সময় ফাঁকি দেন। আবার অন্যের সমালোচনা করার বেলাতেও তারা অত্যন্ত পটু। এসব মানুষ সমাজের জন্য ক্ষতিকর। তারা সভ্যতার বিকাশে কোনো ভূমিকা রাখে না; বরং এর অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। নিজে কাজ করলে এবং অন্যের কাজে সহায়তা করলে আমাদের দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। বিশ্বের সব দেশেই শ্রমকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। কবি জসীমউদ্‌দীনের 'রুপাই' কবিতায় দেখা যায়, রুপাই কৃষিকাজে খুবই অভিজ্ঞ, খেলাধুলাতেও দক্ষ। আবার গ্রামের মানুষের বিপদে-আপদে সহযোগিতার জন্য সে সবার আগে ছুটে চলে আসে। মহামানবদের জীবনী পাঠ করলে আমরা তো আরও অনেক কিছু শিক্ষা পাই। তারা কর্ম ও নিষ্ঠা দিয়ে পৃথিবীতে নিজেদের নাম স্মরণীয় করে রেখেছেন। আমাদের দেশের বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধারা, জাতীয় অধ্যাপক প্রকৌশলী জামিলুর রেজা চৌধুরী, পলস্নীকবি জসীমউদ্‌দীনের মতো অনেকেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অবদান রেখে গেছেন। বর্তমানেও অনেকেই দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতেও আশা করা যায়, দেশের জন্য অনেকেই অনেক ভালো ভালো কাজ করবেন। প্রত্যেকের ঐকান্তিক সাধনা, নিরলস শ্রম ও কঠোর অধ্যবসায়ের ফলে ভালো ভালো কাজ করলে আমাদের বাংলাদেশ আরও উন্নত হবে। ইতিহাসের পাতায় তারা অমর, অক্ষয়, অব্যয় হয়ে থাকবেন। আমাদেরও উচিত তাদের পথকে অনুসরণ করে ভালো ভালো পুণ্যকর্ম করে নিজের, পরিবারের, সমাজের তথা দেশের মুখ উজ্জ্বল করা। অর্থহীন কথা পরিহার করে কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়াতেই নিজের ও দেশের উন্নতি নিশ্চিত করা যায়। তাই আত্মঅহংকার পরিত্যাগ করে কাজ ও পরিশ্রমের মধ্যদিয়ে আমাদের এগোতে হবে। ১০. আপনার লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে। অথবা, পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না। ভাবসম্প্রসারণ : ভোগে নয়, ত্যাগেই মানুষের প্রকৃত সুখ ও মুক্তি। অন্যের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করার মধ্যেই রয়েছে মানবজীবনের সার্থকতা। মানুষকে তার অর্জিত গুণাবলি আত্মস্বার্থে ব্যয় করলে চলবে না, পরের জন্য ভাবতে হবে। ফুল যখন গাছের ডালে ফোটে, তখন তার সৌন্দর্য রূপপিয়াসী মানুষকে মুগ্ধ করে, মধুলোভী মৌমাছিকে করে আকর্ষণ। মানুষ প্রশংসা করে তার সৌন্দর্যের, ঘ্রাণ নিয়ে মুগ্ধ হয়। মেয়েরা খোঁপায় গোঁজে, সাজায় ফুলদানিতে। মধুকর পান করে ফুলের মধু, গড়ে তোলে মৌচাক। এভাবে একসময় ফুল শুকিয়ে যায়, ঝরে পড়ে। অপরের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে ফুল তার জীবন সার্থক করে তোলে। পৃথিবীর বুকে এমন অনেক মহৎপ্রাণ ব্যক্তি আছেন, যারা ফুলের মতোই অন্যের কল্যাণে নিজের মেধা, জ্ঞান, শ্রম, এমনকি মূল্যবান জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন। ইতিহাসের পাতায় তারাই স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি, হযরত মুহম্মদ (সা.) এ পৃথিবীতে সবসময় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও পরের উপকারের জন্য অনেক ভালো কাজ করে গেছেন। যেমন: তিনি তার প্রথমা স্ত্রী হযরত খাদিজা (রা.)-র কাছ থেকে বেশ কিছু সম্পত্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেগুলো শুধু নিজের জন্য ব্যবহার না করে গরীব মানুষকে কাছে দান করে গেছেন। আবার মাদার তেরেসা মানবসেবার জন্য বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক সংগঠন গড়ে তুলেছেন। যেমন: মিশনারিজ অব চ্যারিটি, নির্মল হৃদয়, প্রেমনিবাস, শিশুভবন ইত্যাদি। তিনি ১৯৭৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের যে অর্থ পেয়েছিলেন, সেটিও তিনি গরীব অসহায় মানুষের জন্য ব্যয় করেছেন। এভাবে অনেক পরোপকারী মানুষ রয়েছেন, যারা সারাটি জীবন অন্যের জন্য উৎসর্গ করেছেন। এজন্যই হয়তো কবি দ্বিজেন্দ্রনাথ লাল রায় লিখেছেন- 'যাঁহারা এ পৃথিবীতে হয়ে গেছেন চিরধন্য/ নিজের জন্য ভাবেনিক ভেবেছিলেন পরের জন্য।' বস্তুত নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা মানুষের গুণ নয়, স্বার্থসর্বস্বর পশুর বৈশিষ্ট্য। আমরা প্রত্যেকেই পৃথিবীতে এসেছি একে অপরের জন্য জীবনধারণ করে সার্থক হতে, মনুষ্যত্বের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখতে। ফুলের জীবনের কাছে মানুষের অনেক কিছু শেখার আছে। ফুল অন্যের জীবন সাজাতে, সুন্দর করতে, সৌরভময় করতে নিজের জীবন উৎসর্গ করে। পরার্থে জীবন উৎসর্গ করতে পারলে, মানুষের জীবন ও ফুলের মতো সুন্দর ও সৌরভময় হয়ে উঠতে পারে। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে