শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র

আতাউর রহমান সায়েম সহকারী শিক্ষক মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
  ০৪ জুন ২০২৪, ০০:০০
দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র

৭. দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটাকে রুখি

সত্য বলে, 'আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি?'

ভাবসম্প্রসারণ : পৃথিবীতে সত্য-মিথ্যা পাশাপাশি অবস্থান করে। জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়েই মানুষ সত্য ও মিথ্যাকে চিনতে শেখে। ভুল-ভ্রান্তির ভয়ে কেউ কর্মবিমুখ হলে তার জীবনে কখনো সাফল্য আসবে না।

ঘরের দ্বার পথে আমরা ঘর থেকে বের হই কিংবা প্রবেশ করি। দ্বার বন্ধ করে রাখলে সেখানে প্রবেশ করা কিংবা বের হয়ে আসা কোনোটাই সম্ভব হয় না। তেমনি আমাদের মনেরও দরজা আছে। মন ভালো-মন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা বিচারের জন্য একটি নিভৃত ঘর বিশেষ। মানুষের জ্ঞান এখানে পরিশুদ্ধি লাভ করে। মনের মধ্যে যাতে কোনো ভুল-ভ্রান্তিপূর্ণ জ্ঞান প্রবেশ করতে না পারে, এ উদ্দেশ্যে যদি আমরা মনের দুয়ার বন্ধ করে রাখি, তাহলে বাস্তব বা সত্য জ্ঞানও সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। আমাদের পক্ষে তখন সত্য উপলব্ধি করা বা সত্য জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব হবে না। তাই জ্ঞান আহরণের আসল পন্থা হলো, জ্ঞান প্রবেশের জন্য মনের দ্বার খোলা রাখা অর্থাৎ মনকে উদার করা। এর ফলে ভালো-মন্দ, সত্য-অসত্য সব রকমের জ্ঞানই হয়তো মনে আশ্রয় পেতে চাবে। আর তখনই বিবেচনা শক্তির দ্বারা মিথ্যাকে বর্জন ও সত্যকে ধারণ করতে হবে। আলস্নাহপাক মানুষকে ভালো-মন্দ বিচারের জন্য বিবেচনা শক্তি দান করে তাকে শ্রেষ্ঠতর আসনে বসিয়ে দিয়েছেন। মানুষের এখন উচিত সেই বিবেচনা শক্তির ঠিকভাবে প্রয়োগ করা। আর এ উদ্দেশ্যে আমাদের মুক্ত মনের অধিকারী হতে হবে। বিজ্ঞ হেকিম লোকমানকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি এত জ্ঞান কোথায় পেলেন? জবাবে তিনি বলেছেন, 'অজ্ঞানের কাছে।' বস্তুত অজ্ঞানের কাছে যেমন জ্ঞান লুকিয়ে থাকে, তেমনি মিথ্যার সঙ্গে মিশে থাকে সত্য। দিনকে যেমন রাতের সঙ্গে তুলনা করেই চেনা যায়, তাপকে যেমন শৈত্যের সঙ্গে তুলনা করে অনুভব করা যায়, সত্যকেও তেমনি মিথ্যার পাশাপাশি রেখেই নির্ণয় করতে হয়। সাঁতার শিখতে হলে যেমন পানিতে নামতে হয়, তেমনি সত্যকে পেতে হলে জীবনের পথে নামতে হয়।

আর এ ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে জীবনের চলার পথে মানুষ ভুল করতেই পারে। আর এই ভুল করতে করতে এক সময় মানুষ সত্যের অন্দরমহলে প্রবেশ করার সিংহদ্বারটির সন্ধান পায়। সব ঝিনুকেই মুক্তা থাকে না, কিন্তু মুক্তা সন্ধানীকে সব ঝিনুকের মধ্যেই মুক্তার সন্ধান করতে হয়। আমাদেরও মিথ্যার ফুলঝুরির মধ্য থেকেই বিবেচনা শক্তির কষ্টি পাথরে প্রকৃত সত্যকে খুঁজে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে- খনিতে কখনো নিখাঁদ সোনা পাওয়া যায় না- নানান খনিজ দ্রব্যকে পরিশ্রম্নত করেই সোনা লাভ করতে হয়। সত্যকে তেমনি মিথ্যা থেকে পরিশ্রম্নত করে নির্ণয় করতে হবে। এক একটি ভুল মানুষকে এক একটি সত্যের সন্ধান দেয়।

শিশু যেমন আছাড় খেতে খেতে হাঁটতে শেখে, মানুষও তেমনি ভুল-ভ্রান্তির মধ্যদিয়ে সত্যকে চিনে নেয়। জগতে বরেণ্য যারা, তারা জীবন চলার পথে ভুল-ভ্রান্তিকে অতিক্রম করেই সত্য লাভ করেছেন।

\হহযরত উমর ফারুক (রা.) নামে 'ফারুক' শব্দটি সংযুক্ত হওয়ার কারণ তিনি তার জীবনে সত্য-মিথ্যের প্রভেদকারী হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। মানুষের ছোটখাটো ভুল-ভ্রান্তি সত্যকে পাওয়ার পথে প্রতিবন্ধক বা অন্তরায় নয়; বরং ভুল-ভ্রান্তি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করে প্রকৃত সত্য উদ্‌ঘাটন করে সার্থক জীবন লাভ করা যায়। তাই আমাদের উচিত ভুলের জন্য অনুতাপ করে না বসে থেকে ভুল শুধরে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের সাধন করা।

৮. বিশ্রাম কাজের অঙ্গ এক সঙ্গে গাঁথা

নয়নের অংশ যেন নয়নের পাতা।

ভাবসম্প্রসারণ : কাজ এবং বিশ্রাম একে অন্যের পরিপূরক। কাজ আনে জীবনে সমৃদ্ধি আর বিশ্রাম আনে কাজের শক্তি ও প্রেরণা। কাজেই চলা এবং থামা এ দুয়ের মেলবন্ধনেই জীবনের ছন্দ।

কাজ ও বিশ্রাম আপাতদৃষ্টিতে বিপরীত বলে মনে হলেও প্রকৃত অর্থে তা একই প্রক্রিয়ায় দুটি দিক। কাজের পাশাপাশি বিশ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অনস্বীকার্য। চোখের পাতা যেমন চোখেরই একটা অংশ, তেমনি বিশ্রামও কাজের একটা অংশ। চোখের কাজ দেখা কিন্তু চোখের পাতা সেই দেখার কাজ কখনো কখনো বন্ধ রেখে চোখকে অবসর দেয়। এতে চোখকে আরও বেশি কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। আমরা যদি কিছু সময় একটানা কাজ করি, তবে আমাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং কর্মক্ষমতা লোপ পায়। একঘেয়েমির ফলে আসে গভীর অবসাদ ও ক্লান্তি। এ ধরনের পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য আমরা বিশ্রামের প্রয়োজন অনুভব করি। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করলে আমাদের ক্লান্তি দূর হয়, মন প্রশান্ত হয় এবং আমাদের কর্মশক্তি ফিরে আসে। আমরা তখন নতুন উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে কাজে আত্মনিয়োগ করতে সক্ষম হই। আর বিশ্রাম ছাড়া যদি আমরা ক্রমাগত কাজ করতে থাকি, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই কাজের সফলতার জন্য এবং বেশি শক্তি অর্জনের জন্য কাজের সঙ্গে উপযুক্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু দুঃখ হলেও সত্য, অনেক ধনিক শ্রেণির মানুষ আছেন, তারা তাদের স্বার্থের কারণে শ্রমিকদের বেশি কায়িক পরিশ্রম দিয়ে অধিক মুনাফা অর্জন করে থাকে। পক্ষান্তরে শোষিত গরীব অবহেলিত, শোষিত, শ্রমিক শ্রেণির মানুষ শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইতিহাস পড়লে আমরা জানতে পারি- ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকরা ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৮ ঘণ্টার ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকেই নির্যাতিত হন এবং নিহত হন। অবশ্য ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়াতে ওখঙ (ওহঃবৎহধঃরড়হধষ খধনড়ঁৎ ঙৎমধহরুধঃরড়হ) সর্বোচ্চ ৮ ঘণ্টা কাজ করার পক্ষে যুক্তি পেশ করেন এবং মে মাসের ১ তারিখকে 'বিশ্ব শ্রমিক দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আবার সমাজে কিছু ভিন্ন চিত্রও দেখা যায়। আমরা ইংরেজি প্রবাদে পড়েছি-

\হ'ঊধৎষু :ড় নবফ ধহফ বধৎষু :ড় ৎরংব, সধশবং ধ সধহ যবধষঃযু, বিধষঃযু ধহফ :যব রিংব.্থ কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী কিংবা গবেষককে দেখা গেছে, নিজের ইচ্ছায় তারা ভালো রেজাল্টের আশায় প্রায়ই প্রতি রাত জেগে লেখাপড়া করে কিংবা কম্পিউটারে কাজ করে। এতে অনেক সময় হিতে বিপরীতও হয়। টানা কাজের ফলে তারা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। ফলে চিকিৎসার খরচও বেড়ে যায়। অথচ যদি নিয়মিত পরিকল্পনা অনুযায়ী রুটিন মাফিক কাজ করে বিশ্রাম নেওয়া হয়, তাহলে তেমন জটিল কোনো সমস্যাই থাকবে না। কাজ ও বিশ্রাম একে অপরের সঙ্গে জড়িত। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিকে ভাবা যায় না। তাই কাজের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্রামের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে