সপ্তম শ্রেণির বাংলা

প্রকাশ | ৩১ মে ২০২৪, ০০:০০

মোচ্ছা. রুবিনা খাতুন সহকারী শিক্ষক দখিনা রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয় রাঙামাটি
প্রমিত ভাষায় কথা বলি ধ্বনির উচ্চারণ বাংলাদেশের সব অঞ্চলের মানুষের ভাষা এক রকমের নয়। অঞ্চলভেদে অনেক শব্দের উচ্চারণ আলাদা হয়, কখনো কখনো একই অর্থে ভিন্ন ভিন্ন শব্দও ব্যবহার করা হয়। ভাষাগত এই তফাৎকে বলা হয় আঞ্চলিক ভাষা। আঞ্চলিক ভাষার কারণে এক অঞ্চলের মানুষের কথা আরেক অঞ্চলের মানুষের বুঝতে সমস্যা হয়। অন্যদিকে প্রমিত ভাষায় কথা বললে সব অঞ্চলের মানুষ সহজে বুঝতে পারে। প্রমিত ভাষাকে মনে করা হয় ভাষার মান রূপ বা আদর্শ রূপ। প্রমিত ভাষার দুটি রূপ আছে : কথ্য প্রমিত ও লেখ্য প্রমিত। কথ্য প্রমিত ব্যবহার হয় আনুষ্ঠানিক কথা বলার সময়ে, অন্যদিকে লেখ্য প্রমিত ব্যবহার হয় লিখিত যোগাযোগের কাজে। প্রমিত ভাষার প্রয়োগ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা অফিস-আদালতে প্রমিত ভাষা ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা, সংবাদ পাঠ, হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রচার, যে কোনো ধরনের ঘোষণা, খেলার মাঠের ধারাবিবরণী, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান, কোনো বিষয়ে বক্তৃতা বা আলোচনা ইত্যাদি আনুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে প্রমিত ভাষায় কথা বলা হয়ে থাকে। শব্দ খুঁজি অনেক শব্দ তোমার চারপাশের মানুষ ভিন্নভাবে উচ্চারণ করে, কিংবা প্রমিত শব্দের বদলে আলাদা শব্দ ব্যবহার করে। তোমার উচ্চারণেও হয়তো এ রকম ব্যাপার ঘটে। ঘোষ ও অঘোষ ধ্বনি মানুষের গলার ভেতরে শ্বাসনালির ওপরের অংশে যে পর্দা থাকে, তাকে স্বরতন্ত্রী (ধ্বনিদ্বার) বলে। ধ্বনির উচ্চারণের সময় এই স্বরতন্ত্রী কাঁপতে থাকে। অঘোষ ধ্বনি : যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী কম কাঁপে, সেগুলোকে অঘোষ ধ্বনি বলে। যেমন: ক খ চ ছ ট ঠ ত থ প ফ। ঘোষ ধ্বনি : যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী বেশি কাঁপে, সেগুলোকে ঘোষ ধ্বনি বলে যেমন: গ ঘ ঙ জ ঝ ঞ ড ঢ ণ দ ধ ন ব ভ ম। ধ্বনিদ্বারের বাইরে থেকে গলায় আলতোভাবে দুটি আঙুল রেখে ধ্বনিগুলো উচ্চারণ করলে ঘোষ ধ্বনি ও অঘোষ ধ্বনির পার্থক্য বুঝতে পারবে। উচ্চারণ ঠিক রেখে ছড়া পড়ি এখানে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা একটি কবিতা দেওয়া হলো। কবি পরিচিতি: সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯২২ সালে মারা যান। তাকে বলা হয় 'ছন্দের জাদুকর'। 'বেণু ও বীণা', 'ফুলের ফসল', 'কুহু ও কেকা' ইত্যাদি তার বিখ্যাত কবিতার বই। নিচের কবিতাটি কবির 'কুহু ও কেকা' নামের বই থেকে নেওয়া হয়েছে। কবিতাটি প্রথমে নীরবে পড়; এরপর সরবে পাঠ করো। কবিতাটি হলো- ছিন্ন-মুকুল সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত সবচেয়ে যে ছোট পিঁড়িখানি সেইখানি আর কেউ রাখে না পেতে, ছোট থালায় হয় নাকো ভাত বাড়া, জল ভরে না ছোট্ট গেলাসেতে; বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে যে ছোট খাবার বেলায় কেউ ডাকে না তাকে, সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল তারি খাওয়া ঘুচেছে সব আগে। সবচেয়ে যে অল্পে ছিল খুশি- খুশি ছিল ঘেঁষাঘেঁষির ঘরে, সেই গেছে, হায়, হাওয়ার সঙ্গে মিশে দিয়ে গেছে জায়গা খালি করে, ছেড়ে গেছে, পুতুল, পুঁতির মালা, ছেড়ে গেছে মায়ের কোলের দাবি, ভয়-তরাসে ছিল যে সবচেয়ে সেই খুলেছে আঁধার ঘরের চাবি! সবচেয়ে যে ছোট কাপড়গুলি সেগুলি কেউ দেয় না মেলে ছাদে, যে শয্যাটি সবার চেয়ে ছোট আজকে সেটি শূন্য পড়ে কাঁদে; সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল সেই গিয়েছে সবার আগে সরে, ছোট্ট যে-জন ছিল রে সবচেয়ে সেই দিয়েছে সকল শূন্য করে। শব্দের অর্থ গেলাস: গস্নাস। ঘেঁষাঘেঁষির ঘর: একসাথে কয়েক ভাইবোন বড় হয় যে বাড়িতে। ঘোচা: শেষ হওয়া। তরাস: ত্রাস, ভয়। পিঁড়ি: বসার ছোট আসন। পুঁতির মালা: পুঁতি দিয়ে তৈরি করা মালা। পেতে রাখা: বসার জন্য মেঝেতে রাখা। ভাতবাড়া:খাওয়ার জন্য ভাত থালায় রাখা। শয্যা: শোয়ার বিছানা। 'ছিন্ন-মুকুল' কবিতার মূলভাব বা সারমর্ম 'ছিন্ন-মুকুল' কবিতায় কবির শিশুর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। বাড়িতে যে সবচেয়ে ছোট শিশুটি ছিল, সে অকালে মারা গেছে। সবখানে তার স্মৃতিচিহ্ন পড়ে রয়েছে। শিশুটিকে আর কেউ খেতে ডাকে না। তার সঙ্গে কেউ আর খেলা করে না। শিশুটি মায়ের কোলে ওঠার জন্য আকুল হয় না। সব সময় তার জন্য যেন একটা শূন্যতা বিরাজ করে। যে শিশুটি সবার পরে এসেছিল, সে সবার আগে সবকিছু শূন্য করে দিয়ে চলে গেছে। উচ্চারণ ঠিক করি উচ্চারণের সময়ে অঞ্চলভেদে ঘোষ ধ্বনি অঘোষ ধ্বনিতে পরিণত হতে পারে, কিংবা অঘোষ ধ্বনি ঘোষ ধ্বনিতে পরিণত হতে পারে। আবার, অল্পপ্রাণ ধ্বনি বদলে মহাপ্রাণ ধ্বনি হয়ে যেতে পারে, কিংবা মহাপ্রাণ ধ্বনি বদলে অল্পপ্রাণ ধ্বনি হয়ে যেতে পারে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে তোমরা শিখেছ, বাতাস কম-বেশির কারণে ধ্বনি অল্পপ্রাণ বা মহাপ্রাণ হয়। যেমন: ক গ চ জ ট ড ত দ প ব ধ্বনি অল্পপ্রাণ এবং খ ঘ ছ ঝ ঠ ঢ থ ধ ফ ভ ধ্বনি মহাপ্রাণ। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়