রোববার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১

দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)

মনিরুল হক রনি, প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ, সাভার সরকারি কলেজ, সাভার, ঢাকা
  ১৯ মে ২০২৪, ০০:০০
দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)

চতুর্থ অধ্যায়

সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধ এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা

৪. শিল্প বিপস্নবের পর স্বামী-স্ত্রীর কর্মব্যস্ততার কারণে পারিবারিক বন্ধন অনেক শিথিল হয়ে পড়েছে। শিশুদের বাবা-মা একদম সময় দিতে পারে না বলে, তাদের অসংযত আচরণ ও কুপ্রবৃত্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজকাল শিশুরা টিভির ধর্মীয় বা শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখতে পছন্দ করে না বরং পছন্দ করে বিদেশি চ্যানেল ও কম্পিউটারে চ্যাট করতে। বাবা-মার অনুপস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণেই কিশোর অপরাধ ও কিশোর মাদকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করছে।

ক. পরিবার কী?

খ. গণমাধ্যম কীভাবে জনমত তৈরি করে?

গ. উদ্দীপকে শিশুদের উলিস্নখিত আচরণ নিয়ন্ত্রণে কোন বাহনটি ব্যর্থ হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত সামাজিক সমস্যা সৃষ্টিতে বিদেশি চ্যানেল ও কম্পিউটার চ্যাট কি কোনো ভূমিকা রাখছে? মতামত দাও।

উত্তর :

ক. পরিবার হলো স্বামী-স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততির সমন্বয়ে গঠিত একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান।

খ. গণমাধ্যম যেকোনো বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে জনমত তৈরি করে।

মূলত গণমাধ্যম বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। ফলে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে সকলের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে সকলেই জানতে পারে, ভাবতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এভাবে সবার মধ্যে একটি যৌক্তিক ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জনমত গঠিত হয়।

গ. উদ্দীপকে শিশুদের উলিস্নখিত আচরণ নিয়ন্ত্রণে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অন্যতম বাহন হিসেবে পরিবারের ব্যর্থতার কথা বলা হয়েছে।

পরিবার শিশুর সামাজিকীকরণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাবা- মায়ের কাছ থেকেই শিশু ভালো- মন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝতে শেখে। কিন্তু বর্তমানে অনেক পরিবারই শিশুদেরকে এমন শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। উদ্দীপকেই তার বাস্তব দৃষ্টান্ত প্রতিফলিত হয়েছে। উদ্দীপকে দেখা যায়, শিল্প-বিপস্নবের পর স্বামী-স্ত্রীর কর্মব্যস্ততার কারণে পারিবারিক বন্ধন অনেকটাই শিথিল হয়ে পড়েছে। বাবা-মা এখন আর শিশুদেরকে বেশি সময় দিতে পারেন না। এর ফলে শিশুদের মধ্যে অসংযত আচরণ ও কুপ্রবৃত্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায়, পরিবারের ভূমিকাটি এ ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে

পড়েছে। প্রকৃতপক্ষে বাবা-মাই শিশুদের প্রথম শিক্ষক। কিন্তু তারা যদি শিশুদেরকে সময় না দেন এবং তাদের সঠিক পরিচর্যা না করেন তাহলে তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শিশুরা তখন ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য চিহ্নিত করতে পারে না। ফলে তাদের আচরণ অসংযত হয়ে পড়ে।

তাদের মধ্যে কুপ্রবৃত্তি ও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ পরিবারের ব্যর্থতার কারণে শিশুর জীবন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। উদ্দীপকে পরিবারের এরূপ ব্যর্থতার প্রতিই আলোকপাত করা হয়েছে।

ঘ. হঁ্যা, উদ্দীপকে উলিস্নখিত সামাজিক সমস্যা সৃষ্টিতে বিদেশি চ্যানেল ও কম্পিউটার চ্যাট অন্যতম প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখছে। শিশুর সামাজিকীকরণে গণমাধ্যমের একটি সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। গণমাধ্যমের অপব্যবহার করা হলে এর নেতিবাচক প্রভাব শিশুর আচরণ ও স্বভাবে পড়ে। ফলে কিশোর অপরাধের মতো বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। উদ্দীপকেও এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। গণমাধ্যমের অন্যতম শক্তিশালী উপাদান টেলিভিশন ও কম্পিউটার শিশুদের শিক্ষার উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে এগুলোর নানামুখী অপব্যবহারও লক্ষণীয়, যার উদাহরণ উদ্দীপকে দেখা যায়। কারণ বিদেশি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত সব অনুষ্ঠান শিশুর জন্য উপযোগী নয়। অনেক ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ভিন্নতা শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে তারা বিপথগামী হয়। আবার কম্পিউটার চ্যাট যদি নিয়ন্ত্রিত না হয় তবে তা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তারা কার সাথে, কী

বিষয়ে চ্যাট করছে সে সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া জরুরি। কারণ এর মাধ্যমে শিশুরা খুব সহজেই খারাপ সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে এবং নানা রকম অন্যায় কাজে প্ররোচিত হতে পারে। এর মাধ্যমেই সমাজে কিশোর অপরাধের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়, যা কখনোই কাম্য নয়। উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, কিশোর অপরাধের মতো সামাজিক সমস্যা সৃষ্টিতে বিদেশি চ্যানেল ও কম্পিউটার চ্যাট তথা গণমাধ্যমের অপব্যবহার প্রভাবকের ভূমিকা রাখে। তাই শিশুদের সুষ্ঠু বিকাশে গণমাধ্যমের এ উপাদানগুলোর সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত।

৫. সখীপুর গ্রামের প্রায় সব পরিবার থেকেই দু-একজন করে মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করেন। তাই গ্রামের সবাই আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। এ কারণে গ্রামে মাঝে মাঝেই ডাকাতেরা হানা দেয় ও প্রচুর ধন-সম্পদ নিয়ে চলে যায়। বিষয়টি সমস্যায় রূপ নেওয়ায় উক্ত গ্রামের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে এবং আনসার বাহিনীর একটি সশস্ত্র দলও দিনরাত টহল দিয়ে যাচ্ছে।

ক. ঋধসরষু শব্দের অর্থ কী?

খ. ধর্মের গুরুত্ব লেখ।

গ. উদ্দীপকে নির্দেশিত সংস্থাটির নাম উলেস্নখপূর্বক ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উক্ত সংস্থার ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর :

ক. ঋধসরষু শব্দের অর্থ পরিবার।

খ. সামাজিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক সংহতি ও ঐক্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ধর্ম বলতে অতিপ্রাকৃত মহাশক্তিতে বিশ্বাসকে বোঝায়। এ বিশ্বাস সমাজ ও মানুষের জীবনধারাকে প্রত্যক্ষ ও

পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। ধর্ম মানুষের মাঝে ন্যায়- অন্যায়বোধ জাগিয়ে তোলার মাধ্যমে ন্যায়নিষ্ঠ করে তোলে। ধর্মীয় বিশ্বাস মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাই সামজে মানুষকে সুশৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন, নৈতিকতা ও ন্যায়বোধের চর্চাকে চলমান রাখার জন্য অবশ্যই ধর্মের প্রয়োজন।

গ. উদ্দীপকে আইন, প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশ করা হয়েছে। যারা দেশের প্রচলিত আইনের প্রতিষ্ঠা এবং প্রয়োগের জন্য নিবেদিত প্রাণ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলতে ঐসব সংস্থাকে বোঝায়, যারা দেশে বিদ্যমান আইনসমূহ নাগরিকদের কল্যাণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে থাকে। যার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী, পুলিশের বিভিন্ন বাহিনী ওর্ যাব। বৃহৎ অর্থে বিচার বিভাগের কাজও এর আওতাভুক্ত বলে বিবেচিত হয়। তবে সাধারণত পুলিশ বিভাগই আইনপ্রয়োগের মূল সংস্থার দাবিদার। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জনগণের বন্ধু বা জনগণের সেবকও বলা হয়। জনগণকে আইনের সুফল পেতে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংস্থাটি ভূমিকা রাখে, যার মূল লক্ষ্য হলো দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন।

উদ্দীপকে দেখা যায়, সখীপুর গ্রামের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় পুলিশ ও আনসার বাহিনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্যাম্প স্থাপন করে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান করে। এ ছাড়া নানা ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রমের তদন্ত করে সন্দেহভাজন অপরাধী খুঁজে বের করা, অপরাধমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধ করা, অপরাধীর বিচার কাজ সম্পন্ন ও শাস্তি প্রদানসহ নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। উদ্দীপকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে পুলিশ ও আনসার বাহিনী সখীপুরের জনগণের নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে। যেকোনো দেশের সমস্যা সমাধান ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রধান ভূমিকা পালন করে।

ঘ. সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনের যথাযথ প্রয়োগের ওপরই নির্ভর করে বিভিন্ন সমস্যার সঠিক সমাধান। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কারণেই নানারকম সামাজিক সমস্যা কমে যায়। যেমন- এসিড নিক্ষেপকারীকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হলে সমাজের অন্যরা এ অপরাধ থেকে দূরে থাকবে। ফলে সমাজ থেকে এসিড নামক সন্ত্রাস ধীরে ধীরে কমে আসবে। আবার পুলিশ যদি বাল্যবিবাহের সাথে যুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে যথাযথ শাস্তি দেয়; তাহলে

সমাজের অন্যরাও বাল্যবিবাহ দিতে বা করতে সাহস পাবে না। এর ফলে বাল্যবিবাহ হ্রাস পাবে। এ ছাড়া দুর্নীতি সমাজের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যদি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করে তাহলে সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব হবে।

এছাড়া হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অপহরণ, চোরাচালান, নানারকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রতিরোধ, হ্রাস এবং শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আইন

প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করলেই সমাজ থেকে বিভিন্ন সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে