রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)

মনিরুল হক রনি, প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ, সাভার সরকারি কলেজ, সাভার, ঢাকা
  ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০
দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)

চতুর্থ অধ্যায়

সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধ এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা

ঘ. প্রশ্নে উলিস্নখিত পরিবার তথা অণু পরিবারের গুরুত্ব বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে। সমাজকাঠামো ও মানুষের জীবনব্যবস্থায় পরিবর্তন একটি অবশ্যম্ভাবী বিষয়। প্রাচীন যুগের সমাজব্যবস্থা যেমন ছিল এখন আর সেরকম নেই। এই পরিবর্তন সমাজকাঠামোর প্রতিটি স্তরেই ঘটেছে। ফলে সময়ের সাথে সাথে পরিবারের কাঠামোতেও পরিবর্তন এসেছে। এক সময়ের স্বাভাবিক চিত্র যৌথ পরিবারের জায়গায় এখন অণু বা একক পরিবার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় পরিবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজে এক সময় মা-বাবা, ভাই-বোন, দাদা- দাদী সবাইকে নিয়ে একসাথে বসবাসের রীতি ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। তবে শিল্পায়ন ও নগরায়ণসহ বিভিন্ন কারণে অণু বা একক পরিবার গঠনের হার দ্রম্নত বাড়তে থাকে। অণু পরিবারের সুবিধা হলো, এই পরিবার কাঠামোতে সন্তান-সন্ততির জন্য সহজেই সব ধরনের মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়। পরিবারের আকার ছোট হওয়ায় সন্তানের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য, মানসম্মত শিক্ষা, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুবিধার ব্যবস্থা করা যায়। এ কারণে দিন দিন অণু পরিবার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে এ কথাও সত্যি যে, অতীতের মতো পারিবারিক সংযোগ বা মানসিক অনুভূতির আদান- প্রদান অণু পরিবারে অনেকাংশেই অনুপস্থিত। সামগ্রিক আলোচনা থেকে বলা যায়; অণু বা একক পরিবারের উৎপত্তি তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক ঘটনা হলেও দিন দিন এর বিস্তার ও গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৩. ইউসুফ ও উমা ভালো বন্ধু। পারিবারিক ও সামাজিক স্বীকৃতির মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে সামাজিক বন্ধন স্থাপিত হয়। তাদের মধ্যকার এ সামাজিক বন্ধনই সাধারণত স্থায়ীভাবে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

ক. ধর্ম কী?

খ. গণমাধ্যম বলতে কী বোঝায়?

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি কোন সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উদ্দীপকে উলিস্নখিত বিষয়টির ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর :

ক. ধর্ম (জবষরমরড়হ) হচ্ছে স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস এবং কিছু বিধিবিধান যা মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে।

খ. গণমাধ্যম বলতে যোগাযোগের উপায় বা মাধ্যমকে বোঝায়, যা দিয়ে সর্বস্তরের জনগণের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছানো সম্ভব হয়। গণমাধ্যম হলো একটি একমুখী যোগাযোগ প্রক্রিয়া। সাধারণত, মানুষের কর্মকান্ড, চিন্তা-চেতনা ও ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার তথ্য বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর প্রক্রিয়াকেই গণমাধ্যম বলে। গণমাধ্যমের উদাহরণ হলো্ত বইপত্র, সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ইত্যাদি।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি অন্যতম সামাজিক প্রতিষ্ঠান বিবাহকে নির্দেশ করে। বিবাহ হলো প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের একসাথে বসবাস করার সামাজিক স্বীকৃতি; যা সংশ্লিষ্ট সমাজ, সম্প্রদায় বা দেশের প্রচলিত রীতিনীতি ও আইন দ্বারা অনুমোদিত হয়। এর মাধ্যমে পরিবার গঠিত হয় এবং নারী-পুরুষের মধ্যে স্থায়ী ও বৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি হলো যৌন চাহিদা। বৈধ উপায়ে এ চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে বিবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদ্দীপকে ইউসুফ ও উমার মধ্যে একটি স্থায়ী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের মধ্যকার এই সম্পর্ক পরিবার ও সমাজের স্বীকৃতির মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে। আগে তারা দুজন খুব ভালো বন্ধু ছিল। তাদের এই বন্ধুত্বের সম্পর্কই বিবাহের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থায়ীরূপ লাভ করেছে। ফলে তারা এখন স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বৈধ সম্পর্কের ভিত্তিতে স্থায়ীভাবে একত্রে বসবাস করতে পারবে। মূলত বিবাহের মাধ্যমেই একজন নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈধ সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং এর ফলে নতুন পরিবার গড়ে ওঠে।

ঘ. সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উদ্দীপকে উলিস্নখিত বিষয় অর্থাৎ বিবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানব সভ্যতার ইতিহাস থেকে দেখা যায়, যখন মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বসবাস শুরু করে তখন থেকেই বিবাহ ব্যবস্থার প্রচলন হয়। মূলত প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষ এ ব্যবস্থাটির উদ্ভব ঘটায়। তাই সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবাহের গুরুত্ব সহজেই অনুমান করা যায়।

সমাজব্যবস্থায় একে অন্যের সাথে যে সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে, তার পিছনে বিবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমেই নর-নারীর সামাজিক সম্পর্ক স্থির হয় এবং প্রজনন ধারা বজায় থাকে। নবজাতকের লালন-পালন ও সামাজিকীকরণের দায়িত্ব পিতা-মাতার ওপরই ন্যস্ত হয়। ফলে সন্তানের লালন- পালনে সমস্যা হয় না এবং সে সামাজিক স্বীকৃতি পায়। কিন্তু অবৈধ যৌন সম্পর্কের ফলে যে সন্তানের জন্ম হয়, তার লালন-পালন ও সামাজিকীকরণে নানা সমস্যা দেখা দেয়। কারণ বিবাহ হলো পবিত্র বন্ধন, আর এর মাধ্যমেই পরিবার গঠিত হয়। এ ব্যবস্থাই পরিবারের ভিত্তি। আর পরিবার ব্যবস্থার মাধ্যমেই শিশুরা যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। এ থেকে বোঝা যায়, বিবাহ সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

পরিশেষে বলা যায়, সভ্য সমাজে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য বিবাহের কোনো বিকল্প নেই।

৪. শিল্প বিপস্নবের পর স্বামী-স্ত্রীর কর্মব্যস্ততার কারণে পারিবারিক বন্ধন অনেক শিথিল হয়ে পড়েছে। শিশুদের বাবা-মা একদম সময় দিতে পারে না বলে, তাদের অসংযত আচরণ ও কুপ্রবৃত্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজকাল শিশুরা টিভির ধর্মীয় বা শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখতে পছন্দ করে না বরং পছন্দ করে বিদেশি চ্যানেল ও কম্পিউটারে চ্যাট করতে। বাবা-মার অনুপস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণেই কিশোর অপরাধ ও কিশোর মাদকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করছে।

ক. পরিবার কী?

খ. গণমাধ্যম কীভাবে জনমত তৈরি করে?

গ. উদ্দীপকে শিশুদের উলিস্নখিত আচরণ নিয়ন্ত্রণে কোন বাহনটি ব্যর্থ হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকে উলিস্নখিত সামাজিক সমস্যা সৃষ্টিতে বিদেশি চ্যানেল ও কম্পিউটার চ্যাট কি কোনো ভূমিকা রাখছে? মতামত দাও।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে