বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১

দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)

মনিরুল হক রনি, প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ, সাভার সরকারি কলেজ, সাভার, ঢাকা
  ১৬ মে ২০২৪, ০০:০০
দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)

৪. কালাম কৃষিকাজ করে। সে আঠারো বছর বয়সে চৌদ্দ বছরের সেলিনাকে বিয়ে করে। বিয়ের দুই বছরের মধ্যে তাদের একটি কন্যাসন্তান হয়। এর পরও তারা একটি পুত্রসন্তানের প্রত্যাশায় পর পর পাঁচটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন।

ক. অপুষ্টি কী?

খ. বাল্যবিবাহ বলতে কী বোঝায়?

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের প্রধান কোন সামাজিক সমস্যার কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সামাজিক সমস্যা দুটির পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:

ক. দেহের প্রয়োজনের তুলনায় খাদ্যে পুষ্টি উপাদানের অভাব হলে বা আধিক্য ঘটলে শরীরের যে অস্বাভাবিক লক্ষণ প্রকাশ পায় তাকে অপুষ্টি বলা হয়।

খ. বাল্যবিবাহ বলতে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে ও মেয়ের বিবাহকে বোঝায়।

সাধারণত বয়সকে বিয়ের মাপকাঠি ধরে বাল্যবিবাহ ধারণাটিকে ব্যাখ্যা করা হয়। জাতিসংঘ সর্বজনীন শিশু অধিকার সনদ এবং বাংলাদেশের জাতীয় শিশু নীতিতে ১৮ বছরের কম বয়সি সবাইকে শিশু হিসেবে ধরা হয়। সে দৃষ্টিকোণ থেকে ১৮ বছরের নিচের কোনো ছেলে বা মেয়ের বিয়ে বাল্যবিবাহ হিসেবে গণ্য হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিয়ের বয়স ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ এবং মেয়েদের জন্য ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের প্রধান সামাজিক সমস্যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশে বিদ্যমান সামাজিক সমস্যাসমূহের মধ্যে অধিক জনসংখ্যাই প্রধান। এদেশের আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক বেশি। এর ফলে দেশের আর্থ- সামাজিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং উন্নয়ন

বাধাগধস্ত হচ্ছে। উদ্দীপকে এ সমস্যাটিরই দুটি কারণ পরিলক্ষিত হয়।

বাল্যবিবাহ জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। উদ্দীপকের কালাম চৌদ্দ বছরের সেলিনাকে বিয়ে করে। অল্পবয়সে বিয়ে করার ফলে তারা দীর্ঘদিন যাবৎ সন্তান নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি কারণ। আবার পুত্রসন্তান লাভের আকাঙ্ক্ষাও বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী। কেননা আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের সাধারণ ধারণা মেয়েরা বিয়ের পর স্বামীর সংসারে চলে যায়। তাই তারা কোনো কাজে আসে না। এছাড়া ছেলেসন্তানই কেবল উপার্জন করতে পারে। এ কারণে অনেকে ছেলেসন্তানের আশায় একাধিক সন্তান গ্রহণ করে।

উদ্দীপকের কালামও তেমনই একজন। সে একটি পুত্রসন্তানের প্রত্যাশায় পরপর পাঁচটি মেয়েসন্তানের বাবা হয়। এভাবে তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকটি বাংলাদেশের প্রধান সামাজিক সমস্যা জনসংখ্যা বৃদ্ধিকেই নির্দেশ করছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সামাজিক সমস্যা দুটি হলো বাল্যবিবাহ ও জনসংখ্যা সমস্যা, যা পরস্পর আন্তঃসম্পর্কযুক্ত। সমাজ হলো সামাজিক সম্পর্কের একটি জটিল জাল। সমাজের প্রত্যেকটি উপাদান যেমন একে অন্যের সাথে জড়িয়ে আছে, তেমনি সমাজের প্রত্যেকটি সমস্যাও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একে অন্যের সাথে সম্পর্কিত। বাল্যবিবাহ ও জনসংখ্যা সমস্যার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

উদ্দীপকের কালামের বাল্যবিবাহ করাও অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার মাধ্যমেও এ সমস্যা দুটির সম্পর্ক ফুটে উঠেছে।

জনসংখ্যা সমস্যার সাথে বাল্যবিবাহের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বিদ্যমান। বাল্যবিবাহের ফলে একটি পরিবার অনেক দিন ধরে সন্তান উৎপাদন করে, ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আবার বাল্যবিবাহের কারণে শিশু মৃতু্যহার বৃদ্ধি পায়। ফলে পিতা-মাতা অধিক সন্তান গ্রহণ করে, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। আবার জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে বাল্যবিবাহকে পরোক্ষভাবেও সম্পর্কিত করা যায়। যেমন- জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সমাজে নিরক্ষরতা বৃদ্ধি পায়। আর নিরক্ষরতা অনেক সামাজিক সমস্যার জন্য ক্রিয়াশীল ভূমিকা পালন করে। নিরক্ষরতার কারণে মানুষ বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে। আমাদের গ্রামাঞ্চলে এ অজ্ঞতার কারণেই বাল্যবিবাহ সংঘটিত হয়।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, জনসংখ্যা সমস্যা ও বাল্যবিবাহ পরস্পর সম্পর্কিত। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকটি বাল্যবিবাহ ও জনসংখ্যা

সমস্যার আন্তঃসম্পর্কের একটি খন্ডচিত্র উপস্থাপন করে।

৫. পিয়ালের বয়স দশ বছর। সে কারও সঙ্গে কথা বলে না তার সাথে কেউ কথা বললে সে শুধু মাথা নাড়ায়। তার বাবা-মা তাকে স্কুলে পাঠায় না। কারণ সে অযথা সবার গায়ে থুথু ছিটায়। তবে সে অনেক সুন্দর ছবি আঁকতে পারে।

ক. গ্রিনহাউস ইফেক্ট কী?

খ. জলবায়ু পরিবর্তনের দুটি কারণ ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকে পিয়ালের সমস্যাটি কী? ব্যাখ্যা করো।

ঘ. তুমি কি মনে করো, পিয়ালের বাবা-মা তাকে স্কুলে না পাঠিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? যুক্তি দাও।

উত্তর:

ক. মানুষের নেতিবাচক কর্মকান্ডের কারণে বায়ুমন্ডলে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাসসমূহের উত্তরোত্তর বৃদ্ধির ফলে তাপমাত্রা বাড়ার প্রক্রিয়াই হলো গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া।

খ. জলবায়ু পরিবর্তনের দুটি কারণ হলো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সবুজ বনাঞ্চল ধ্বংস করা। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে হিমবাহ গলে যাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হচ্ছে। অন্যদিকে নির্বিচারে সবুজ বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা গ্রিনহাউস ইফেক্টের জন্য দায়ী। ফলে প্রতিনিয়ত জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে।

গ. উদ্দীপকে পিয়ালের সমস্যাটি হলো অটিজম।

অটিজম হচ্ছে শিশুর বিকাশজনিত স্নায়ুবিক সমস্যা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (এএসডি) বলে। শিশুর জন্মের ৩ বছরের মধ্যে এ রোগ দেখা যায়। এ রোগে আক্রান্ত হলে শিশুরা আত্মকেন্দ্রিক হয় এবং তাদের আচরণগত অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। উদ্দীপকের পিয়ালের ক্ষেত্রেও অনুরূপ অস্বাভাবিকতা লক্ষ করা যায়।

উদ্দীপকের পিয়াল নিজে যেমন কারও সাথে কথা বলে না, তেমনি কেউ তার সাথে কথা বললে সে উত্তর দেয় না। এ থেকে বোঝা যায়, সে আত্মকেন্দ্রিক। অটিজম আক্রান্ত শিশুরা পিয়ালের মতোই নিজেদের গুটিয়ে নেয়। যার জন্য তারা সমাজে অন্যদের সাথে স্বাভাবিক আচরণ বা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করতে অক্ষম। যেমন-

পিয়াল স্কুলে গিয়ে কারও সাথে মিশতে পারে না; বরং সবার গায়ে থুথু ছিটায়। তবে পিয়াল সুন্দর ছবি আঁকতে পারে। এটি অটিজম আক্রান্ত শিশুদের একটি বৈশিষ্ট্য। তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই বিশেষ কোনো বিষয়ে দক্ষতা দেখা যায়। যেমন- কেউ পিয়ালের মতো ছবি আঁকতে

পারে, কেউ সুন্দর গানের সুর অনুকরণ করতে পারে, কেউ বা মুখে মুখে বড় বড় যোগ-বিয়োগ করতে পারে প্রভৃতি। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি অটিস্টিক শিশুর মধ্যেই এরূপ উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও দক্ষতা থাকে। সুতরাং পিয়ালের সমস্যাটির ধরন বিবেচনা করে তাকে একজন অটিস্টিক শিশু বলা যায়।

ঘ. আমি মনে করি পিয়ালের বাবা-মা তাকে স্কুলে না পাঠিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

\হপরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে