৭. রীমা বাবা-মায়ের সাথে মিরপুরে একটি ফ্ল্যাটে থাকে। তার চার ভাই-বোন স্কুলে পড়ে। তার বাবা তাদের জন্য পুষ্টিকর খাবার ও সুন্দর পোশাকের ব্যবস্থা করেন। অবসরে সবাই মিলে বেড়াতে যান, গল্প-গুজব করেন।
ক. মানবিক চাহিদা কী?
খ. 'চিত্তবিনোদন একটি মৌলমানধিক চাহিদা' বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে রীমার কোন মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের বর্ণনা অনুপস্থিত?
ঘ. উক্ত অনুপস্থিত চাহিদাটি অন্য চাহিদাকে কীভাবে প্রভাবিত করে?
উত্তর :
ক. সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের চাহিদা পূরণ প্রয়োজন, সেগুলোকে মৌল মানবিক চাহিদা বলে।
খ. মৌলিক মানবিক চাহিদা হিসেবে চিত্তবিনোদনের গুরুত্ব
অপরিসীম। চিত্তবিনোদন হলো মানুষের মনের খোরাক। চিত্তবিনোদনের ফলে মানুষের মনে আসে আনন্দ, কাজে পায় শক্তি ও প্রেরণা, দূর হয় একঘেয়েমি। মানুষ বাস্তব জীবনে এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে, মাঝে মধ্যে কাজে একঘেয়েমি চলে আসে, কাজে মন বসে না। তখনই দরকার নির্মল চিত্তবিনোদনের, যা ক্লান্তি দূর করে নতুন কাজ করার শক্তি জোগায়।
গ. উদ্দীপকে রীমার মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের বর্ণনা অনুপস্থিত। সমাজে মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকতে এবং সামাজিক ভূমিকা পালনের জন্য মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ করা অপরিহার্য। এ চাহিদাগুলো পূরণ না করলে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব। যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও চিত্তবিনোদন ইত্যাদি।
প্রত্যেক মানুষের এসব চাহিদা পূরণ করা আবশ্যক। উদ্দীপকে দেখা যায়, রীমা বাবা-মায়ের সাথে একটি ফ্ল্যাটে থাকে। এছাড়া তারা চার ভাই-বোন স্কুলে পড়ে। তারা পুষ্টিকর খাবার খায়, সুন্দর পোশাক পরে এবং অবসরে বেড়াতে যায়, গল্পগুজব করে। উদ্দীপকের এসব তথ্য মৌল মানবিক চাহিদা; যথা- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিত্তবিনোদনকে নির্দেশ করে। কিন্তু আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মৌল মানবিক চাহিদা স্বাস্থ্য উদ্দীপকে অনুপস্থিত, যা মানুষ কর্মক্ষম ও আর্থ-সামাজিক ভূমিকা পালনে সহায়তা করে। স্বাস্থ্যহীনতা মানুষকে হীনমন্যতায় ভোগায়। তাই ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নে সুস্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অন্যতম উপাদান। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে মৌল মানবিক চাহিদায় স্বাস্থ্যের বর্ণনা অনুপস্থিত।
ঘ. উক্ত অনুপস্থিত চাহিদাটি হলো স্বাস্থ্য, যা অন্যান্য চাহিদাকে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে। মৌল মানবিক চাহিদা মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ভূমিকা পালনে ও মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশে সাহায্য করে। এর কোনো একটির অভাব অন্য চাহিদাগুলোকে উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সেই সাথে বিভিন্ন সমস্যারও সৃষ্টি করে। স্বাস্থ্যের চাহিদা পূরণ করা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যের অভাবে মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে মানুষের কোনো কিছুই ভালো লাগে না। সুস্বাস্থ্যের সাথে খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিত্তবিনোদন বস্তু সব কিছুই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা দেয়, বাসস্থানে ভালো লাগে না, সুস্বাস্থ্যের অভাবে অপুষ্টি দেখা দেয়, যা মেধাশক্তি বিকাশের অন্তরায়। এভাবে স্বাস্থ্য শিক্ষাকে প্রভাবিত করে। এছাড়া চিত্তবিনোদন যা মনের খোরাক মেটায় কিন্তু স্বাস্থ্যই যদি ভালো না থাকে, এ চাহিদাও গৌণ হয়ে পড়ে। মানুষের মাঝে এক ধরনের হতাশা কাজ করে। হীনমন্যতায় ভোগে। সামাজিক ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়। এভাবে স্বাস্থ্য অন্যান্য মৌল মানবিক চাহিদার উপর প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে উলিস্নখিত অনুপস্থিত মৌল মানবিক চাহিদা স্বাস্থ্য যদি যথাযথভাবে পূরণ না হয় অন্যান্য চাহিদাগুলোও নানাভাবে প্রভাবিত হয়।
দ্বিতীয় অধ্যায় : সমাজকর্মের শাখা
১. রহিমা ভীষণ অসুস্থ। সমাজকর্মী কণা তাকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন। তার সহায়তায় রহিমার বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। কণা হলো ঐ হাসপাতালের সমাজসেবা বিভাগের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার। এজন্য এ কাজ করা তার জন্য সহজ হয়েছে।
ক. 'কষরহব' শব্দের উৎপত্তি কোন ভাষা হতে?
খ. প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্ম বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত কণার কার্যক্রম সমাজকর্মের কোন শাখাকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে কণা সংশ্লিষ্ট শাখার একজন সমাজকর্মী হিসেবে আর কি কি ভূমিকা পালন করতে পারে?
তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর :
ক. গ্রিক ভাষা থেকে 'কষরহব' শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।
খ. সমাজকর্মের যে বিশেষায়িত শাখার জ্ঞান, দক্ষতা ও
কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রবীণদের কল্যাণে বিভিন্ন
ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তাকে প্রবীণকল্যাণ
সমাজকর্ম বলে।
বার্ধক্যে মানুষ নানা ধরনের সমস্যায় ভোগে। এ সময়
অনেককেই দারিদ্র্য, অনাহার, অবহেলা, মানসিক
নির্যাতন, প্রতারণা আর শারীরিক নানা বাধা-বিপত্তি
বিপর্যস্ত করে তোলে। এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করা
বা কাটিয়ে ওঠার জন্যই প্রবীণকল্যাণ সমাজকর্ম কাজ
করে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মীরা বয়স্কদের কল্যাণে নিজস্ব
জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সেবা প্রদান করে।
গ. উদ্দীপকের সমাজকর্মী কণার কার্যক্রম চিকিৎসা
সমাজকর্মের ইঙ্গিত দেয়।
সমাজকর্মের একটি বিশেষ শাখা হলো চিকিৎসা
সমাজকর্ম। রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির পর এর
পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করা এ
শাখার কাজ। সেইসাথে দরিদ্র ও দুস্থ রোগীদের ওষুধ ও বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার ব্যয় বহন এবং চিকিৎসার সময় তাদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য প্রদানে এ শাখা কাজ করে। এছাড়াও রোগ ও অসুস্থতার ধরন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা ডাক্তারের কাছে পাঠানোর ক্ষেত্রে চিকিৎসা সমাজকর্ম ভূমিকা রাখে।
চিকিৎসা সমাজকর্ম শাখা রোগীদের খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ ও
চিকিৎসা উপকরণ দিয়ে সাহায্য করার পাশাপাশি মানসিক ও আবেগীয় সমর্থন দেয়। প্রয়োজন অনুযায়ী দরিদ্র রোগীদের ক্ষুদ্রঋণ পেতে সাহায্য করাও চিকিৎসা সমাজকর্মের কার্যক্রম ভুক্ত। উদ্দীপকের রহিমাকে সাহায্য করতে গিয়ে কণা উলিস্নখিত কাজগুলোই করেন। তাই বলা যায়, কণার কার্যক্রম চিকিৎসা সমাজকর্মের ইঙ্গিত দেয়।
ঘ. কণা একজন সমাজকর্মী হিসেবে উদ্দীপকে উলিস্নখিত কাজ ছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা রাখতে পারেন।
সাধারণত চিকিৎসা সমাজকর্মীরা সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা, কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সুবিধা পেতে রোগীকে সাহায্য করেন। এছাড়া তারা রোগীদের সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। তবে এক্ষেত্রে সমাজকর্মীরা আরও কিছু ভূমিকা রাখতে পারেন। উদ্দীপকের কণার মতো চিকিৎসা সমাজকর্মীরা রোগীর চাহিদা অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা দিতে ও চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহ করতে সচেষ্ট থাকেন।
অনেক সময় তারা রোগীকল্যাণ সমিতির মাধ্যমে গরিব ও দুস্থরোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ, চশমা, হুইল চেয়ার, ক্র্যাচ ইতাদি সরবরাহ করার উদ্যোগও নেন। এছাড়া তিনি ডাক্তার, নার্স ও রোগীদের মধ্যে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে থাকেন। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী রোগী সম্পর্কে ডাক্তারকে সঠিক তথ্য দেন। সেইসাথে হাসপাতালে ভর্তি হবার পর রোগীর মধ্যে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, ভয়ভীতি বা চিকিৎসা সংক্রান্ত কুসংস্কার থাকে তা দূর করা ও যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণে তাকে উদ্বুদ্ধ করতেও সমাজকর্মী ভূমিকা রাখেন।
সার্বিক আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, একজন চিকিৎসা সমাজকর্মী হিসেবে কণা শুধুমাত্র উদ্দীপকে উলিস্নখিত কাজ নয়, বরং আরও বিভিন্নক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারেন।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়