আলস্নাহতায়ালা হজরত আদম আলাইহিস সালামকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে পাঠানোর পর তিনি ফেরেশতাদের সাহায্যে বর্তমান শ্রীলঙ্কার 'সেরেনদ্বীপে' আসেন। বঙ্গোপসাগর ও ভারত সাগরের মাঝামাঝি স্থানে দ্বীপটি অবস্থিত। ২৫/৩০ মাইল দূর থেকে পাহাড়টি দেখা যায়। এ পাহাড়ের ঠিক মাঝ বরাবর সবচেয়ে উঁচু স্থানটিকে অবস্থিত পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) এর পদচিহ্ন।
শ্রীলঙ্কার ভাষায় বলা হয়, 'শ্রী পাদায়া' অর্থাৎ পবিত্র পদচিহ্ন। এ পাহাড়টি অবয়বের দিক থেকে অনেকটা জাবালে নূরের মতো।
মনে হয়, পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ এটি। বছরের চার মাস বৃষ্টি আর মেঘে ভাসে দ্বীপটি। ১৯০৩ সালে পদচিহ্ন সম্বলিত পাহাড়ে উঠার জন্য পাথর দ্বারা সিঁড়ি বানিয়ে লোহার রেলিং দেওয়া হয়। যাতে পর্যটকদের পাহাড়ে উঠতে কোনো ধরনের বেগ পেতে না হয়। হজরত আদম (আ.) যখন এ পাহাড়ে নামেন এবং প্রথমে 'ডান' পা রাখেন।
শ্রীলঙ্কায় জনশ্রম্নতি আছে, পাহাড়ে নামার পর হজরত আদম (আ.) ১০০ বছর পর্যন্ত শুধু ডান পায়ের ওপর ভর করে দাঁড়িয়েছিলেন। এ ১০০ বছর তিনি বাম পা মাটিতে রাখেননি। তখনও পৃথিবীর একমাত্র মানব তিনিই। অনেকের মতে এটা পৃথিবীর প্রথম মানব ও নবী হজরত আদম (আ.)-এর পায়ের ছাপের ছবি।
হজরত আদম (আ.)-এর পায়ের দৈর্ঘ্য ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি এবং চওড়া ৪ ফুট ৭ ইঞ্চি। এ বরকতময় পায়ের চিহ্নটি সংরক্ষণের জন্য শ্রীলঙ্কা সরকার একটি চার কোণাবিশিষ্ট বিল্ডিং তৈরি করেছে। সেখানে প্রবেশের জন্য রয়েছে একটি শক্ত লোহার গেট। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, হজরত আদম (আ.)-এর ডান পায়ের চিহ্নটা কেবলামুখী অর্থাৎ পবিত্র কাবার দিকে ফেরানো। আগ্রহী পর্যটক ও সাধারণ মানুষ এ পদচিহ্ন অঙ্কিত দ্বীপটাকে তীর্থস্থান মনে করেন। তাই তো বৃষ্টি ছাড়া বছরের বাকি সময় হাজার হাজার পর্যটক এখানে প্রশান্তি লাভের জন্য হাজির হন; সেখানে বিশেষ উদ্দেশ্য লাভের আশায় যান। সেখানে পর্যটকরা স্বাভাবিকভাবে নিজ নিজ ধর্ম বিশ্বাসমতে ইবাদত-বন্দেগি, আরাধনা-উপাসনা করে থাকেন। ওখানে একটি ঘণ্টা লাগানো আছে। বিভিন্ন ধর্মের লোকেরা মনোবাসনা পূরণের আশায় ওই ঘণ্টায় ৩৬টা করে বাড়ি দেয়, বিশেষ করে বৌদ্ধরা। শ্রীলঙ্কা যেহেতু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও বৌদ্ধ শাসিত দেশ- ওখানে ঘন্টি দেওয়াটাকে তারা বিশেষ ইবাদত বলে মনে করে। শ্রীলঙ্কানরা হজরত আদম (আ.)-এর পদচিহ্নকে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে পাওয়া অনেক বড় অনুগ্রহ বলে মনে করে; এর রক্ষণাবেক্ষণে তারা সদা তৎপর থাকে।
শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যার শতকরা ৭০ ভাগ বৌদ্ধ আর ৮ ভাগ মুসলিম। তবে শুধু মুসলিম নন, খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের কাছেও অতি পবিত্র পাহাড়টি।
পাহাড়টি এ্যাডামস পিক নামে এখন পরিচিত। এ পাহাড়ে আরোহণ করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছার পথ গভীর জঙ্গলের ভিতর দিয়ে। সেই জঙ্গল নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ। তবে চূড়ার কাছাকাছি একটি ধাতব সিঁড়ি আছে। তাতে রয়েছে ৪ হাজার ধাপ। এখানে পৌঁছতে সময় লাগে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা। বছরে মাত্র তিন থেকে চার মাস এ পাহাড়ে আরোহণ করা যায়। বছরের অন্য সময়টাতে এতে আরোহণ অসম্ভব। কারণ, এ পাহাড় তখন লুকিয়ে যায় মেঘের ভেতর। চারদিক থেকে মেঘে জেঁকে ধরে অদৃশ করে ফেলে পাহাড়টাকে। এই পাহাড় এবং পাহাড়ের পদচিহ্ন নিয়ে একটি বই লিখেছেন মারকুস অকসল্যান্ড। বইটির নাম দ্য স্যাক্রেট ফুটপ্রিন্ট এ কালচারাল হিস্ট্রি অব আদমস পিক।
তাতে বলা হয়েছে, পাহাড়টি ২২৪৩ মিটার উঁচু। আকৃতি কোণের মতো। পাহাড়টি হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের কাছে রহস্যময়তার স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। অতি চমৎকার এই চূড়াটি বছরের পর বছর অবিকল রয়ে গেছে। এর সৌন্দর্য এতটুকু ম্স্নান হয়নি। এ কারণে চূড়াটি বিশ্বের মানুষের কাছে পবিত্র বলে পরিচিত।