দ্বাদশ শ্রেণির সমাজকর্ম (দ্বিতীয় পত্র)

প্রকাশ | ০৭ মে ২০২৪, ০০:০০

মনিরুল হক রনি, প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ, সাভার সরকারি কলেজ, সাভার, ঢাকা
বাংলাদেশে মৌলিক মানবিক চাহিদা গ. উদ্দীপকের সফিকুল মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের স্বপ্ন দেখেছে। একজন মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ এবং সভ্য সমাজে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাই হলো মৌলিক মানবিক চাহিদা। এ চাহিদাগুলো পূরণ না হলে সভ্য সমাজে ভালোভাবে টিকে থাকা যায় না। প্রখ্যাত মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী শার্লট টোলে তার 'ঈড়সসড়হ ঐঁসধহ ঘববফং' গ্রন্থে ছয়টি মৌলিক মানবিক চাহিদার উলেস্নখ করেছেন। সেগুলো হলো্ত খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিত্তবিনোদন। সমাজে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য এই ছয়টি চাহিদা পূরণ হওয়া অত্যাবশ্যক। উদ্দীপকের সফিকুল কিছুদিন আগেও এই মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলো থেকে বঞ্চিত ছিল। পর্যাপ্ত খাবার না পাওয়া, মায়ের চিকিৎসা করায় ব্যর্থতা, জরাজীর্ণ ঘরে গাদাগাদি করে বাস করা এসব থেকে সফিকুলের আগের অবস্থা অনুমান করা যায়। কিন্তু বর্তমানে সে মেধাতালিকায় স্থান করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পয়েছে। এর ফলে তার সামনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে সফিকুল এখন ডাক্তার হয়ে সংসারের দারিদ্র্য দূর করতে পারবে। মা ও গ্রামবাসীর চিকিৎসা করতে পারার জন্য উপযুক্ত বাসস্থান, ভালো পোশাক এবং চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থাও করতে পারবে। অর্থাৎ সফিকুল মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলো পূরণের মাধ্যমে সমাজে সম্মানের সাথে বসবাস করতে পারবে। ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অন্যতম মৌলিক মানবিক চাহিদা খাদ্যের অভাব পূরণে সরকারের 'দশ টাকা কেজি চাল' কর্মসূচির উলেস্নখ করা হয়েছে। মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে কেবল এই কর্মসূচিটি যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি আরও পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে দেশের মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব পালনে সরকারকে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। এক্ষেত্রে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও চিত্তবিনোদন প্রতিটি খাতেই সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি রয়েছে। দশ টাকা কেজি চাল' এ ধরনেরই একটি কর্মসূচি। এই কর্মসূচির ফলে উদ্দীপকের সফিকুলের পরিবারের মতো অনেক দরিদ্র পরিবার উপকৃত হচ্ছে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো্ত এই কর্মসূচিটি কেবল খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে। অর্থাৎ অন্য মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য ও আরও কর্মসূচি প্রয়োজন। বিশেষ করে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে স্বল্প ব্যয়ে প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া সাধারণ মানুষের বস্ত্রের চাহিদা পূরণে উৎপাদন বৃদ্ধি, বাসস্থান সমস্যার সমাধানে প্রকল্প গ্রহণ ইত্যাদি ব্যবস্থাও করা উচিত। ওপরের আলোচনা থেক তাই বলা যায়, উদ্দীপকে উলিস্নখিত 'দশ টাকা চাল' কর্মসূচি মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। যে। সে পরিবারের সবার জন্য উপযুক্ত বাসস্থান, ভালো পোশাক এবং চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থাও করতে পারবে। অর্থাৎ সফিকুল মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলো পূরণের মাধ্যমে সমাজে সম্মানের সাথে বসবাস করতে পারবে। ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অন্যতম মৌলিক মানবিক চাহিদা খাদ্যের অভাব পূরণে সরকারের 'দশ টাকা কেজি চাল' কর্মসূচির উলেস্নখ করা হয়েছে। মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে কেবল এই কর্মসূচিটি যথেষ্ট নয়। এর পাশাপাশি আরও পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে দেশের মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব পালনে সরকারকে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসা ও চিত্তবিনোদন প্রতিটি খাতেই সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি রয়েছে। 'দশ টাকা কেজি চাল' এ ধরনেরই একটি কর্মসূচি। এই কর্মসূচির ফলে উদ্দীপকের সফিকুলের পরিবারের মতো অনেক দরিদ্র পরিবার উপকৃত হচ্ছে। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো্ত এই কর্মসূচিটি কেবল খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে। অর্থাৎ অন্য মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য ও আরও কর্মসূচি প্রয়োজন। বিশেষ করে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে স্বল্প ব্যয়ে প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এছাড়া সাধারণ মানুষের বস্ত্রের চাহিদা পূরণে উৎপাদন বৃদ্ধি, বাসস্থান সমস্যার সমাধানে প্রকল্প গ্রহণ ইত্যাদি ব্যবস্থাও করা উচিত। উপরের আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, উদ্দীপকে উলিস্নখিত 'দশ টাকা চাল' কর্মসূচি মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। ৪. জাহিদ হাসান স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে গ্রামে বসবাস করতেন কিন্তু গ্রামে আয়ের ভাল ব্যবস্থা না থাকায় কাজের সন্ধানে তিনি শহরে যান এবং রিকশা চালিয়ে সংসার লান। তিনি যা আয় করেন তা দিয়ে সংসারের সবার খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন। বাসার পাশেই সরকারি প্রাইমারি স্কুল থাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াও করান। কিন্তু স্বল্প আয়ের কারণে স্ত্রী-সন্তানদের প্রয়োজনমত কাপড়-চোপড় কিনে দিতে পারেন না, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাতে পারেন না এবং অবসর সময় কাটানোর জন্য একটি টিভিও কিনে দিতে পারেন না। তবে বস্তি এলাকায় বাস করলেও ঘরে থাকতে তাদের খুব একটি অসুবিধা হয় না। ক. মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান কততম? খ. মৌল মানবিক চাহিদা বলতে কী বোঝ? গ. উদ্দীপকে জাহিদ হাসানের পরিবার কী কী মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না? ব্যাখ্যা কর। ঘ. উদ্দীপকে জাহিদ হাসান এবং তার পরিবার যে সকল চাহিদা পূরণ করতে পারছে তা যথার্থ কিনা? তোমার মতামত দাও। উত্তর : ক. মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯তম। খ. একজন মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ এবং সভ্য সমাজে বসবাসের জন্য যে সব চাহিদা পূরণ করতে হয় সেগুলোকেই মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়। মৌল মানবিক চাহিদার মধ্যে রয়েছে- খাদ্য বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি। প্রতিটি মানুষের জন্যই এ চাহিদাগুলো পূরণ করা প্রয়োজন। এসব চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ করা না গেলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। প্রকৃতপক্ষে মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ না হলে সমাজে মানুষ মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারে না। গ. উদ্দীপকের জাহিদ হাসানের পরিবার বস্ত্র, চিকিৎসা ও বিনোদন এই তিনটি মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। একজন মানুষের ভালোভাবে বেঁচে থাকা এবং সভ্য সমাজে বসবাস করার জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলোই মৌল মানবিক চাহিদা। এসব চাহিদার সবগুলো পূরণ না হলে মানুষের পক্ষে সমাজে সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপন করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। বস্ত্র, চিকিৎসা ও বিনোদন এ ধরনের তিনটি চাহিদা, যা থেকে জাহিদ হাসানের পরিবার বঞ্চিত হচ্ছে। জাহিদ হাসান দারিদ্র্যের কারণে স্ত্রী -সন্তানদের প্রয়োজনমত কাপড়- চোপড় কিনে দিতে পারেন না। অথচ বস্ত্র মানবজীবনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা। এটি একদিকে মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্যদিকে মানবিক চাহিদা পূরণ করে। এ চাহিদা ঠিকমতো পূরণ না হলে সমাজে সম্মানের সাথে বসবাস করা যায় না। বস্ত্রের পাশাপাশি জাহিদ হাসানের পরিবার চিকিৎসা ও বিনোদনের চাহিদাও পূরণ করতে পারছে না। অথচ অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য চিকিৎসার কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ছাড়া বেঁচে থাকা অর্থহীন। সুস্থ জীবনের জন্য বিনোদনও অতি প্রয়োজনীয়। কারণ চিত্তবিনোদন হলো মনের খোরাক। এটি মানুষকে মানসিক শক্তি ও প্রেরণা জোগায়। জাহিদ হাসানের পরিবার ওপরে উলেস্নখ করা তিনটি মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। ঘ. উদ্দীপকের জাহিদ হাসান এবং তার পরিবার খাদ্য, বাসস্থান ও শিক্ষার চাহিদা পূরণ করতে পারছে। তবে আমি মনে করি, এই চাহিদা পূরণ যথাযথভাবে হচ্ছে না। সমাজে সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার জন্য ছয়টি মৌল মানবিক চাহিদাই পূরণ হওয়া প্রয়োজন। কোনো একটি চাহিদা পূরণ না হলে জীবনযাত্রায় অসঙ্গতি দেখা যায়। ফলে সভ্য সমাজে ভালোভাবে বসবাস করা সম্ভব হয় না। জাহিদ হাসানের পরিবারে তিনটি মৌলিক চাহিদা পূরণ হলেও তা যথেষ্ট নয়। জাহিদ হাসান তার উপার্জন দিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারেন। তিনি বাড়ির পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থাও করেছেন। তা ছাড়া বস্তি এলাকায় থাকলেও তার বাসস্থানের চাহিদাও আপাত দৃষ্টিতে পূরণ হচ্ছে। তবে এখানে লক্ষণীয় হচ্ছে, তিনি অপর তিনটি চাহিদা অর্থাৎ বস্ত্র, চিকিৎসা ও বিনোদনের ব্যবস্থা কার্যত করতে পারছেন না। এর প্রধান কারণ হলো দারিদ্র্য। জাহিদ হাসান পরিবারের যে তিনটি চাহিদা পূরণ করতে পারছেন সেগুলোও তেমন মানসম্পন্ন নয়। অর্থাৎ এই চাহিদাগুলোও তার পরিবারে কোনো রকমে পূরণ হচ্ছে। ভালো খাবার বা থাকার স্থান তাদের নেই। জাহিদ হাসান ভবিষ্যতে সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার ব্যয় কতটুকু বহন করতে পারবেন তাও প্রশ্ন সাপেক্ষ। পরিশেষে বলা যায়, জাহিদ হাসানের পরিবারে তিনটি চাহিদা পূরণ হচ্ছে যা যথার্থ নয়। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়