আগ্রা দুর্গ বা আগ্রার লালকেলস্না ভারতীয় উপমহাদেশের শাসক মোঘল রাজবংশের রাজকীয় আবাসস্থল এবং মোগল স্থাপত্যের এক অনবদ্য নির্দশন। কেলস্নাটি ১৯৮২ সালে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের অন্তর্ভুক্ত হয়। দুর্গটি ভারতের একটি রাজ্য উত্তর প্রদেশের আগ্রার যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। মোগল স্থাপত্যের অন্যতম নির্দশন তাজমহল আগ্রা কেলস্না থেকে মাত্র ২.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
আগ্রা দুর্গ রাঙা বেলেপাথরের তৈরি। দুর্গের প্রাঙ্গণের আয়তন ২.৫ কি.মি.। দুর্গটির অভ্যন্তরে অনেক প্রাসাদ, মিনার এবং মসজিদ আছে। এসব ষোড়শ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের মধ্যবর্তী সময়ে নির্মিত হয়। ১১ শতকে নির্মিত একটি প্রাচীন দুর্গের সম্প্রসারণ হিসেবে এর নির্মাণ ষোড়শ শতাব্দীতে আকবরের রাজত্বকালে আরম্ভ হয় এবং অষ্টাদশ শতাব্দীতে আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে শেষ হয়। জাহাঙ্গীর এবং শাহজাহানের রাজত্বকালে দুর্গের বহু নতুন স্থাপনা নির্মিত হয়েছিল।
বর্তমান দুর্গটির অধিকাংশই মোঘল আমলে নির্মিত হলেও সেখানে ১১ শতকে নির্মিত একটি প্রাচীন দুর্গের অবস্থান ছিল। ১৪৭৫ সালে আগ্রা ফোর্ট ছিল রাজা বাদল সিং এর অধীনে ইস্টক নির্মিত একটি সামরিক দুর্গ। যার নাম ছিল বাদলগড়। ইতিহাসে ১০৮০ সালে সর্বপ্রথম এর উলেস্নখ পাওয়া যায়। এ সময়ে গজনভীর সামরিক বাহিনী এই দুর্গ দখল করে। সুলতান সিকান্দার লোদি (১৪৮৮-১৫১৭) সালে দিলিস্ন থেকে তার রাজধানী আগ্রায় স্থানান্তর করেন। এরপর থেকে আগ্রা দ্বিতীয় রাজধানীর পেয়েছিল এবং সুলতানি আমলে আগ্রা থেকেই রাজকীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হতো। তার পুত্র সিকান্দার লোদি ১৫১৭ সালে পানিপথের যুদ্ধে সম্রাট বাবরের নিকট পরাজিত ও নিহত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এখানে অবস্থান করেন। সিকান্দার লোদি এই কেলস্নার বেশ কিছু ইমারত ও ইদারা নির্মাণ করেছিলেন।
১৫২৬ সালে দিলিস্ন জয়ের পর সম্রাট বাবর আগ্রা দুর্গে অবস্থান করেন। তিনি এখানে একটি বাউলি (সিঁড়ি যুক্ত ইদারা) নির্মাণ করেন। ১৫৩০ সালে এই দুর্গে সম্রাট হুমায়ুনের রাজ্যাভিষেক হয়। ১৫৪০ সালে হুমায়ুন বিলগ্রামে শের শাহরে কাছে পরাজিত হন। ১৫৫৫ সাল পর্যন্ত এই দুর্গ শের শাহের দখলে থাকে। এরপর হুমায়ন আগ্রা দুর্গ পুনরুদ্ধার করেন।
১৫৫৮ সালে সম্রাট আকবর আগ্রায় রাজধানী স্থানান্তর করেন। সম্রাট আকবর রাজস্থানের আরাউলি থেকে সংগ্রহীত বেলেপাথর দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গটির সংস্কার সাধন করেন। দুর্গের ভেতরের অংশে ইটের গাঁথুনি আর বাইরের অংশে আছে বেলেপাথরের আস্তরন। প্রায় চার হাজার কর্মী আট বছর প্রতিদিন পরিশ্রম করে ১৫৭৩ সালে আগ্রা দুর্গের নির্মাণকাজ সমাপ্ত করে।
সম্রাট আকবরের পৌত্র সম্রাট শাহজাহানের আমলে আগ্রা দুর্গ তার বর্তমান রূপ লাভ করে। শাহাজাহান লাল বেলেপাথরের নির্মিত ইামারতের চেয়ে শ্বেত পাথর দ্বারা নির্মিত ভবন অধিকতর পছন্দ করতেন।
এরপর বিভিন্ন সময়ে মারাঠা ও তাদের শত্রম্নরা আগ্রা দুর্গের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। ১৭৬১ সালে আহমেদ শাহ আবদালি পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মারাঠাদের পরাজিত করলে পরবর্তী এক দশক মারাঠারা এই দুর্গ দখলের কোন চেষ্টা করতে পারেনি।পরে এই দুর্গ ব্রিটিশরা দখল করে নেয়।
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে এই দুর্গে দেশীয় সিপাহী ও ইংরেজ সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
৮০,০০০ বর্গমিটার (৯৪ একর) দুর্গটির একটি অর্ধবৃত্তাকার পরিকল্পনা রয়েছে, এর জ্যা যমুনা নদীর সমান্তরালে অবস্থিত এবং এর দেয়ালগুলো সত্তর ফুট উঁচু। দ্বৈত প্রাচীরের ব্যবধানে বৃহৎ বৃত্তাকার বুরুজ রয়েছে, ব্যাটেলমেন্ট, এমব্র্যাসার, ম্যাকিকোলেশন এবং স্ট্রিং কোর্স সহ?এর চারদিকে চারটি দরজা দেওয়া হয়েছিল, একটি খিজরি গেট নদীর দিকে খোলা। দুর্গের দুটি ফটক উলেস্নখযোগ্য :'দিলিস্ন গেট' এবং 'লাহোর গেট'। লাহোর গেট 'অমর সিং গেট' নামেও পরিচিত অমর সিং রাঠোর এর জন্য মনুমেন্টাল দিলিস্ন গেট, যা পশ্চিম দিকে শহরের মুখোমুখি দুর্গের পাশে, চারটি দরজার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আকবরের সময়ের এক অনন্য নির্দশন। এটি প্রায় ১৫৬৮ সালে নির্মিত হয়েছিল নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং রাজার আনুষ্ঠানিক গেট হিসেবে? এটি জটিল ইনলে কাজ দ্বারা অলঙ্কৃত করা হয় সাদা মার্বেলে। পরিখা অতিক্রম করার জন্য একটি কাঠের ড্রব্রিজ ব্যবহার করা হয়েছিল এবং মূল ভূখন্ড থেকে গেটে পৌঁছানোর জন্য; ভেতরে, একটি ভেতরের গেটওয়ে হাতি পোল ('এলিফ্যান্ট গেট') নামে ডাকা হয়- দুটি জীবন-আকৃতির পাথরের হাতি দ্বারা সুরক্ষিত তাদের আরোহীদের সাথে- এর আরেকটি স্তর যোগ করেছে নিরাপত্তার? ড্রব্রিজ, সামান্য আরোহণ এবং ৯০-ডিগ্রি বাঁক বাইরের এবং ভেতরের দরজাগুলোর মধ্যে প্রবেশদ্বার তৈরি করে?দুর্ভেদ্য একটি অবরোধের সময়, আক্রমণকারীরা হাতি নিয়োগ করবে একটি দুর্গ এর গেট চূর্ণ করার জন্য? একটি স্তর ছাড়া, সরাসরি রান আপ গতির জন্য, যে এই বিন্যাস দ্বারা প্রতিরোধ করা হতো?
স্থাপত্য ইতিহাসের দিক থেকে সাইটটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।