ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

মোচ্ছা. রুবিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক, দখিনা রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বাগাইছড়ি, রাঙামাটি
৩য় অধ্যায় :১ম পরিচ্ছেদ \হ পলাশের নানা ও নানি একইদিনে মারা যান। নানার কঠিন অসুখ হয়েছিল এবং ওই অসুখে তিনি কয়েক বছর ভুগছিলেন। নানা মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর পলাশের নানির হার্ট-অ্যাটাক হয়। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল; কিন্তু বাঁচানো যায়নি। তার পর থেকে বেশ কয়েকদিন পলাশের মন খুব খারাপ ছিল; তাই তখন সে কারও সাথে কথা বলত না। পলাশ একসময়ে বুঝতে পারে, মানুষের বার্ধক্য আর মৃতু্যকে ঠেকানো যায় না। তবু প্রতিটি মৃতু্য মানুষকে কষ্ট দেয়। পলাশদের বাড়িতে যখন নানা বা নানি বেড়াতে আসতেন, তখন পলাশের খুব ভালো লাগত। কারণ তারা পলাশকে খুব আদর করতেন। তাছাড়া তারা পলাশের সঙ্গে অনেক মজার মজার গল্পও করতেন। উপরের অনুচ্ছেদ থেকে এমন শব্দ খুঁজে বের করো যেগুলো শব্দ বা বাক্যকে যুক্ত করেছে। বের করা শব্দগুলো লেখো : (মূল বইয়ের ৩৪ নম্বর পৃষ্ঠা) উত্তর : ও, এবং, কিন্তু, বা, তখন, তাছাড়া, তবু, কারণ। প্রশ্ন : যোজক শব্দ কাকে বলে? উত্তর : যেসব শব্দ একটি বাক্যের সঙ্গে অন্য একটি বাক্যের বা বাক্যের অন্তর্গত একটি পদের সঙ্গে অন্য পদের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায় তাকে যোজক বলে। যোজকের কাজ হলো একাধিক শব্দ, পদবন্ধ, বাক্যকল্প বা বাক্যকে জুড়ে দেওয়া বা সম্পর্কিত করা। যেমন- এতগুলো বই আর খাতা ওই ব্যাগে ধরবে? গস্নাসটা ভালো করে ধরো, নইলে ভেঙে যাবে। প্রশ্ন : যোজক কত প্রকার ও কী কী? উত্তর : অর্থ এবং সংযোজনের বৈশিষ্ট্য ও ধরনের উপর ভিত্তি করে যোজক শব্দকে ৫ ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো নিচে আলোচনা করা হলো- ১. সাধারণ যোজক : যে যোজক দ্বারা একাধিক শব্দ, বাক্য বা বাক্যাংশকে সংযুক্ত করা হয় তাকে সাধারণ যোজক বলা হয়। যেমন- আমি ও আমার বড় ভাই বাজারে এসেছি। ২. বৈকল্পিক যোজক : যে যোজকের মাধ্যমে একাধিক শব্দ, বাক্য বা বাক্যাংশের মধ্যে বিকল্প কিছু বোঝায় তাকে বৈকল্পিক যোজক বলে। যেমন- তুমি কিংবা তোমার ভাই যে কেউ এলেই হবে। ৩. বিরোধমূলক যোজক : এ ধরনের যোজকগুলো দুটি বাক্যের সংযোগ ঘটিয়ে দ্বিতীয়টির মাধ্যমে প্রথমটির বিরোধ নির্দেশ করে থাকে। যেমন- আমি চিঠি দিয়েছি কিন্তু তুমি উত্তর দাওনি। ৪. কারণবাচক যোজক : কারণবাচক যোজক এমন দুটি বাক্যের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে যার একটি অন্যটির কারণ। যেমন- আমি যাইনি, কারণ তুমি নিমন্ত্রণ করনি। ৫. সাপেক্ষ যোজক : পরস্পর নির্ভরশীল যে যোজক শব্দগুলো একে অন্যের পরিপূরক হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তাদের সাপেক্ষ যোজক বলে। যেমন- যদি টাকা দাও তবে কাজ হবে। পাঠ থেকে যোজক খুঁজি 'চিঠি বিলি' ছড়া ও 'সুখী মানুষ' নাটক থেকে যোজক শব্দ খুঁজে বের করে তার একটি তালিকা তৈরি করো : (মূল বইয়ের ৩৫ নম্বর পৃষ্ঠা) \হযোজক শব্দ 'চিঠি বিলি' থেকে পাওয়া : আর। 'সুখী মানুষ' থেকে পাওয়া : আর, এবং, তাই, তাহলে, যত, তত, ও, যদি। অনুচ্ছেদ লিখে যোজক খুঁজি কোনো একটি বিষয় নিয়ে ১০০ শব্দের মধ্যে একটি অনুচ্ছেদ লেখো। লেখা হয়ে গেলে যোজক শব্দগুলোর নিচে দাগ দাও : (মূল বইয়ের ৩৫ নম্বর পৃষ্ঠা) আমার বোন এবং আমি সেদিন স্কুল থেকে ফিরছিলাম। পথিমধ্যে হঠাৎ মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। কিন্তু আমাদের কাছে তখনও কোনো ছাতাই ছিল না। কারণ বাসা থেকে স্কুলে আসার সময়ে আমরা বুঝতে পারিনি যে, আজ বৃষ্টি হবে। তখন আমাদের দুজনের কাছে দুটি উপায় ছিল। রাস্তার পাশে দোকানের ছাউনিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা, অথবা ভিজে ভিজে বাসায় ফেরা। তখন আমার বোন বলল যে, সে ভিজেই বাসায় ফিরতে চায়। কারণ সে বৃষ্টিতে ভিজতে অনেক পছন্দ করে। কিন্তু আমি তাকে বাধা দিলাম। কারণ বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে, আর পথঘাট পিচ্ছিল থাকায় আঁছাড় খেয়ে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। সুতরাং আমরা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। যতিও এতে আমার বোনের মন খুব খারাপ হয়ে যায়। কিছুটা সময় পর বৃষ্টি থেমে যায়, আর আমরা নির্বিঘ্নে বাড়িতে ফিরি। ২য় পরিচ্ছেদ ভাষা ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য মনের ভাব প্রকাশ করা। মনের ভাব প্রকাশ করতে মানুষ শব্দ ও শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে। এগুলোর অর্থই মূলত বক্তা ও শ্রোতার মধ্যে সংযোগ ঘটায়। ভাষার স্বাভাবিক বিবর্তন প্রক্রিয়ায় শব্দের অর্থ কখনো মুখ্য হয়, কখনো গৌণ হয়, কখনো প্রসারিত হয়, কখনো সংকুচিত হয়, কখনো অর্থের উন্নতি ঘটে, কখনো অবনতি ঘটে। আবার শব্দ কখনো কখনো সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ গ্রহণ করে। শব্দের একাধিক অর্থ হতে পারে ধরে নিয়েই প্রাচ্য কি পাশ্চাত্য উভয় বাগার্থশাস্ত্রে শব্দের আরেক ধরনের অর্থ বা বৃত্তি স্বীকৃত হয়েছে। ভারতীয় শব্দশাস্ত্রে সেটির নাম লক্ষণা। এই লক্ষণা অবশ্যই একটি গৌণ অর্থ, যেমন, কাউকে অবজ্ঞা করে বলা 'তুমি একটা 'গোরু' বা 'গাধার মতো কথা বোলো না।' এই দুটি বাক্যে 'গোরু' বা 'গাধা'র মূল অর্থ রক্ষিত হয়নি, বরং একটি 'লক্ষিত' বা 'অভিপ্রেত' অর্থ শব্দ দুটিতে বক্তার ইচ্ছায় আরোপিত হয়েছে। লক্ষণার ধর্মই হলো উপলক্ষ অনুযায়ী মূল অর্থ বা অভিধাকে আড়াল করে নিজেকে সামনে নিয়ে আসা। এতে অভিধার বাইরে একটি গৌণ অর্থ এসে অভিধাকে স্থানচু্যত করছে। একটি শব্দের নানা রকম অর্থ থাকতে পারে। বাক্যে প্রয়োগের ওপর ... হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়