৬ষ্ঠ অধ্যায় :২য় পরিচ্ছেদ
'নোলক' কবিতাটি পড়ে কী বুঝতে পারলে তা নিচে লেখো। (মূল বইয়ের ১৩১ নম্বর পৃষ্ঠা)
'নোলক' কবিতায় কবি আল মাহমাদ 'নোলক' শব্দটিকে রূপক অর্থে ব্যবহার করেছেন। নোলক আবহমান বাঙালি মায়েদের নাকের অলংকার হলেও এটি শুধু তার অর্থগত আর সৌন্দর্যের কারণেই গুরুত্বপূর্ণ না, গুরুত্বপূর্ণ আরো বড় কারণে। কবি এখানে আক্ষরিক অর্থের নোলক খোঁজেনি, খুঁজেছেন এর ঐতিহ্য এবং ঐশ্বর্যকে। একটা সময়ে বাংলাদেশের নদীভরা মাছের সমাহার ছিল।
আর আজ সেই নদীতে মাছ তো নেই-ই বরং নদীগুলোই বিলুপ্তির পথে। বাংলার অপরূপ বন-অরণ্য এখন আর চোখে পড়ে না। চারদিকে কৃত্রিমতা ছড়িয়ে গেছে। খেত ভরা ফসল নেই, গোলা ভরা ধান নেই। একটা সময় এই বাংলাদেশের চারদিক ছিল ঐশ্বর্য্য আর সমৃদ্ধি। মানুষ মাছভাত খেয়ে জীবন ধারণ করত, সুখে ছিল। কিন্তু এখন চারদিক পাহাড়ের মতো শূন্যতা বিরাজ করছে। কবি তার মায়ের নোলক খোঁজার মধ্য দিয়ে মূলত বাংলাদেশের এই হারানো ঐশ্বর্য্যকেই খুঁজতে চেয়েছেন।
জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজি
'নোলক' কবিতাটির সাথে তোমার জীবনের বা চারপাশের কোনো মিল খুঁজে পাও কি না, কিংবা কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও কি না, তা নিচে লেখো। (মূল বইয়ের ১৩২ নম্বর পৃষ্ঠা)
'নোলক' কবিতার সাথে আমাদের চারপাশের অনেক মিল পাই যা এখন হারিয়ে যাচ্ছে বা আগের মতো এখন আর দেখা যাচ্ছে না। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির অনেক কথা জানি, যেগুলো এক সময়ে খুব গুরুত্বের সাথে মানুষের জীবনের সাথে মিশে ছিল; কিন্তু এখন আর সেভাবে দেখা যায় না। যেমন- মাটি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র, হাড়ি, কলস, বাসন বা পুতুলসহ অনেকরকম পণ্যসামগ্রী।
এগুলো যদিও এখন কিছু সৌখিন মানুষ ব্যবহার করে, কিন্তু সমাজের সকল মানুষ এসব ঐতিহ্যপূর্ণ উপকরণ এখন আর ব্যবহার করছে না। আমাদের প্রকৃতিতে বিভিন্ন গাছ-গাছালির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। বন উজার করা হচ্ছে। বসবাসের জায়গার অভাব এবং শিকারের ফলে অনেক পাখি আজ বিলুপ্ত প্রায়। চাষযোগ্য জমিতে বাড়িঘর নির্মাণ হচ্ছে।
নাগরিক জীবনে খেলার মাঠ কমে যাচ্ছে। উন্মুক্ত খোলামাঠ নেই। ফলে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়াগারও আজ বড়ই অভাব। একসময়ে দূরবর্তী যোগাযোগের জন্য চিঠির অনেক কদর ছিল। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই চিঠি এখন আর কেউ ব্যবহার করে না। সুতরাং আমাদের অতীত জীবনে হারিয়ে যাওয়া অনেক ঐতিহ্যই আজ বিলুপ্ত প্রায়। যা নোলক কবিতায় কবি রূপক অর্থে আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন।
কবিতা লেখা যায় যেকোনো বিষয় নিয়ে। এই বিষয় হতে পারে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু, কোনো ঘটনা বা কাহিনী। কবিতার মধ্য দিয়ে মনের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ পায়। নিচের ফাঁকা জায়গায় তুমি নিজে বানিয়ে বানিয়ে একটি কবিতা লেখো। লেখার সময় কবিতার বৈশিষ্ট্যগুলো খেয়াল রেখো। কবিতার একটি নাম দাও। (মূল বইয়ের ১৩৫ নম্বর পৃষ্ঠা)
তোমার লেখা কবিতায় নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো আছে কি না, যাচাই করে দেখো। (মূল বইয়ের ১৩৫ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. লাইনের শেষে মিল-শব্দ আছে কি না। হঁ্যা।
২. তালে তালে পড়া যায় কি না। হঁ্যা।
৩. লাইনগুলো নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যে কি না। না।
৪. এর ভাষা গদ্যের ভাষার চেয়ে আলাদা কি না। হঁ্যা।
৫. শব্দের চেহারায় কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না। হঁ্যা।
তৃতীয় অধ্যায় : তৃতীয় পরিচ্ছেদ
শব্দের অর্থ
সাধারণভাবে শব্দের একটি মূল অর্থ থাকে। একে বলা হয় মুখ্য অর্থ। যেমন- 'কাটা' শব্দ দিয়ে মূলত বোঝায় কোনো কিছু কেটে ফেলা। এখানে কেটে ফেলা হলো 'কাটা' শব্দের মুখ্য অর্থ মুখ্য অর্থের বাইরেও একটি শব্দের একাধিক গৌণ অর্থ থাকতে পারে। যেমন- 'মেঘ কেটে গেছে' বাক্যে 'কাটা শব্দের অর্থ 'সরে যাওয়া'। আবার, 'টিকিট কাটতে হবে' বাক্যে কাটা শব্দের অর্থ 'কেনা' কাটা শব্দের এই 'সরে যাওয়া' ও 'কেনা' অর্থগুলো গৌণ অর্থ।
একই শব্দের বিভিন্ন অর্থ (মুখ্য ও গৌণ)
নিচের শব্দগুলো ব্যবহার করে মুখ্য অর্থ এবং এক বা একাধিক অর্থ গৌণ অর্থের প্রয়োগ দেখাও : (মূল বইয়ের ৪২ নম্বর পৃষ্ঠা)
পাকা
মুখ্য অর্থ
পক্ক, পরিণত- গাছে আম পেকেছে।
গৌণ অর্থ
১. দক্ষ -সে অংকে খুব পাকা।
২. খাঁটি -সে পাকা সোনার গয়না পরে।
ধরা
মুখ্য অর্থ
ধারণ করা- মীনা তার মায়ের হাত ধরে আছে।
গৌণ অর্থ
১. পৃথিবী- রাজুর মতো ভাল লোক এ ধরায় খুব কম আছে।
২. আটক- চোরটি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।
কথা
মুখ্য অর্থ
ভাষা, বচন- ছোট্ট মীনা কথা বলতে শিখছে।
গৌণ অর্থ
১ প্রতিশ্রম্নতি-আমি কথা দিচ্ছি, তোমার বিপদে পাশে থাকব।
২. স্মৃতি- আমার কথা ভুলে যেও না।
বড়ো
মুখ্য অর্থ
বিশাল, বিরাট- আমাদের বাসার পাশে বড় একটি তালগাছ আছে।
গৌণ অর্থ
১. বয়স- মীনা রাজুর চেয়ে অনেক বড়।
২. দীর্ঘ- বাংলাদেশে অনেক বড় বড় নদী রয়েছে।
মুখ
মুখ্য অর্থ
কথা বলার প্রত্যঙ্গ- তোমার মুখ বন্ধ কর।
গৌণ অর্থ
১. সম্মান- মীনা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে বংশের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
২. চেহারা- ছোট্ট মেয়েটির মুখ বাবার খুব মনে পড়ছে।
পাগল
মুখ্য অর্থ
মানসিক ভারসাম্যহীনতা- সে পাগল হয়ে গেছে।
গৌণ অর্থ
১. অস্থির- প্রচন্ড গরমে সবাই পাগল প্রায়।
২. আদুরে আমরা পাগল ছেলেটা!
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়