সপ্তম শ্রেণির বাংলা
প্রকাশ | ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
মোচ্ছা. রুবিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষক, দখিনা রূপকারী উচ্চ বিদ্যালয়, বাগাইছড়ি, রাঙামাটি
(কত কাল ধরে-আনিসুজ্জামান)
এই পরিচ্ছেদের শব্দের অর্থ
গর্দান যাওয়া : মাথা কাটা।
ঘোড়াচুড় : এক ধরনের খোপার নাম।
ডুলি : ছোট পালকি।
তাগা : বাহুতে পরার অলংকার।
তারঞ্জ : কানে পরার অলংকার।
তিলপল্পব : তিলগাছের কচি পাতা।
নিরানন্দ : আনন্দহীন।
পদ্মবৃন্ত : পদ্ম ফুলের বৌটা।
বদৌলতে : কারণে।
মাকড়ি : একপ্রকার দুল।
লোক-লঙ্কর : সশস্ত্র লোক ও তাদের সহযোগী।
শীর্ণ : রোগা।
সামন্ত : জমিদার।
সুবর্ণকুল : সোনার দুল।
স্বানসিদ্ধ কেশ : ধোয়া চুল।
বলি ও লিখি
প্রশ্ন : 'কত কাল ধরে' রচনায় লেখক যা বলেছেন, তা নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো। (মূল বইয়ের ৯৯ নম্বর পৃষ্ঠা)
উত্তর :
ইতিহাস বলতে শুধু রাজা-বাদশাদের কথা বোঝায় না, সব মানুষের কথা বুঝায়। এই রচনায় বাঙালির গত আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসের কথা বলা হয়েছে। রাজা-মন্ত্রী-সামন্ত-সৈন্য সকল মানুষের জীবনের কথা। কীভাবে এ দেশের মানুষ দেশ চালাত, কাজ করত, ঘর বাঁধত, কাপড় পরত, খাওয়া-দাওয়া করত-এই সকল কথা।
লেখকের বর্ণনা মতে, হাজার বছর আগে এ দেশের পুরুষরা ধুতি পরত, মেয়েরা শাড়ি পরত। শুধু যোদ্ধারা জুতো ব্যবহার করত, সাধারণ লোকের তা সামর্থের বাইরে ছিল। তবে তারা পায়ে খড়ম পরত। এছাড়া সাজ-সজ্জার দিকে ঝোক ছিল বাঙালির। নারী ও পুরুষরা নানা বাহারের চুল রাখত।
মেয়েরা নানা রকম প্রসাধনী ব্যবহার করত। নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও অলংকার ব্যবহারে চল ছিল। তবে ধনী-গরিবের অলংকারে পার্থক্য ছিল। ভাত ছিল বাঙালির প্রিয় খাবার; নানা রকম তরকারি দিয়ে প্রতিদিন অন্নভোজন হতো! ভাত আর মাছ ছিল প্রিয় খাবার। শুঁটকির চলও সেকালে ছিল। ছাগল, হরিণ ও পাখির মাংসও সবাই খেত! ফল-ফলাদির মধ্যে আম-কাঁঠাল, তাল-নারকেল ইত্যাদি ছিল প্রিয়।
সেকালের মানুষ মাটির পাত্রে রান্না করত। পুরুষরা শিকারপ্রিয় ছিল। নারী ও পুরুষের মধ্যে নানা রকম খেলাধুলার চল ছিল। ধনী ও গরিবের খেলাধুলা ও শখের কাজে পার্থক্য ছিল। গানবাজনার জন্য নানা রকম বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার ছিল। সেকালে যাতায়াতের প্রধান বাহন ছিল নৌকা। ধনী লোকের জন্য ছিল হাতি ও ঘোড়ার গাড়ি আর সাধারণ লোকের জন্য গরুর গাড়ি। পালকির ব্যবহার সেকালে ছিল।
ধনী লোকের বাড়ি-ঘর ইট-কাঠের হলেও বেশির ভাগের বাড়িই ছিল কাঠ-খড়-সাটি-বাঁশের। এভাবে সেকালে মানুষে মানুষে পার্থক্য ছিল সমাজের সকল ক্ষেত্রে। কবিদের বর্ণনাতেও সে পার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু সে যুগ আর নেই : অর্থাৎ রাজা-বাদশার দিন শেষ হয়ে গেছে তবু মানুষের মধ্যে সে পার্থক্য রয়ে গেছে। একদিকে সমৃদ্ধির, আরেকদিকে দারিদ্র্যের।
লেখা নিয়ে মতামত
'কত কাল ধরে' রচনায় যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো।
'কত কাল ধরে' রচনায় যা আছে :
১. নানা রকম সূক্ষ্ম পাটের ও সুতোর কাপড়ের চল ছিল।
২. মেয়েরা তো বটেই, ছেলেরাও সে যুগে অলংকার ব্যবহার করত।
আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা :
১. আজ থেকে হাজার বছর পূর্বে তো কোন উন্নত প্রযুক্তি ছিল না। তবে তখন কীভাবে সূক্ষম পাটের ও সুতোর কাপড় তৈরি হত? এ বিষয়ে আমার জানার প্রবল আগ্রহ রয়েছে।
২. ছেলেরা সাধারণত অলংকার পরে না। তাহলে তখন ছেলেরা কেন অলংকার ব্যবহার করত? এ বিষয়ে মনে কৌতুহল জাগছে।
তথ্য বিশ্লেষণ
'কত কাল ধরে? লেখাটির প্রায় পুরো অংশে লেখক এ অঞ্চলের প্রাচীন যুগের সংস্কৃতির পরিচয় দিয়েছেন। নারী ও পুরুষ কোন ধরনের পোশাক ও অলংকার পরত, এখানকার মানুষ কোন ধরনের খাবার খেতো, তাদের পছন্দ-অপছন্দের বিষয় কী ছিল, এগুলোর বিবরণ লেখক দিয়েছেন। এই বিবরণ দিতে গিয়ে লেখককে বিভিন্ন ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ করতে হয়েছে।
উপাত্ত বিশ্লেষণ
ছক বা সারণিতে যেসব সংখ্যা বা বিষয় থাকে, সেগুলোকে বলে উপান্ত। উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্য পাওয়া যায়। নিচের ছকে কিছু উপাত্ত আছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীর ভয়াবহ অত্যাচারে বিপুল সংখ্যক মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। আশ্রয় নেওয়া মানুষকে শরণারী বলে। তাদের জন্য বহু সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছিল। এই ছকে উপাত্ত হিসেবে আশ্রয়কেন্দ্র ও শরণার্থীর সংখ্যা তুলে ধরা হয়েছে।
উপাত্ত বিশ্লেষণ
ছকের (মূল বইয়ের ১০১ নম্বর পৃষ্ঠায়) উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আরো কয়েকটি বাক্য রচনা করো :
১. ছকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের ৭টি ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে কতগুলো শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র ছিল এবং কেন্দ্রগুলোতে শরণার্থীর সংখ্যা কত ছিল তা উলেস্নখ করা হয়েছে।
২. সবচেয়ে বেশি আশ্রয়কেন্দ্র ছিল পশ্চিমবঙ্গে এবং সংখ্যাটি হলো ৪৯২।
৩. সবচেয়ে বেশি শরণার্থী ছিল পশ্চিমবঙ্গে।
৪. সবচেয়ে কম আশ্রয়কেন্দ্র ছিল উত্তর প্রদেশে এবং সংখ্যাটি হলো ১।
৫. সবচেয়ে কম শরণার্থী ছিল উত্তর প্রদেশে।
৬. পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা সম্মিলিতভাবে বাকি ছয়টি প্রদেশে এর চেয়ে বেশি।
৭. আসামে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বিহারের ৩ গুণেরও বেশি ছিল।
৮. আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বিবেচনায় সবচেয়ে কম শরণার্থী ছিল বিহার প্রদেশে।
৯. ত্রিপুরা রাজ্যে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের অর্ধেকের বেশি হলেও শরণার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ ভাগের ১ ভাগ।
১০. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিভিন্ন প্রদেশে শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে ভারত বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে উদাহরণ স্থাপন করেছে।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়