পঞ্চম অধ্যায়- বুঝে পড়ি লিখতে শিখি,
পঞ্চম পরিচ্ছেদ- কল্পনানির্ভর লেখা
৪. রঞ্জুকে বকতে বকতে আম্মা তার বারোটা বাজিয়ে ছাড়লেন-
এমন এমন কথা বললেন যে রঞ্জুন মনে হতে লাগল যে, বেঁচে
থাকার বুঝি কোনো অর্থই হয় না।
আহা ! বেচারা রঞ্জু। কিন্তু কোনো কারণ নেই, কি নেই হঠাৎ সে হোঁচট খেল কেন? বিষয়টা ভাবতে হবে।
কল্পনানির্ভর রচনা লিখি
এবার তুমি একটি কল্পনানির্ভর গল্প লেখো। লেখাটি তুমি বানিয়ে লিখতে পারো, কিংবা সেটি তোমার আগে থেকে পড়া বা কারো কাছ থেকে শোনা গল্পও হতে পারে। লেখার শুরুতে একটি শিরোনাম দাও। (মূল বইয়ের ১১৪ নম্বর পৃষ্ঠা)
রাজকুমারী ও ব্যাঙ
রাজকুমারী সোনা দিয়ে বানানো একটা বল নিয়ে খেলতে খুব পছন্দ করতো। যেখানেই যেত সেটা সে সঙ্গে করে নিয়ে যেত। একদিন পুকুরে গোসলের সময় বলটা মাটি থেকে গড়িয়ে পানিতে পড়ে যায়। রাজকুমারীর সে কি কান্না! তার অবস্থা দেখে পদ্মপাতায় বসে থাকা একটি ব্যাঙ এসে তাকে শান্ত করার জন্য কথা দিলো যে, সে ওই বলটি তার জন্য খুঁজে নিয়ে আসবে। কিন্তু ব্যাঙ একটি শর্ত রাখল। বলল, সে ওই বলটি যদি খুঁজে আনতে পারে তাহলে তাকে প্রসাদে থাকতে দিতে হবে। সে রাজকুমারীর সঙ্গে খাবে এবং ঘুমাবে! রাজকুমারী ব্যাঙের শর্তে রাজি হয়ে গেল। ব্যাঙ প্রায় সারা দিন ধরে ডুব-সাঁতার করে অনেক বড় আর গভীর পুকুর
তন্নতন্ন করে খুঁজে বের করল রাজকুমারীর সোনার বল এবং রাজকুমারী বল নিয়ে খুশি মনে প্রাসাদে ফিরে গেল। সে বেমালুম ভুলে গেল তার প্রতিজ্ঞা! এবং অনেকদিন ধরে ব্যাঙ প্রাসাদের বাইরে অপেক্ষা করতে লাগল, কখনও যদি আবার রাজকুমারীর দেখা পায়!
ওই দিন প্রকান্ড ঝড়ে চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে! অনেক বৃষ্টি আর ভয়ংকর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ব্যাঙ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখনই পুকুরের টলমল পানিতে সাঁতারের আকাঙ্ক্ষায় রাজকুমারী রওনা হলো সে দিকে। দেখল রাস্তায় ব্যাঙ পড়ে আছে। রাজকুমারীর মনে পড়ে গেল তার প্রতিজ্ঞার কথা! সে ব্যাঙকে নিয়ে গেল প্রাসাদে এবং অনেক সেবা করে ভালো করে তুলল। দুজন দুজনের খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেল। সেই বন্ধুত্বের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র এবং এক গোলাপী রঙের প্রজাপতি এসে ছুঁয়ে দিলো, ব্যাঙ হয়ে গেল
রাজকুমার! ওরা চিরদিন বন্ধু হয়ে রইলো।
রাজকুমার আসলে এক বন্ধুর প্রতি অবহেলা করেছিল, আর কথা দিয়ে কথা রাখেনি বলে রাজকুমার ব্যাঙ হয়ে জীবনযাপন করছিল।
কিন্তু রাজকুমারীর বন্ধুত্ব ওকে সকল অভিশাপ থেকে মুক্তি দিলো। আমাদের কত রকম ভুল হয়! কত প্রতিজ্ঞা রাখি না ! তাতে কি?
আমাদের ভুলগুলো ঠিক করে ফেলব। আর কোনো বন্ধুকে কথা দেবার আগে ভেবে নেবো! ভুল হয়ে গেলে তো সরি বলা যায়, তাই না!
পিরামিড
পড়ে কী বুঝলাম?
প্রশ্ন : লেখক এখানে কীসের বিবরণ দিয়েছেন?
উত্তর :লেখক এখানে পিরামিডগুলোর বিবরণ দিয়েছেন।
প্রশ্ন : পিরামিডগুলো কারা তৈরি করেছিলেন এবং কখন তৈরি করেছিলেন?
উত্তর : মিশরের ফারাওরা পিরামিডগুলো তৈরি করেছিলেন। ধারণা করা হয়, প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বছর পূর্বে এ পিরামিডগুলো তৈরি করা হয়েছিল।
প্রশ্ন : পিরামিডগুলো কেন তৈরি করা হয়েছিল?
উত্তর : অনন্ত জীবনের প্রত্যাশায় ফারাওরা পিরামিডগুলো তৈরি করেছিলেন। ফারাওদের বিশ্বাস ছিল মানুষের লাশ পচে গেলে তারা অনন্ত জীবনের অধিকারী হতে পারে না। তাই মৃতদেহকে 'মমি' বানিয়ে পিরামিডের ভেতরে রেখে দিলে অনন্ত জীবনের পথে আর বাধা থাকে না। কেননা শক্ত পিরামিডের ভেতরে ঢুকে কেউ 'মমি'কে ছুঁতেও পারবে না। তাই তারা পিরামিড তৈরি করেন।
প্রশ্ন : পিরামিডগুলো কীভাবে তৈরি হয়েছিল?
উত্তর : পিরামিডগুলো পাথরের তৈরি। পাথর কেটে পাথরের টুকরোর ওপর পাথরের টুকরো বসিয়ে পিরামিডগুলো তৈরি করা হয়েছিল।
প্রশ্ন : পিরামিড একটি পূরাকীর্তি। বাংলাদেশের যেকোন একটি পুরাকীর্তির সাথে এর মিল-অমিল খুঁজে বের করো।
উত্তর : বাংলাদেশের বিখ্যাত একটি পুরাকীর্তি হচ্ছে পাহাড়পুরের সোমপুর বিহার। পিরামিডের মতো এটিও প্রাচীন স্থাপনা। তবে পিরামিডের প্রাচীনত্বের চেয়ে এর প্রাচীনত্ব কম। পিরামিড যেমন ফারাও রাজারা তৈরি করেছেন, সোমপুর বিহারও পাল রাজাদের কীর্তি। পিরামিড ত্রিকোণ-বিশিষ্ট, আর সোমপুর বিহারটি চতুষ্কোণ-বিশিষ্ট। পিরামিডের ভেতরে যেমন ছোটো ছোটো কুঠুরি রয়েছে, বিহারের ভেতরেও তাই। বিহারের দেয়ালে টেরাকোটা চিত্র থাকলেও, পিরামিডের দেয়ালে তেমন চিত্র নেই। তবে মিসরের পিরামিড ও সোমপুর বিহার দুটিই প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন।
বলি ও লিখি
প্রশ্ন : 'পিরামিড' রচনায় লেখক যা বলেছেন, তা তোমার নিজের ভাষায় বলো এবং লেখো। (মূল বইয়ের ৮৩ নম্বর পৃষ্ঠা)
পিরামিড পৃথিবীর একটি আশ্চর্য নিদর্শন এবং তা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন কীর্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। যুগ যুগ ধরে পিরামিডের ভেতর ও বাইরের রহস্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করছে মানুষ। অনেকে পিরামিডের ভেতরে ঢুকতে চেয়েছে সম্পদের লোভে, কিন্তু মিস্ত্রিরা এমন কৌশলে তা বানিয়েছিল যে সহজে কেউ যেন প্রবেশের রাস্তা না পায়। মিসরের ভেতরে বাইরে আর পিরামিড থাকলেও গিজে অঞ্চলের তিন পিরামিডই জগৎ-বিখ্যাত।
লেখক এগুলোর কথাই তুলে ধরেছেন। পিরামিড তিনটি যেসব রাজা নির্মাণ করেছেন তাদের নাম, নির্মাণের কাল এবং পিরামিডগুলোর উচ্চতা ও আকৃতির বর্ণনাও দিয়েছেন লেখক। এসব পিরামিড তৈরি হয়েছিল পাথর কেটে, পাথরের টুকরো দিয়ে। মোট লেগেছিল তেইশ লক্ষ টুকরো পাথর; এগুলো বানাতেও এক লক্ষ লোকের বিশ বহর সময় লেগেছিল; ব্যয় হয়েছিল প্রচুর অর্থের। পিরামিডগুলো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে মিসরের রাজারা তৈরি করেছিলেন। মূল লক্ষ্য ছিল অনন্ত জীবনের প্রত্যাশা।
ফারাওদের বিশ্বাস ছিল মানুষের লাশ পচে গেলে তারা অনন্ত জীবনের অধিকারী হতে পারে না। তাই মৃতদেহকে 'মমি' বানিয়ে পিরামিডের ভেতরে রেখে দিয়ে অনন্ত জীবনের পথে আর বাধা থাকে না। কেননা শক্ত পিরামিডের ভেতরে ঢুকে কেউ 'মমি'কে ছুঁতেও পারবে না। কিন্তু তাদের সেই আশা পূর্ণ হয়নি। কারণ এরমধ্যে মানুষ মমিকে স্পর্শ করতে পেরেছে এবং তা স্থানান্তরিত করে জাদুঘরে রেখেও দিয়েছে।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়