ষষ্ঠ অধ্যায়
সমস্যা যত বড়ই হোক-না কেন, তার সমাধান রয়েছে। কোনো কোনো সমস্যা নিজে নিজেই সমাধান করা যায়। আবার কোনো কোনো সমস্যা এমন রয়েছে যে, তা সমাধানের জন্য দলগত প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়।
দলগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনেক কঠিন কাজকেও সহজে সমাধান করা যায়। যেমন- পিঁপড়া অতি ক্ষুদ্র প্রাণী হলেও, তারা দলগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনেক বড় জিনিস বা খাদ্যবস্তু গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে।
তেমনি মানুষও যদি কোনো কঠিন কাজ বা অসাধ্য সমস্যাকে সমাধান করতে চায়, সেক্ষেত্রে দলগত বুদ্ধি ও প্রচেষ্টায় কাজটির সঠিক সমাধান সহজ হয়ে যাবে। এজন্য আমাদের প্রত্যেককেই দলগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে যেকোনো সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। কবির ভাষায় :
'মিলেমিশে সবার বুদ্ধি করি আদান-প্রদান
তাতেই হবে সব সমস্যার সহজ সমাধান।'
সমস্যা-১ : শিপ্রা সব বিষয়েই একটু খামখেয়ালি এবং উদাসীন। সে গত পরশু স্কুল থেকে বাসায় না ফিরে তার এক বান্ধবীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে চলে যায়। তার বাবা নেই, তবে আর্থিক অবস্থা মোটামুটি ভালো। মা তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে এ সময় অস্থির হয়ে উঠেন। শিপ্রা রাত ৯টায় বাড়ি ফিরে এলে মায়ের সঙ্গে অনেক কথাকাটাকাটি হয়। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে মা খেপে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, তিনি শিপ্রাকে আর স্কুলে যেতে দেবেন না। শিল্পাও খেপে দিয়ে বলে, সে আর কোনোদিন স্কুলে যাবে না। বান্ধবীদের সাথেও কোনো যোগাযোগ রাখবে না। (জীবন ও জীবিকা বই : পৃষ্ঠা ১০০)
প্রশ্ন : শিপ্রার বন্ধু হিসেবে আমরা কীভাবে তাকে সাহায্য করতে পারি?
উত্তর :
সম্ভাব্য উদ্যোগ : আগ্রহ নিয়ে উভয়ের কথা শোনা; পড়াশোনা বন্ধ করে দিলে তার প্রভাব কী হতে পারে নিয়ে আলোচনা করা; শিল্পায় আচরণ কীভাবে পরিবর্তন করা যায়, মা কীভাবে শিপ্রাকে সহযোগিতা করতে পারেন ইত্যাদি।
আমি সম্পা, শিপ্রার সাথে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। আমার আরও কয়েকজন বন্ধু আছে। সোনিয়া, তানিয়া, শিউলী, জলি, রুমা ও লক্ষমী। আমরা সাতজন খুব ভালো বন্ধু। হঠাৎ যখন আমরা শুনি শিল্পার বাসায় এ সমস্যার কথা তখন আমরা বাকি ছয়জন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিই শিপ্রার বাসায় যাব। বাসায় গিয়ে আমরা কীভাবে এ সমস্যার সমাধান করব তা আলোচনা করলাম। প্রথমেই শিপ্রার বাসায় গিয়ে শিপ্রা ও তার মায়ের কথা মনোযোগ সহকারে শুনব। কোন জায়গায় সমস্যা আগে খুঁজে বের করব।
তারপর শিপ্রার মাকে খুব ভালোভাবে বোঝাতে হবে যে পড়াশোনা বন্ধ করার ক্ষতিকর দিক কী হতে পারে। এ ব্যাপারে আমরা একজন সম্মানিত শিক্ষককে সঙ্গে নিতে পারি, যাকে শিপ্রার মা অনেক সম্মান করেন। কারণ ছোট বলে আমাদের কথা হয়তো এত গুরুত্ব দিবেন না। সুন্দরভাবে বোঝানোর পর আমরা শিপ্রার সঙ্গেও আলোচনা করব। তাকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে বলব। তাকেও শিক্ষা জীবনের গুরুত্ব ও শিক্ষা বন্ধ করে দিলে তার কী ক্ষতি হবে তা বোঝাব।
আমাদের সঙ্গে আমাদের সম্মানিত শিক্ষকও থাকবেন। যিনি শিপ্রার কিছু আচরণগত সমস্যার কথা তুলে কীভাবে পরিবর্তন হতে পারে তার পরামর্শ দিবেন। এ ব্যাপারে তার মাকেও আরও সচেতন হতে হবে। মায়ের কী দায়িত্ব এ বিষয়েও আমাদের সম্মানিত শিক্ষক বুঝিয়ে বলবেন। ভালোভাবে বোঝাতে পারলে শিপ্রার মা শিপ্রাকে আবার পড়াতে পাঠাবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা আমাদের বন্ধু শিপ্রাকে আবার আমাদের সাথে পাব।
সমস্যা-২ : সজীব খুব মেধাবী শিক্ষার্থী। কিন্তু আজকাল সে লেখাপড়ায় ভীষণ অমনোযোগী হয়ে উঠেছে। যতক্ষণ বাসায় থাকে শুধু টিভি দেখে, মোবাইল ফোন, টিভি অথবা কম্পিউটারে গেম খেলে। বাবা-মায়ের সঙ্গে একেবারেই কথা বলে না। বাসায় মেহমান এলে তাদের সঙ্গে কথা বলে না। সে খাবার খেয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করলেও প্রচন্ড রেগে যায়।
বাড়িতে ছোট বোনের সঙ্গেও অকারণে দুর্ব্যবহার করে। গোসল ও খাওয়ার কোনো নিয়ম মানছে না। সজীবের বাবা অনেকভাবেই তাকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। স্কুল থেকেও তার নামে আজকাল অভিযোগ আসছে। পাশেই স্বপনদের বাড়ি। স্বপন সজীবের সঙ্গে একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে। সজীবের মা প্রায়ই স্বপনদের বাড়িতে এসে সজীবের ব্যাপার নিয়ে অনেক দুঃখ প্রকাশ করেন। এবং কান্নাকাটি করেন। (জীবন ও জীবিকা বই : পৃষ্ঠা ১০১)
প্রশ্ন : প্রতিবেশী হিসেবে এই পরিস্থিতিতে কীভাবে আমরা সজীব ও তার পরিবারকে সহায়তা করতে পারি?
উত্তর : আমার নাম স্বপন। সজীবের প্রতিবেশী এবং বন্ধু। সজীব খুব মেধাবী ছাত্র হলেও ইদানীং সে একদমই অমনোযোগী। তাই তার মা এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। সজীবের সমস্যাটি একটি জটিল সমস্যা। তাই এ নিয়ে আমরা কয়েকজন বন্ধু হিমেল, জনি, রাজিব, রুবেল ও এমিলি। একত্র হই। এ ব্যাপারে ফলপ্রসূ কিছু আলোচনা করি।
আলোচনার মাধ্যমে আমরা ঠিক করলাম যে, আমরা প্রথমে সজীবের বাসায় যাব। এর বদলে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করব এবং তার কথা (সুখ, দুঃখ, হতাশা, অভিমান) মনোযোগ দিয়ে শুনব। পরে সজীবকে সুন্দর করে বুঝাবো সে যা করছে তা ওর ভবিষ্যতের জন্য খারাপ হবে। প্রয়োজনে আমাদের ক্লাসের সম্মানিত ইংরেজি শিক্ষক সুরজ স্যারকে সঙ্গে নিব। সুরুজ স্যার অত্যন্ত জ্ঞানী, হাসিখুশি, সুন্দর বাচনভঙ্গি ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন শিক্ষক।
সজীবসহ আমরা সবাই তাকে অত্যন্ত সম্মান করি। স্যারসহ আমরা সবাই মিলে সজীবকে বোঝালে সজীব অবশ্যই তা বুঝবে এবং আবার পড়ায় মনোযোগী হবে বলে আশা করি। এছাড়া গ্রামের কিছু মুরুব্বি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিকেও প্রয়োজনে আমাদের সাথে নিব। কারণ সবাই মিলে কথা বললে বিশেষ করে গ্রামের মুরুব্বি, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং শিক্ষকের কথা সজীব অবশ্যই শুনবে। আমরা আশা করি, সজীব আবার তার পড়াশোনায় মনোযোগী হবে এবং বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার কারণ দূর করবে।
সমস্যা ১ ও সমস্যা ২ এর জন্য নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের রিহার্সেল হিসেবে কয়েকটি কথোপকথনের দৃশ্য সাজাও।
দলে ভাগ হয়ে শিপ্রা ও সজীবের সঙ্গে কথোপকথনের কয়েকটি স্ক্রিপ্ট বানাও এবং তা ভূমিকাভিনয় করে দেখাও। (জীবন ও জীবিকা বই : পৃষ্ঠা ১০২)
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়