মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ময়নামতি

ইতিহাস ও ঐতিহ্য

  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ইতিহাস ও ঐতিহ্য

ময়নামতি কুমিলস্নায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক স্থান। ময়নামতির পূর্ব নাম রোহিতগিরি। লালমাই অঞ্চলের প্রাচীনতম সভ্যতার নিদর্শন হলো ময়নামতি প্রত্নস্থল। বর্তমানে ময়নামতি অঞ্চলে যে ধ্বংসস্তূপ দেখা যায় তা প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাচীন নগরী ও বৌদ্ধবিহারের অবশিষ্টাংশ। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে ইহা জয়কর্মান্ত বসাক নামক একটি প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ।

কুমিলস্নার ময়নামতিতে খননকৃত সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে শালবন বিহার অন্যতম। শালবন বৌদ্ধবিহার বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। কুমিলস্না জেলার লালমাই-ময়নামতি প্রত্নস্থলের অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনাগুলোর একটি এই বৌদ্ধবিহার। এটি ১২শ' প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।

কোটবাড়িতে বার্ডের কাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এ বিহারটির অবস্থান। বিহারটির আশপাশে এক সময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল বলে এ বিহারটির নামকরণ হয়েছিল শালবন বিহার। এর সন্নিহিত গ্রামটির নাম শালবনপুর। এখনো ছোট একটি বন আছে সেখানে। এ বিহারটি পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের মতো হলেও আকারে ছোট।

ধারণা করা হয় যে, খ্রিষ্টিয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধবিহারটি নির্মাণ করেন। শালবন বিহারের ছয়টি নির্মাণ ও পুনর্র্নির্মাণ পর্বের কথা জানা যায়। খ্রিষ্টিয় অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় মন্দিরটি নির্মাণ করা হয় ও বিহারটির সার্বিক সংস্কার হয় বলে অনুমান করা হয়। চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের নির্মাণ কাজ ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয় নবম-দশম শতাব্দীতে।

আকারে এটি চৌকো। শালবন বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারের চারদিকের দেয়াল পাঁচ মিটার পুরু। কক্ষগুলো বিহারের চারদিকের বেষ্টনী দেয়াল পিঠ করে নির্মিত। বিহারে ঢোকা বা বের হওয়ার মাত্র একটাই পথ ছিল। এ পথ বা দরজাটি উত্তর বস্নকের ঠিক মাঝামাঝি স্থানে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের মাঝে ১.৫ মিটার চওড়া দেয়াল রয়েছে। বিহার অঙ্গনের ঠিক মাঝে ছিল কেন্দ্রীয় মন্দির।

বিহারে সর্বমোট ১১৫টি কক্ষ আছে। কক্ষের সামনে ৮.৫ ফুট চওড়া টানা বারান্দা ও তার শেষ প্রান্তে অনুচ্চ দেয়াল। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে তিনটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে। কুলুঙ্গিতে দেবদেবীর মূর্তি, তেলের প্রদীপ ইত্যাদি রাখা হতো। এই কক্ষগুলোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাকতেন। সেখানে বিদ্যাশিক্ষা ও ধর্মচর্চা করতেন।

বিহারের বাইরে প্রবেশদ্বারের পাশে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি হলঘর রয়েছে। চারদিকের দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত সে হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবার ঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হলঘরের মাপ ১০ মিটার গুণন ২০ মিটার। হলঘরের চারদিকে ইটের চওড়া রাস্তা রয়েছে।

প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে ৮টি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়ামাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রৌঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে। এগুলো বাংলাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করছে।

কোটিলা মুড়া

কোটিলা মুড়া হচ্ছে কুমিলস্নার ময়নামতি সেনানিবাস এলাকার একটি প্রত্নস্থান। ঢাকা-কুমিলস্না মহাসড়ক থেকে প্রায় দুই মাইল দক্ষিণে এবং শালবন বিহার থেকে প্রায় তিন মাইল উত্তরে এর অবস্থান। লালমাই পাহাড়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থাপনাগুলোর মধ্যে কোটিলা মুড়া অন্যতম। এ স্থানের মাটি খনন করার পর এখানে তিনটি স্তূপ আবিষ্কৃত হয়। ধারণা করা হয়, এই তিনটি স্তূপ, বৌদ্ধ দর্শনের ত্রি-রত্ন- বুদ্ধ, ধর্ম এবং সঙ্ঘ-এর প্রতীক।

এটির অবস্থান বর্তমান কুমিলস্না ক্যান্টনমেন্ট অধিদপ্তর।

আব্বাসীয় খলিফা মু'তাসিম বিলস্নাহর (১২৮২-১২৫৮) সময়কার একটি অন্যতম নিদর্শন কোটিলা মুড়া। স্থাপনাটির কার্যকাল ছিল সাত শতক থেকে তের শতক পর্যন্ত।

প্রাপ্ত নিদর্শনসমূহ

চারকোণা ভিত্তির ওপর নির্মিত হয়েছিল গোলাকার গম্বুজ। এই গম্বুজের ওপর আছে হার্মিক ও চূঁড়া। কেন্দ্রীয় স্তূপার মাঝে একটি গোলাকৃতি কক্ষ আছে। এই কেন্দ্রীয় কক্ষের চারপাশে পোড়া ইটের তৈরী ছোট ছোট ৮টি কক্ষ তৈরি করা হয়েছিল। ইটের তৈরি অন্য স্তূপার মাঝে একটি গর্ত আবিষ্কৃত হয়েছে যার মধ্য থেকে মাটির তৈরি সিল ও স্বর্ণমুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও এখানে সাত-আট শতকের দু'টি পাথরের মূর্তি, প্রচুর অদগ্ধ সিলমোহর ও নিবেদন স্তূপ পাওয়া গিয়েছে, যেগুলো শালবন বৌদ্ধবিহার জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

এ স্থানটি দর্শনে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটে। ঢাকা থেকে ১১৪ কি.মি. দূরে ময়নামতির অবস্থান এবং মাত্র আড়াই ঘণ্টায় ময়নামতি পেঁৗঁছানো সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে