১. সুভার নাম সুভাষিণী রাখার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : সুভার নাম সুভাষিণী রাখার কারণ বড় দুই বোনের নামের সাথে নাম মিলিয়ে রাখার জন্য।
সুভার বড় দুই বোনের নাম সুকেশিনী ও সুহাসিনী। সুভার বাবার ইচ্ছা ছিল বড় দুই বোনের নামের সাথে মিলিয়ে ছোট মেয়েটির নাম রাখবে। তাই বাবার অনুরোধে সুভার নাম সুভাষিণী রাখা হয়েছে।
২. সুভা তার বাবার পায়ের কাছে বসে কাঁদল কেন?
উত্তর : সুভা কলকাতা যেতে চায় না বলে সে তার বাবার পায়ের কাছে বসে কাঁদল।
সুভার বয়স বাড়ল কিন্তু তার জন্য কোনো পাত্রের সন্ধান পাওয়া গেল না। সমাজের লোকেরা নিন্দা শুরু করল এত বড় মেয়ে ঘরে বসিয়ে রাখার জন্য। তাই বাণীকণ্ঠ অর্থাৎ সুভার বাবা সিদ্ধান্ত নিল যে সুভাকে নিয়ে কলকাতা চলে যাবে।
সুভা গ্রাম ছেড়ে কলকাতা যেতে চায়নি। তাই সে বাবার পায়ের কাছে বসে কাঁদল।
৩. 'সুভা' গল্পে 'চিরনিস্তব্ধ হৃদয়-উপকূল' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : 'সুভা' গল্পে 'চিরনিস্তব্ধ হৃদয়-উপকূল' বলতে হৃদয়ের কিনারার কথা বোঝানো হয়েছে।
সুভা বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তার সঙ্গে কেউ কথা বলে না, মেশে না। তার এই নিঃসঙ্গতা দূর করতে প্রকৃতিই যেন একমাত্র অবলম্বন হিসেবে তাকে কাছে টেনে নেয়। প্রকৃতির মাধ্যমে সুভার ভেতর একটি বিশাল আশ্রয়ের জগৎ তৈরি হয়, যা তার ভাষার অভাব পূরণ করে। নদীর কলধ্বনি, পাখির গান, মাঝির গান ইত্যাদি তার হৃদয়-কিনারায় ভেঙে পড়ে।
৪. 'ছোটটি পিতা-মাতার নীরব হৃদয়ভারের মতো বিরাজ করিতেছে' বলতে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর : 'ছোটটি পিতা-মাতার নীরব হৃদয়ভারের মতো বিরাজ করিতেছে' বলতে বাকপ্রতিবন্ধী সুভার ভবিষ্যৎ নিয়ে বাবা-মার মনে যে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে তা বোঝানো হয়েছে।
সুভার বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে ধুমধাম করে। সুভার তার পিতা-মাতার ছোট মেয়ে। বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় সুভাকে নিয়ে পিতা-মাতার মনে শঙ্কার শেষ নেই। কী হবে সুভার ভবিষ্যৎ এই বিষয়টি বাবা-মার মনে নীরব ভারের সৃষ্টি করেছে।
৫. প্রকৃতির সাথে সুভার হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : নির্বাক প্রকৃতির সাথে সুভা ভাগাভাগি করে নিতে পারত মনের কথাগুলো। বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে সুভার কোনো সঙ্গী ছিল না। সুভা নির্বাক প্রকৃতির মাঝে গড়ে তুলেছিল আপন ভুবন। প্রকৃতির ভাষার সে কথা বলত। প্রকৃতি একমাত্র সুভার ভাষা বুঝত, তাই সুভার সাথে প্রকৃতির হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
৬. সুভা সময়ে-অসময়ে মূক বন্ধু দুটির কাছে আসত কেন?
উত্তর : সুভার বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় মূক বন্ধু দুটি অর্থাৎ গাভী দুটির কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে আসত। সুভা বাকপ্রতিবন্ধী হলেও সবকিছু অনুভব করতে ও বুঝতে পারে। তাই সে যখন কোনো কারণে কষ্ট পায়, তখন কষ্টের বোঝা হালকা করার জন্য সে তার মূক বন্ধুটির কাছে আসে। কারণ সুভার মূক বন্ধু অর্থাৎ গাভী দুটি তার বলার ভাষার চেয়ে চোখের ভাষা ভালো বোঝে এবং তাকে সমবেদনা জানায়। কষ্টে সমবেদনা লাভের আশায় মূলত সুভা তার মূক বন্ধু দুটির কাছে আসত।
৭. 'তখন কে জানিত সে বোবা হইবে'- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : সুভার বোবা হওয়া সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে।
'সুভা' গল্পে যে মেয়েটিকে আমরা দেখতে পাই, সে বোবা। তিন বোনের মধ্যে সে ছোট। তার বড় দুই বোনের নাম সুকেশিনী ও সুহাসিনী। তাই দুই বোনের নামের সাথে মিল রেখে তার নাম রাখা হয় সুভাষিণী।। সুভাষিণী অর্থ 'যার কথা সুন্দর'। কিন্তু সুভাষিণীর যখন জন্ম হয়, তখন তো কেউ জানত না যে, সে বোবা হবে। আর যে কথা বলতে পারে না, তার নাম সুভাষিণী এই বিষয়টি অনেকটা দুঃখজনক। তাই এখানে লেখক মেয়েটির শারীরিক প্রতিবন্ধিতার সাথে তার নামের তা বৈপরীত্যতা প্রকাশ করতে এমন কথা বলেছেন।
৮. সুভা কেন বাবা-মায়ের হৃদয়ভারের কারণ হয়েছিল?
উত্তর : সুভা বোবা হওয়ার কারণে বাবা-মায়ের হৃদয়ভারের কারণ হয়েছিল। সুভার বড় দুই বোন সুস্থ ও স্বাভাবিক। তাই তাদের বিয়ে দিতে তার সচ্ছল বাবার কোনো সমস্যা হয়নি। অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে এবং ধুমধাম করে তিনি তাদের বিয়ে দেন। কিন্তু সুভা বোবা হওয়ার কারণে তার বাবা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। কারণ বোবা মেয়েকে বিয়ে দেওয়াটা অন্য দুই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার মতো সহজ কাজ না। তাই সুভার বাবা-মা প্রতিনিয়ত এই বিষয়টি অনুধাবন করেন এবং সুভার অস্তিত্ব যেন তাদের নীরব হৃদয়ভারের মতো হয়ে অবস্থান করে।
৯. সুভা শিশুকাল থেকে কী বুঝে নিয়েছিল?
উত্তর : সুভা যে বিধাতার অভিশাপস্বরূপ পিতার ঘরে জন্ম নিয়েছে সে তা শিশুকাল থেকেই বুঝে নিয়েছিল।
সুভা জন্ম থেকেই বোবা। কিন্তু মুখে কথা না থাকলেও তার মাঝে অনুভূতি ছিল। সে তার চারপাশের সবকিছুই অনুভব করত এবং বুঝত। ছোটবেলা থেকেই তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যেসব কথাবার্তা হতো তা থেকেই সে বুঝে নিয়েছিল, সে বিধাতার কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়ে জন্মায়নি; বরং তার জন্ম বিধাতার অভিশাপ। আর পরিবারের লোকজনের আলোচনার মধ্য থেকেই বুঝে নিত, সে তার বাবার ঘরে বিধাতার অভিশাপস্বরূপ জন্ম নিয়েছে।
১০. সুভার প্রতি তার মায়ের আচরণ কেমন ছিল?
উত্তর : সুভার প্রতি তার মায়ের আচরণ ছিল বিরক্তিপূর্ণ।
মায়েরা নিজেদের অংশ মনে করে তাদের মেয়েদের। মেয়েদের শরীরের কোনো অংশ যদি ত্রম্নটিপূর্ণ থাকে তাহলে মায়েরা তা নিজেদের ত্রম্নটি হিসেবে ধরে নেয়। 'সুভা' গল্পে সুভার মা সুভার প্রতি বিরক্ত ছিলেন। কারণ সুভা জন্ম থেকে বোবা ছিল। আর এই ত্রম্নটিকে সুভার মা নিজের গর্ভের কলঙ্ক মনে করতেন। সুভাকে দেখলে সুভার মা নিজের ত্রম্নটির কথা স্মরণ করতেন বলে তিনি সুভার ওপর বিরক্ত ছিলেন।
১১. সুভার কালো চোখকে তর্জমা করতে হয় না কেন?
উত্তর : সুভার মনের ভাব তার চোখে ফুটে ওঠে, তাই তার কালো চোখকে তর্জমা করতে হয় না। সুভা বোবা হলেও তার ছিল সুন্দর বড় বড় দুটো কালো চোখ। আমরা কথার মধ্য দিয়ে যে ভাষা প্রকাশ করি তা আমাদের নিজের চেষ্টায় গড়ে নিতে হয়। ঠিক কোনো কিছু তর্জমা করার মতো, যা সবসময় ঠিক না। সুভার বড় বড় কালো চোখের যে ভাষা, যে উজ্জ্বলতা তাতে অবর্ণনীয় ভাবের প্রকাশ রয়েছে। যার দিকে তাকালে আর কোনো তর্জমা করার দরকার হয় না। কারণ তার চোখ দুটো কথা বলে। সুভার মনের ভাব তার চোখের উপর কখনো উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে উঠত, আবার কখনো সস্নানভাবে নিভে আসত। কখনো চঞ্চল বিদু্যতের মতো, আবার কখনো ডুবে যাওয়া চাঁদের মতো হয়ে তার মনের ভাব প্রকাশ করে। সুভার মুখের ভাষা না থাকলেও দৃষ্টির গভীরতা স্পর্শ করা যায়। তাই সুভার কালো চোখকে তর্জমা করতে হয় না।
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়