বিজ্ঞান
পঞ্চম শ্রেণির পড়াশোনা
প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম
প্রশ্ন : তুমি টেলিভিশনের নিউজের মাধ্যমে জানতে পারলে সারাদিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হবে। অথচ সারাদিন কড়কড়ে রোদ দেখতে পেলে। এর কারণ কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : প্রশ্নে উলিস্নখিত ঘটনাটি হওয়ার কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তনশীলতা।
কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের আকাশ ও বায়ুমন্ডলের সাময়িক অবস্থা হলো আবহাওয়া। অর্থাৎ কোনো স্থানের রোদ, বৃষ্টি, তাপমাত্রা, মেঘ, কুয়াশা, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি অবস্থাগুলো মিলে হয় আবহাওয়া।
তাই আবহাওয়াবিদ আবহাওয়া সম্বন্ধে পূর্বাভাস দিলে তা সবসময় সঠিক নাও হতে পারে। কারণ সামান্য সময়ের ব্যবধানে আবহাওয়ার নিয়ামকগুলোর পরিবর্তন হতে পারে। যেমন- ভূপৃষ্ঠে সূর্যের তাপ খাড়াভাবে পড়লে সেখানকার বাতাস হালকা হয়ে উপরে উঠে যায় ও নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় তখন উচ্চচাপবিশিষ্ট স্থান থেকে নিম্নচাপের স্থানে বায়ু প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ আবহাওয়া সবসময় পরিবর্তনশীল। তাই আমি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পরিবর্তে সারাদিন কড়কড়ে রোদ দেখতে পেলাম।
প্রশ্ন : গ্রীষ্মের এক বিকালে হঠাৎ করে ঝড় শুরু হলো। এটাকে তুমি কী বলবে? এর উৎপত্তি সম্বন্ধে তোমার ধারণা উপস্থান করো।
উত্তর : গ্রীষ্মের বিকালে হঠাৎ শুরু হওয়া ঝড়কে আমি কালবৈশাখী ঝড় বলব।
কালবৈশাখীর উৎপত্তি : গ্রীষ্মকালে কালবৈশাখী সৃষ্টি হওয়ার কারণ হলো, এ সময় স্থলভাগ অত্যন্ত উত্তপ্ত থাকে। গ্রীষ্মকালে সূর্য বাংলাদেশের উপর খাড়াভাবে কিরণ দেয়। এতে এ অঞ্চলের বায়ু সকাল থেকে দুপুরের রোদের তাপে হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এভাবে বিকেলের দিকে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এ সময় দেশের উত্তরে উচ্চ বায়ুচাপ বিশিষ্ট এলাকা থেকে বায়ু প্রবলবেগে নিম্নচাপের এলাকায় বাহিত হয়। এর সাথে ভারী বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হয়। এটিই হলো কালবৈশাখী।
প্রশ্ন : জিতুর বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। এ জেলায় রয়েছে বিশাল জলভাগ। দিনের বেলায় এ অঞ্চলে কোনদিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হবে? আলোচনা করো।
উত্তর : দিনের বেলায় জিতুর জেলায় উচ্চচাপ বিশিষ্ট জলভাগ থেকে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়া স্থলভাগের দিকে বায়ু প্রবাহিত হবে।
দিনে জলভাগের চেয়ে স্থলভাগ বেশি উষ্ণ থাকে। তাই স্থলভাগের উপরে থাকা বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এবং তা হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এতে ঐ স্থান ফাঁকা হয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে দিনের বেলা জলভাগের উপরস্থ বায়ু শীতল হওয়ার কারণে ভারী হয়ে নিচে নেমে আসে। ফলে সেখানে সৃষ্টি হয় বায়ুর উচ্চচাপ। বায়ু উচ্চচাপের এলাকা থেকে প্রবাহিত হয় নিম্নচাপ বিশিষ্ট এলাকায়। কাজেই জিতুর জেলায় দিনের বেলায় জলভাগের উপর থেকে শীতল বাতাস নিম্নচাপযুক্ত স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়।
প্রশ্ন : আমাদের প্রতিদিনের পোশাক কিসের ভিত্তিতে নির্বাচন করা উচিত? তোমার মতামত ব্যক্ত করো।
উত্তর : আমাদের প্রতিদিনের পোশাক আবহাওয়ার পূর্বাভাসের ভিত্তিতে নির্বাচন করা উচিত।
কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের আকাশ ও বায়ুমন্ডলের সাময়িক অবস্থাই হলো আবহাওয়া। অর্থাৎ কোনো স্থানের রোদ, বৃষ্টি, তাপমাত্রা, মেঘ, কুয়াশা, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি অবস্থাগুলো মিলে হয় আবহাওয়া; যা সবসময় পরিবর্তনশীল। আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে বৃষ্টি হওয়ার কথা জানা গেলে আমরা সুতি পোশাকের পরিবর্তে কৃত্রিম তন্তুর তৈরি পোশাক পরিধান করব, যাতে তা সহজে এবং দ্রম্নত শুকিয়ে যায়। বিরূপ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ব্যাগে রাখব রেইনকোট। অন্যদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে অসহনীয় তাপমাত্রার কথা বলা হলে আমরা পবিধান করব ঢিলেঢালা পোশাক। এভাবে প্রতিদিনের পোশাক নির্বাচনে আমাদের সাহায্য করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস।
প্রশ্ন : আমাদের দেশে প্রায়ই কালবৈশাখী ঝড় ও ঘূর্ণিঝড় দেখা যায়। এদের মাঝে তুমি কী কী মিল ও অমিল খুঁজে পাও?
উত্তর : কালবৈশাখী ঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের মাঝে মিল ও অমিলগুলো হলো :
মিল : কালবৈশাখী ঝড় ও ঘূর্ণিঝড় দুটোই গ্রীষ্মকালে সৃষ্ট হয় বায়ুর নিম্নচাপের কারণে। দুটোই বজ্রঝড়। দুটোতেই ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
অমিল : কালবৈশাখী ঝড় সাধারণত বিকাল বেলা বেশি হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই।
কালবৈশাখী ঝড়ের বিস্তৃতি সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড়ের বিস্তৃতি ৫০০-৮০০ কিলোমিটার।
কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে ভারী বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি দেখা যায়। পক্ষান্তরে ঘূর্ণিঝড়ে দমকা হাওয়ার সাথে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। কখনো কখনো সৃষ্টি হয় জলোচ্ছ্বাসের।
প্রশ্ন : শীতকালে বাংলাদেশে শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার কারণ ৫টি বাক্যে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : শীতকালে শৈত্যপ্রবাহের কারণ : ১. শীতকালে বাংলাদেশের উত্তরের শুষ্ক ও শীতল বায়ু দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে মাঝে মাঝে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় এবং সৃষ্টি হয় শৈত্যপ্রবাহের। ২. শীতকালে বঙ্গোপসাগর এলাকা থাকে উত্তপ্ত এবং সেখানে বিরাজ করে বায়ুর নিম্নচাপ। ৩. তখন দেশের উত্তরে বেশি থাকে শীত ও বায়ুচাপ। ৪. শীতকালে বায়ু উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়। ৫. এ বায়ু স্থলভাগ থেকে আসে বলে এতে কম জলীয় বাষ্প থাকে এবং তা হয় শুষ্ক ও শীতল। এই বায়ুর প্রভাবেই শীতকালে বাংলাদেশে শৈত্যপ্রবাহ হয়।
প্রশ্ন : রাতের বেলা স্থলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ ও জলভাগের উপর নিম্নচাপ বিরাজ করে কেন?
উত্তর : রাতের বেলা স্থলভাগ দ্রম্নত ঠান্ডা হয়ে যায় কিন্তু জলভাগ অপেক্ষাকৃত উত্তপ্ত থাকে বলে তখন স্থলভাগের উপর বায়ুর উচ্চচাপ ও জলভাগের উপর নিম্নচাপ বিরাজ করে।
পানি অপেক্ষা বালি বা মাটি দ্রম্নত উত্তপ্ত বা ঠান্ডা হয়। দিনের বেলা সূর্যের তাপে জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ বেশি উত্তপ্ত হয়। আবার রাতের বেলা দ্রম্নত তাপ বিকিরণ করে জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ বেশি ঠান্ডা হয়। এতে রাতে স্থলভাগের উপরের বায়ু শীতল হয়ে নিচের দিকে নেমে আসে এবং সেখানে বায়ুর উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে পানির তাপ বিকিরণ ক্ষমতা কম বলে রাতের বেলা জলভাগ অপেক্ষাকৃত বেশি উত্তপ্ত থাকে। ফলে জলভাগের উপরস্থ উষ্ণ বায়ু হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে যায় ও নিম্নচাপের সৃষ্টি করে। তাই রাতের বেলা স্থলভাগে বায়ুর উচ্চচাপ ও জলভাগে বায়ুর নিম্নচাপ বিরাজ করে।
পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়