প্রশ্ন : আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে মিল ও অমিল কোথায়?
উত্তর : আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এদের মধ্যে মিল ও অমিল উভয়ই রয়েছে।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যকার মিলগুলো হলো : তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, বৃষ্টিপাত ও বায়ুচাপ যেমন আবহাওয়ার উপাদান তেমনি জলবায়ুরও উপাদান।
অমিলগুলো হলো : আবহাওয়া কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের আকাশ ও বায়ুমন্ডলের সাময়িক অবস্থা। জলবায়ু হলো কোনো স্থানের বহু বছরের আবহাওয়ার সামগ্রিক অবস্থা। বিভিন্ন স্থানের আবহাওয়া বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন হয়। কিন্তু কোনো স্থানের জলবায়ু বহু বছর একই থাকে।
প্রশ্ন : জানুয়ারি এবং জুলাই এর মধ্যে কোন মাসটি বনভোজনের জন্য উপযুক্ত? কেন?
উত্তর : জানয়ারি মাসে মাসিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮ মিলিমিটার এবং মাসিক গড় আর্দ্রতা ৫৪%। অপরদিকে, জুলাই মাসে মাসিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩২৯ মিলিমিটার এবং মাসিক গড় আর্দ্রতা ৭৯%। দেখা যাচ্ছে জুলাই মাসে মাসিক গড় বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার পরিমাণ জানুয়ারি মাসের তুলনায় বেশি। অর্থাৎ জুলাই মাসে বনভোজন করলে বৃষ্টিজনিত কারণে ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে। তাই জানুয়ারি এবং জুলাই এর মধ্যে জানুয়ারি মাসটি বনভোজনের জন্য উপযুক্ত।
প্রশ্ন : কালবৈশাখী ঝড় কেন হয় পাঁচটি বাক্যে লেখ।
উত্তর : কালবৈশাখী ঝড় হওয়ার কারণ নিম্নে পাঁচটি বাক্যে দেওয়া হলো :
র. গ্রীষ্মকালে স্থলভাগ অত্যন্ত গরম হওয়ার ফলে কালবৈশাখীর সৃষ্টি হয়।
রর. সূর্য খাড়াভাবে কিরণ দিলে দুপুরের রোদের তাপে বায়ু হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে গিয়ে নিম্নচাপের সৃষ্টি করে এবং কালবৈশাখী হয়।
ররর. নিম্নচাপ অঞ্চলে বায়ুর স্বল্পতা পূরণের জন্য উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু ছুটে আসার কারণে কালবৈশাখী সৃষ্টি হয়।
রা. সঞ্চারনশীল ধূসর মেঘ সোজা উপরে উঠে গিয়ে জমা হয় এবং পরবর্তীতে ঘনীভূত হয়ে ঝড়ো হাওয়া ভারী বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ইত্যাদি সৃষ্টি করে।
া. দেশের উত্তরে ও হিমালয়ের উচ্চ বায়ুচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে দক্ষিণ দিকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ধাবিত হয়ে কালবৈশাখীর সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন : তোমার জেলা দক্ষিণাঞ্চলে, যেটি টর্নেডো ও ঘূর্ণিঝড় প্রবণ অঞ্চল। তুমি এ দুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্বন্ধে কী জান?
উত্তর : টর্নেডো : টর্নেডো হলো সরু, ফানেল আকৃতির ঘূর্ণায়মান শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ। এই বায়ুপ্রবাহ আকাশের বজ্রমেঘের স্তর থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। টর্নেডো আকারে সাধারণত এক কিলোমিটারের কম হয়।
ঘূর্ণিঝড় : ঘূর্ণিঝড় হলো নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণায়মান সামুদ্রিক বজ্রঝড়। এটি ৫০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হয়। অত্যধিক গরমের ফলে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের পানি ব্যাপকহারে বাষ্পে পরিণত হয়। এর ফলে ঐ সকল স্থানে সৃষ্ট নিম্নচাপ থেকেই তৈরি হয় ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের সময় দমকা হাওয়া বইতে থাকে ও মুষলধারে বৃষ্টি হতে থাকে। কখনো কখনো ঘূর্ণিঝড়ের ফলে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের জলবায়ুতে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দুর্যোগ দেখতে পাওয়া যায়। একটির কারণ পানির আধিক্য আরেকটির কারণ পানিহীনতা। দুর্যোগ দুটি কী কী? আলোচনা করো।
উত্তর : পানির আধিক্য ও পানিহীনতার কারণে সৃষ্ট দুটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো যথাক্রমে বন্যা ও খরা। নিচে এদের বর্ণনা দেওয়া হলো :
বর্ষাকালে অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের এক পঞ্চমাংশ পানিতে তলিয়ে যায়। তবে ভয়াবহ বন্যার সময় বাংলাদেশের দুই তৃতীয়াংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়।
অনেক লম্বা সময় শুষ্ক আবহাওয়া থাকলে খরা দেখা দেয়। অস্বাভাবিক কম বৃষ্টিপাত ও উচ্চ তাপমাত্রাই খরার কারণ। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে খরা দেখা যায়।
প্রশ্ন : সৃজনী সংবাদপত্রে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর পড়ছে। পত্রিকায় ছাপানো ছবি অনুযায়ী, সেটি ছিল সরু ফানেলের মতো ঘূর্ণায়মান বায়ুপ্রবাহ। বায়ুপ্রবাহটি সেখানে কী কী ক্ষতি করতে পারে বলে তুমি মনে করো?
উত্তর : যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া যে দুর্যোগের কথা সৃজনী পড়ছে সেটি হলো টর্নেডো।
টর্নেডো হলো সরু, ফানেল আকৃতির ঘূর্ণায়মান শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ। এই বায়ুপ্রবাহ আকাশের বজ্রমেঘের স্তর থেকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। টর্নেডো আকারে সাধারণত এক কিলোমিটারের কম হয়।
টর্নেডোর ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। যেমন- ঘরবাড়ির ছাদ উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে, দেয়াল ভেঙে যেতে পারে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। শক্তিশালী টর্নেডো বড় বড় স্থাপনাও ভেঙে ফেলতে পারে।
প্রশ্ন : তোমার বন্ধু নিলয়ের বাড়ি উপকূল এলাকায়। তারা প্রায়ই সামুদ্রিক বজ্রঝড়ের কবলে পড়ে। কখনো কখনো বিশাল এলাকা পস্নাবিত হয়ে যায়। নিলয়ের কাছে এসবের গল্প শুনে তুমি যা যা জেনেছ ৫টি বাক্যে তার বিবরণ দাও।
উত্তর : নিলয়ের কাছে সামুদ্রিক যে বজ্রঝড়ের গল্প আমি শুনেছি তার নাম হলো ঘূর্ণিঝড়।
ঘূর্ণিঝড়ের বিবরণ :
১. ঘূর্ণিঝড় হলো নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণায়মান সামুদ্রিক বজ্রঝড়, যা ৫০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হয়।
২. অত্যধিক গরমের ফলে বঙ্গোপসাগরের পানি ব্যাপকহারে বাষ্পে পরিণত হলে সৃষ্ট নিম্নচাপ থেকেই তৈরি হয় ঘূর্ণিঝড়।
৩. ঘূর্ণিঝড়ের সময় দমকা হাওয়া বইতে থাকে ও মুষলধারে বৃষ্টি হতে থাকে।
৪. কখনো কখনো ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে লোকালয় পস্নাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
৫. মাঝে মাঝে জলোচ্ছ্বাসের ফলে সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে তীব্র জোয়ারের সৃষ্টি হয় এবং সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়