অষ্টম অধ্যায়
প্রশ্ন: ঋতু পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর :পৃথিবীর নিজস্ব কক্ষপথে ঘূর্ণন এবং সূর্যের দিকে এর হেলে থাকা অক্ষের কারণে ঋতু পরিবর্তন হয়। সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর আবর্তনের জন্য বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে বা সূর্যের বিপরীত দিকে সরে পড়ে।
যখন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের দিকে হেলে থাকে সে অংশে তখন গ্রীষ্মকাল। সময় দক্ষিণ গোলার্ধে উল্টো ব্যাপারটি ঘটে। সেখানে তখন শীতকাল। যখন পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের বিপরীত দিকে হেলে থাকে সে অংশে তখন শীতকাল।
প্রশ্ন: সূর্যকে পূর্ব থেকে পশ্চিম আকাশে চলমান মনে হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর :প্রতিদিনের সূর্যকে দেখে মনে হয় যে, এটি সকালে পূর্ব দিকে উঠে এবং দিনের শেষে পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে নিজ অক্ষের উপর পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণেই এমনটি হয়। পৃথিবীর এরূপ ঘূর্ণনের কারণে সূর্যকে পূর্ব থেকে পশ্চিম আকাশে চলমান মনে হয়।
প্রশ্ন: পৃথিবীর অর্ধেক উত্তরাংশ সূর্যের দিকে হেলে পড়লে সূর্যের উচ্চতার কী ঘটে? তখন দিন ও রাতের দৈর্ঘ্যের কী পরিবর্তন ঘটে?
উত্তর : পৃথিবীর অর্ধেক উত্তরাংশ সূর্যের দিকে হেলে পড়লে সূর্য আকাশের অপেক্ষাকৃত উঁচুতে অবস্থান করে। এ সময় উত্তর গোলার্ধে সূর্য খাড়াভাবে কিরণ দেয়। ফলে, দিনের সময় দীর্ঘ হয় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, এজন্য উত্তর গোলার্ধে এ সময় দিন বড় ও রাত ছোট হয়।
প্রশ্ন: কীভাবে সৌরজগৎ, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি ও মহাবিশ্ব সম্পর্কযুক্ত?
উত্তর : সূর্য ও সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহ, ধুমকেতু, গ্রহাণু, উল্কা ও অন্যান্য বস্তু নিয়ে যে পরিবার গড়ে ওঠে তাকে সৌরজগৎ বলে। আর এই সৌরজগতের নক্ষত্র সূর্যের মতো দশ হাজার কোটি নক্ষত্র একত্রিত হয়ে মিল্কিওয়ে নামক গ্যালাক্সি গঠন করে। এসব নক্ষত্রের মধ্যবর্তী স্থান নানা ধুলা ও মেঘ সৃষ্টি করে যাদের নীহারিকা বলে। নীহারিকা, গ্যালক্সি ও এদের মধ্যবর্তী স্থান নিয়ে যে বিশেষ জগৎ সৃষ্টি হয় তা মহাবিশ্ব। সুতরাং সৌরজগৎ, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি ও মহাবিশ্ব পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
প্রশ্ন: তুমি কি মনে কর পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণেই দিন এবং রাত হয়? কথাটি তোমার নিজের ভাষায় বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : পৃথিবীর প্রতি ২৪ ঘণ্টায় নিজ অক্ষে একবার সম্পূর্ণ ঘুরছে। আর এ কারণে প্রতিদিন সকালে সূর্য ওঠে এবং সন্ধ্যায় অস্ত যায়। পৃথিবীর একদিক সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে এবং অপর দিক সূর্যের বিপরীত থাকে। যে দিকটা সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে সেই দিকটায় দিন এবং যে দিকটা বিপরীত দিকে থাকে সেই দিকটায় রাত হয়।
প্রশ্ন: চাঁদ ও সূর্যকে পৃথিবী থেকে সমান দেখালেও এরা সমান নয় কীভাবে প্রমাণ করবে?
উত্তর :চাঁদ ও সূর্যকে পৃথিবী থেকে সমান দেখালেও আসলে এরা অসমান। নিচে পরীক্ষার সাহায্যে তা প্রমাণ করা যায়-
দুজন দর্শকের একজনের হাতে ফুটবল এবং অন্যজনের হাতে একটি ক্রিকেট বল দেওয়া হলো। তৃতীয় একজন দর্শক বল দুটির মাঝে টর্চলাইট হাতে এমনভাবে দাঁড়াবে যেন ছোট বলটি তার নিকটে থাকে এবং বড় বলটি তার নিকট হতে দূরে থাকে। এখন তৃতীয় দর্শক একবার প্রথম দর্শকের ফুটবলকে টর্চ দিয়ে আলোকিত করবে এবং অন্যবার ক্রিকেট বলকে আলোকিত করবে। টর্চবাহী দর্শকের নিকট হতে বল হাতে দর্শকদ্বয়ের দূরত্ব এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়, যাতে আলো ফেললে দুটি বলই সমান দেখায়। আসলে সূর্য ও চাঁদ অসমান হলেও পৃথিবী হতে দূরত্বের ভিন্নতার কারণে তাদের সমান দেখায়।
প্রশ্ন: সারাদিন আকাশে সূর্যের অবস্থান পর্যবেক্ষণ কর এবং সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যে ঘূর্ণনের সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।
উত্তর :সারাদিন আকাশে সূর্যের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করলাম। প্রতিদিনই সূর্যকে দেখে মনে হয় যে, এটি সকালে পূর্ব দিকে ওঠে এবং দিনের শেষে পশ্চিম দিকে অস্ত যায়। অর্থাৎ সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে। আসলে তা নয়। প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীই সূর্যের চারদিকে পরিভ্রমণ করে।
প্রশ্ন:মহাবিশ্বের আকার সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর :মহাবিশ্বের প্রকৃত আকার সম্পর্কে কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারে না। তবে মহাকাশ সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণা থেকে আমরা ধারণা করতে পারি, মহাবিশ্ব কত বড়। একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া যায়। মহাকাশের গ্যালাক্সিসমূহের মধ্যে মিল্কিওয়ে একটি গ্যালাক্সি। যদি আমরা আলোর গতিতে চলতে পারতাম তবে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে আমাদের ১,৩০,০০০ বছর সময় লাগত। স্যার এডিংটনের মতে, প্রতি গ্যালাক্সিতে গড়ে দশ সহস্র কোটি নক্ষত্র রয়েছে। তাছাড়া মহাবিশ্ব এখনো ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। অতএব, মহাবিশ্বের আকার সম্পর্কে বলা যায় যে, মহাবিশ্ব সুবিশাল ও অসীমে বিস্তৃত।
প্রশ্ন:তুমি মহাবিশ্ব সম্পর্কে গবেষণা করতে চাইলে কী করবে? তোমার পরিকল্পনা আলোচনা কর।
উত্তর :রাতের আকাশে খালি চোখে আমি অসংখ্য তারা বা নক্ষত্র দেখতে পাই। কিন্তু ভালোভাবে সেগুলো দেখতে হলে আমাকে মহাকাশ গবেষণার জন্য নির্মিত বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করতে হবে। যেমন দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে আমি নক্ষত্রসমূহকে আরও স্পষ্ট দেখতে পাব। এ যন্ত্রের সাহায্যে অনেক দূরের বস্তুও বড় দেখায়। এটি আমাদের মহাকাশের দূরবর্তী বস্তু পর্যবেক্ষণে সাহায্য করবে। মহাকাশের গ্রহ, নক্ষত্র এবং গ্যালাক্সি নিয়ে গবেষণা করতে বিজ্ঞানীরাও দূরবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন।
মহাকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেছেন এবং মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করেছেন। কাজেই আমি যদি মহাবিশ্ব সম্পর্কে গবেষণা করতে চাই তাহলে দূরবীক্ষণ যন্ত্রসহ বিভিন্ন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করব।
প্রশ্ন: ঋতু পরিবর্তন হয় কেন? গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার চারটি কারণ লেখ।
উত্তর :পৃথিবীর নিজস্ব কক্ষপথে ঘূর্ণন এবং সূর্যের দিকে এর হেলে থাকা অক্ষের কারণে ঋতু পরিবর্তন হয়।
গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার চারটি কারণ নিচে দেওয়া হলো :
১. গ্রীষ্মকালে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে সূর্যের দিকে হেলে থাকে।
২. সূর্য অপেক্ষাকৃত আকাশের উঁচুতে অবস্থান করে।
৩. সূর্য খাড়াভাবে কিরণ দেয়।
৪. দিনের সময়কাল দীর্ঘ থাকে।
প্রশ্ন: বার্ষিক গতি কাকে বলে? পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে বা সূর্যের বিপরীত দিকে সরে পড়ে কেন? একটি বাক্যে লেখ। শীতকালে তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার তিনটি কারণ লেখ।
উত্তর : সূর্যের চারদিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৃথিবীর আবর্তনকে বার্ষিক গতি বলে। সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর আবর্তনের জন্য বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে বা সূর্যের বিপরীত দিকে সরে পড়ে। শীতকালে তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ার তিনটি কারণ দেওয়া হলো :
১. শীতকালে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধ সূর্যের বিপরীত দিকে হেলে পড়ে।
২. সূর্য আকাশের অপেক্ষাকৃত নিচে অবস্থান করে।
৩. সূর্য তির্যকভাবে কিরণ দেয়।
হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়