বিজ্ঞান

পঞ্চম শ্রেণির পড়াশোনা

রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম য়

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

রোজিনা আক্তার, শিক্ষক, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সিরাজগঞ্জ
প্রশ্ন : হাঁচি-কাশির সময় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বা রুমাল ব্যবহার করে আমরা সংক্রামক রোগ-প্রতিরোধ করতে পারি। এ ক্ষেত্রে হাতের তালু ব্যবহার করার চেয়ে হাতের উল্টো পিঠ বা কনুই-এর ভাঁজ ব্যবহার করা ভালো কেন? উত্তর : হাঁচি-কাশির সময় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বা রুমাল ব্যবহার করে আমরা সংক্রামক রোগ-প্রতিরোধ করতে পারি। এ ক্ষেত্রে হাতের তালু ব্যবহার করার চেয়ে হাতের উল্টো পিঠ বা কনুই-এর ভাঁজ ব্যবহার করা ভালো। কারণ, হাঁচি-কাশির সময় হাতের তালু ব্যবহার করলে জীবাণু হাতের তালুতে লেগে যাবে। পরে ওই হাত দিয়ে খাদ্যদ্রব্য বা নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র স্পর্শ করলে তাতেও জীবাণু লেগে যাবে। ফলে খুব সহজেই জীবাণু সেখান থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে সংক্রমিত হবে। আর হাঁচি-কাশির সময় হাতের উল্টো পিঠ বা কনুইয়ের ভাঁজ ব্যবহার করলে রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকে। প্রশ্ন : বয়ঃসন্ধিকাল কী? এ সময় কী কী পরিবর্তন ঘটে তা চারটি বাক্যে লেখো। উত্তর : ছেলে ও মেয়েদের যে সময়ে শারীরিক, মানসিক ও আচরণের পরিবর্তন দেখা যায় সে সময়কে বয়ঃসন্ধিকাল বলে। বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো নিচে উলেস্নখ করা হলো : ১. বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে শারীরিক, মানসিক আচরণের পরিবর্তন দেখা দেয়। ২. এ সময় ছেলে ও মেয়েরা দ্রম্নত লম্বা হয়, শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়। ৩. এ সময় একটু বেশি ঘাম হয়, ত্বক তৈলাক্ত হয়, ব্রণ ওঠে। ৪. ছেলে ও মেয়েরা এ সময় নিজেদের মতামত প্রকাশ করার চেষ্টা করে। প্রশ্ন : মনে করো তোমার বড় আপু সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত। তার ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়েছে। সুস্থ হওয়ার জন্য তাকে কী করতে হবে বলে তুমি মনে করো? উত্তর : ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি সংক্রামক রোগ। সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। আমার বড় আপু যেহেতু ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত, তাই সুস্থ হওয়ার জন্য তাকে নিচের পদক্ষেপগুলো নিতে হবে : ১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। ২. পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ৩. প্রচুর পরিমাণে নিরাপদ পানি পান করতে হবে। ৪. যদি জ্বর ভালো না হয়, ক্রমাগত বমি হতে থাকে এবং মাথাব্যথা হয় তবে আপুকে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে। প্রশ্ন : রানা তোমার সহপাঠী। সে বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করছে। তুমি কি তার শরীরে কোনো পরিবর্তন দেখেছ? বর্ণনা করো। উত্তর : বয়ঃসন্ধিকালে শরীরে বেশকিছু পরিবর্তন দেখা যায়। আমার সহপাঠী রানার শরীরেও আমি কিছু পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। যেমন- ১. দ্রম্নত লম্বা হওয়া; ২. শরীরের গঠন পরিবর্তিত হওয়া; ৩. বেশি ঘাম হওয়া, ত্বক তৈলাক্ত হওয়া, ব্রণ ওঠা; ৪. শরীরের ওজন বৃদ্ধি পাওয়া; ৫. গলার স্বরের পরিবর্তন হওয়া; ৬. মাংসপেশি সুগঠিত হওয়া এবং দাড়ি-গোঁফ গজাতে শুরু করা। প্রশ্ন : বয়ঃসন্ধি বলতে কী বোঝ? তোমার ও তোমার বড় আপুর উদাহরণ দিয়ে বোঝাও। উত্তর : বয়ঃসন্ধি হলো জীবনের এমন একপর্যায় যখন আমাদের শরীর শিশুর অবস্থা থেকে কিশোর অবস্থায় পৌঁছায়। সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধি ৮ থেকে ১৩ বছরে হয়। যেমন- আমার বড় আপু সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তার বয়স ১৩ বছর। এখন তার বয়ঃসন্ধি চলছে। অন্যদিকে ছেলেদের ক্ষেত্রে ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সে শুরু হয়। যেমন- আমার বয়স ১১ বছর। আমার বয়ঃসন্ধি শুরু হয়েছে। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে শারীরিক, মানসিক ও আচরণিক পরিবর্তন হয়ে থাকে। যা আমার ও আপুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। প্রশ্ন : বয়ঃসন্ধিকাল কি জীবনের একটি জটিল সময়? এ সময়ের সমস্যাসমূহ থেকে উত্তরণের জন্য কী কী করা উচিত? তোমার মতামত দাও। উত্তর : বয়ঃসন্ধিকাল জীবনের কোনো জটিল সময় নয়। এটি সবার জীবনেই আসে। এই পরিবর্তন স্বাভাবিক। বয়ঃসন্ধিকালে কোনো কিছু নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে কিংবা আবেগের দিক থেকে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। এ সময় অনেকেই খুব আবেগপ্রবণ হয় বা অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়ে। আবার শারীরিক পরিবর্তন দেখে অনেকে দুশ্চিন্তায় ভোগে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য এই সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা খুবই জরুরি। আমার মতামত হলো বয়ঃসন্ধিকালে কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে মা-বাবা, শিক্ষক কিংবা বড় ভাই বা বোনের সাথে পরামর্শ করা উচিত। প্রশ্ন : মুক্তা তার বাবা-মা, ভাই-বোন ও দাদা-দাদির সঙ্গে খুবই ঘনবসতিপূর্ণ একটি এলাকায় বাস করে। মাত্র দুটি ঘরে তাদের দৈনন্দিন জীবনের সব কাজ সম্পন্ন করতে হয়। মুক্তা তার পরিবারের সদস্যদের কোন ধরনের রোগ হতে পারে বলে তুমি মনে করো? ব্যাখ্যা দাও। উত্তর : মুক্তা ও তার পরিবারের সদস্যদের সংক্রামক রোগ হতে পারে। বিভিন্ন জীবাণু যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ইত্যাদি শরীরে প্রবেশের ফলে সৃষ্ট রোগ হলো সংক্রামক রোগ। এসব রোগ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে ছড়াতে পারে। এসব রোগ বিভিন্নভাবে বিস্তার লাভ করতে পারে। কিছু কিছু রোগ হাঁচি-কাশির মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হয়। সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস যেমন- গস্নাস, পেস্নট, চেয়ার, টেবিল, জামাকাপড়, টয়লেট ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে অন্য সুস্থ ব্যক্তি জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। মুক্তার পরিবারের সবাই খুব ঘনসন্নিবিষ্ট হয়ে বাস করে এবং পরস্পরের জিনিস ব্যবহার করে, তাই তারা সহজেই জীবাণুর সংস্পর্শে আসতে পারে। ফলে তাদের সংক্রামক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আমি মনে করি। প্রশ্ন : পানি জমে থাকে এমন বস্তু যেমন- গামলা, টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলার মাধ্যমে আমরা ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করতে পারি। এর কারণ কী? উত্তর : পানি জমে থাকে এমন বস্তু যেমন- গামলা, টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলার মাধ্যমে আমরা ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করতে পারি। কারণ এগুলোতে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া রোগের বাহক মশা ডিম পাড়ে। তাই ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করতে হলে মশার আবাসস্থলে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। কারণ, জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশ বৃদ্ধি করে। প্রশ্ন : তোমার বন্ধু রনি নানারকম সংক্রামক রোগের কারণে প্রায়ই অসুস্থ থাকে। সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকার জন্য তুমি রনিকে কী পরামর্শ দেবে? উত্তর : সংক্রামক রোগ-জীবাণুর মাধ্যমে হয়ে থাকে। এ সব রোগ থেকে বাঁচার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করা। রনির ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিরাপদ পানি ব্যবহার এবং হাত জীবাণুমুক্ত রাখার মাধ্যমে সে সুস্থ থাকতে পারে। হাঁচি-কাশির সময় টিসু্য, রুমাল বা হাত দিয়ে মুখ ঢাকা, চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে রনি সংক্রামক রোগ-প্রতিরোধ করতে পারে। বাড়ির আশপাশে পানি জমতে পারে এমন আবর্জনা যেমন- কৌটা, টায়ার, ফুলের টব ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে তাকে। কারণ এখানে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু এবং ম্যালেরিয়া রোগের বাহক মশা ডিম পাড়ে। প্রয়োজনীয় টিকা নিয়ে এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিহার করেও সে রোগমুক্ত থাকতে পারে। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়