বিজ্ঞান
পঞ্চম শ্রেণির পড়াশোনা
প্রকাশ | ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম
চতুর্থ অধ্যায়
প্রশ্ন : ভেজা কাপড় যত দ্রম্নত সম্ভব শুকানো প্রয়োজন। কিন্তু বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। ঘরের ভেতর কীভাবে আমরা দ্রম্নত কাপড় শুকাতে পারি।
উত্তর : সাধারণত আমরা ঘরের বাইরে রোদে কাপড় শুকাতে দিই। কিন্তু বাইরে বৃষ্টি হলে তখন আমাদের কাপড় শুকানোর ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। এক্ষেত্রে আমরা বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে ভেজা কাপড় শুকাতে পারি। কেননা বায়ুপ্রবাহ ভেজাবস্তু থেকে দ্রম্নত পানি সরিয়ে নিতে সাহায্য করে। আর এ জন্য আমরা বৈদু্যতিক পাখার বাতাসের মাধ্যমে বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি করতে পারি এবং কাপড়গুলো দ্রম্নত শুকাতে পারি।
প্রশ্ন : রিসাইকেল প্রক্রিয়া কীভাবে বায়ুদূষণ কমাতে পারে?
উত্তর : রিসাইকেল হলো একবার ব্যবহৃত দ্রব্য প্রক্রিয়াকরণ করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলা। আমাদের ব্যবহারের বিভিন্ন গৃহস্থালি দ্রব্য যেমন : কৌটা, বোতল, বাক্স, নানা রকম প্যাকেট ইত্যাদি ব্যবহারের পর সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়। এসব বস্তু মাটিতে মেশে না বলে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ফলে বায়ু মারাত্মকভাবে দূষিত হয়। কিন্তু এই জিনিসগুলো ফেলে না দিয়ে যদি একটু মেরামত ও প্রক্রিয়াকরণ করা হয় তাহলে তা আবার ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। ফলে তা দ্বারা বায়ুদূষণের কোনো সুযোগ থাকবে না। তাছাড়া বিভিন্ন বস্তু নতুন করে তৈরি করতে অধিক প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন- জীবাশ্ম-জ্বালানি ব্যবহৃত হয় যা বায়ুদূষণ ঘটায়। কিন্তু রিসাইকেলের মাধ্যমে বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করলে নতুন করে তৈরি করার প্রয়োজন কমে যাবে। এভাবে রিসাইকেল প্রক্রিয়া বায়ুদূষণ কমাতে পারে।
প্রশ্ন :কী কী কারণে বায়ু দূষিত হয়? মানুষ কীভাবে বায়ুদূষণ করছে?
উত্তর :মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ড বায়ুদূষণের একটি বড় কারণ। বিশেষ করে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুতে বিভিন্ন ধরনের গ্যাস নির্গত হয়। কলকারখানা ও যানবাহন থেকে এসব গ্যাস বায়ুতে আসে। গাছপালা পোড়ানোর ফলে উৎপন্ন ধোঁয়া থেকেও বায়ু দূষিত হয়। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা ও মলমূত্র ত্যাগের কারণে বায়ুতে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং বায়ু দূষিত হয়।
মানুষ বায়ুদূষণের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কেননা তারা যেখানে সেখানে ইটের ভাটা তৈরি করছে, যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে এবং মলমূত্র ত্যাগ করছে, বড় বড় কলকারখানা গড়ে তুলছে অথচ এর বর্জ্য ফেলার সুব্যবস্থা করছে না। এভাবেই মানুষ বায়ুকে দূষিত করছে।
প্রশ্ন :বায়ুর কোন উপাদানটি আগুন নেভাতে ব্যবহার করা হয়? ইউরিয়া সারের মাধ্যমে গাছের বৃদ্ধিতে আমরা বায়ুর কোন উপাদান ব্যবহার করি? একজন মাঝি কীভাবে বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগায় তা ১টি বাক্যে লেখ। দৈনন্দিন কাজে বায়ুপ্রবাহের দুটি ব্যবহার লেখ।
উত্তর :বায়ুর উপাদান কার্বন ডাইঅক্সাইড আগুন নেভাতে ব্যবহার করা হয়। ইউরিয়া সারের মাধ্যমে গাছের বৃদ্ধিতে আমরা বায়ুর নাইট্রোজেনকে ব্যবহার করি। বায়ুপ্রবাহ ব্যবহার করে একজন মাঝি পালতোলা নৌকা চালায়।
দৈনন্দিন কাজে বায়ুপ্রবাহের ২টি ব্যবহার নিম্নরূপ :
র. বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে ফসল ঝেড়ে ময়লা দূর করা হয়।
রর. বায়ুপ্রবাহের সাহায্যে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদু্যৎ উৎপাদন করা হয়।
প্রশ্ন :ধূমপান ক্ষতিকর কেন? বায়ুদূষণ রোধের তিনটি উপায় লেখ।
উত্তর : বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়া বায়ুকে দূষিত করে। এর ফলে যক্ষ্ণা ও ক্যানসার রোগ হয়। তাছাড়া ধূমপানের কারণে, এলার্জি, কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, ফুসফুসের ক্যানসার ইত্যাদি মারাত্মক রোগ হতে পারে।
বায়ুদূষণ রোধের তিনটি উপায় নিম্নরূপ :
র. প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কমিয়ে, পুনর্ব্যবহার করে ও রিসাইকেল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দূষণ প্রতিরোধ করা যায়।
রর. ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে এবং গাছ লাগানোর মাধ্যমেও বায়ুদূষণ প্রতিরোধ করা যায়।
ররর. শক্তির ব্যবহার কমিয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার কমানো যায়।
প্রশ্ন :বায়ুদূষণ রোধের পাঁচটি উপায় লেখ।
উত্তর : বায়ুদূষণ রোধের পাঁচটি উপায় নিম্নরূপ :
র.শক্তির ব্যবহার কমানো অর্থাৎ জীবাশ্ম-জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার না করা।
রর.পুনর্ব্যবহার ও রিসাইকেল করা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কমানো।
ররর. গাছ লাগিয়ে নতুন বনভূমি সৃষ্টি করা ও বনভূমি সংরক্ষণ করা।
রা. কালো ধোঁয়া উৎপাদন করে এমন যানবাহন ব্যবহার বন্ধ করা।
া. ধূমপান না করা।
প্রশ্ন :তোমাদের দৈনন্দিন জীবনে বায়ুর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার আলোচনা কর।
উত্তর : ফুটবল, গাড়ি, রিকশা, সাইকেলের টায়ার ইত্যাদি ফোলানোর জন্য মানুষ বায়ু ব্যবহার করে। এ ছাড়া মানুষ বায়ুর উপাদানগুলোকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে। শ্বাসকষ্টের রোগী, ডুবুরি এবং পর্বতারোহীকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। ইউরিয়া সার তৈরিতে এবং প্যাকেট বা টিনের কৌটায় বিভিন্ন খাদ্য যেমন- মাছ, মাংস, চিপস ইত্যাদি সংরক্ষণে বায়ুর নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন কোমল পানীয়তে ঝাঁঝালো ভাব ধরে রাখার জন্য কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করা হয়। আগুন নেভানোর জন্য অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রেও কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করা হয়। এভাবেই বায়ু মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
প্রশ্ন : বায়ু দেখা যায় না কিন্তু আমরা এর অস্তিত্ব অনুভব করতে পারি। বায়ুর কোন উপাদানটি আমরা গ্রহণ করি? বায়ুর অস্তিত্বের চারটি উদাহরণ দাও।
উত্তর : বায়ুর অক্সিজেন নামক উপাদানটি আমরা গ্রহণ করি। বায়ুর অস্তিত্বের চারটি উদাহরণ নিচে দেওয়া হলো :
১. বায়ু প্রবাহিত হলে গাছের পাতা নড়ে।
২. বায়ুপ্রবাহের ফলে আকাশে মেঘ ভেসে বেড়ায়।
৩. বায়ুপ্রবাহের ফলে নদীতে থাকা নৌকার পাল ফুলে ওঠে। নদীতে পালতোলা নৌকা চলে।
৪. বায়ু প্রবাহিত হলে কাপড় ওড়ে।
প্রশ্ন : মেহেদীদের এলাকায় ইদানীং বেশ কয়েকটি ইটের ভাটা তৈরি হয়েছে। এর ফলে কোন গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাবে? ইটের ভাটার বায়ুদূষণের প্রভাব কীভাবে কমানো যায়?
উত্তর : ইটের ভাটার কারণে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাবে। ইটের ভাটার দূষণের প্রভাব নিম্নলিখিতভাবে কমানো যায় :
১. ইটভাটার কালো ধোঁয়া যাতে বায়ুদূষণ না করতে পারে এজন্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
২. ইটের ভাটা লোকালয় থেকে দূরে স্থাপন করতে হবে।
৩. ইটের ভাটায় উঁচু চিমনি এবং রাসায়নিক ছাঁকনির ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. ইটের ভাটায় জীবাশ্ম-জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে।
প্রশ্ন : বায়ুপ্রবাহকে আমরা কী কী কাজে ব্যবহার করতে পারি?
অথবা, দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন কাজে বায়ু ব্যবহার করি। বায়ুর এরূপ পাঁচটি ব্যবহার লেখ।
উত্তর : বায়ুপ্রবাহকে আমরা কাজে ব্যবহার করতে পারি।
১. বায়ুপ্রবাহকে ব্যবহার করে বড় চরকা বা টারবাইন ঘুরিয়ে বিদু্যৎ উৎপাদন করা যায়।
২. বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে ফসল ঝেড়ে ময়লা দূর করা যায়।
৩. একে ব্যবহার করে পালতোলা নৌকা চালানো যায়।
৪. ভেজা কাপড় রোদে ও খোলা জায়গায় শুকাতে বায়ুপ্রবাহ কাজে লাগে।
৫. চুল শুকানোর যন্ত্র দিয়ে চুল শুকাতে বায়ুপ্রবাহ কাজে লাগে।
\হপরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়