টেলিফোন আবিষ্কারক
আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল জন্ম : ৩ মার্চ ১৮৪৭ মৃতু্য : ২ আগস্ট ১৯২২
প্রকাশ | ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শিক্ষা জগৎ ডেস্ক
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের মধ্যে যোগাযোগের যে মাধ্যম তৈরি হয়েছে এর মূল নিয়ামক হলো একটি যন্ত্র। সেই যন্ত্রটির নাম টেলিফোন। এর প্রভাবে দূরের মানুষের সঙ্গে খুব সহজে যোগাযোগ করা যায়। টেলিফোনের আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল বিজ্ঞান জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। টেলিফোনে প্রথম ধ্বনি ও প্রথম কথা ছিল, গৎ. ডধঃংড়হ, পড়সব যবৎব ঢ়ষবধংব. ও ধিহঃ ুড়ঁ. এই কথাগুলো বলেছিলেন টেলিফোনের আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করেছে এই গ্রাহামবেল। টেলিফোনের মাধ্যমেই মানুষ এক দেশ থেকে আরেক দেশে কথা বলছে।
তিনি ১৮৭৫ সালে বিশ্বের প্রথম টেলিফোনের আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। একটি ঘটনা গ্রাহামবেলকে সজাগ করে তোলে। সেটি হচ্ছে ১৮৭৫ সালের দিকে গ্রাহামবেল টেলিগ্রাফে অনেকগুলো বার্তা পাঠানো নিয়ে গবেষণায় মগ্ন ছিলেন। এই কাজ করার সঙ্গে বিদু্যতের সাহায্যে শব্দ পাঠানো নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। হঠাৎ তারের ভিতর দিয়ে এক স্প্র্রিংয়ের টংকার ধ্বনি তাকে বিশেষভাবে সচকিত করে তোলে। এই বিষয়ে তিনি বিস্তর গবেষণায় মেতে উঠেন। আর এই গবেষণার ফলে গ্রাহামবেলই প্রথম টেলিফোনীয় সঠিক নীতি ধরতে পেরেছিলেন।
১৮৪৭ সালের ৩ মার্চ গ্রাহামবেল এডিনবরায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জাতিতে স্কট ছিলেন। তার বাবা মেলিভিলেবেলও ছিলেন প্রতিভাবান মানুষ। মেলভিলে ফোনেটক্স বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি এডিনবরা স্কুলে পড়াশোনা করেন ও পরে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজে যান। পরে তার বাবার সঙ্গে কানাডায় যান, যেখানে তিনি মুক ও বধিরদের বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজ করেন। তিনি পি এইচ ডি ডিগ্রি পান জার্মানির উর্জবাগ থেকে।
ছোটবেলায় একটা গল্প তিনি সবাইকেই শোনাতেন। তিনি এডিনবরার এক কারখানায় তার সহপাঠীদের সঙ্গে গিয়েছিলেন। ছেলেগুলোকে কিছু গমের দানা দিয়ে কারখানার অফিসার বললেন এগুলোর খোসা কালকে ছাড়িয়ে আনবি। বেল বাড়তে এসে নখ পরিষ্কার করার ব্রাশ দিয়ে তাড়াতাড়ি খোসা ছাড়িয়ে নিলেন। পরের দিন কারখানার মালিককে এই কথাটা বললেন। মালিক এই কথা শুনে ব্রাশের নীতি অনুসারে এক মেশিন বসালেন। দেখা গেল খুব সহজেই খোসা ছাড়ানো যায়।
মুক ও বধিরদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি এক বিশেষ ধরনের যন্ত্র তৈরি করেন। যে যন্ত্রটি একই কথা বারবার বলে যাবে, তিনি বধিরদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানও স্থাপন করেছিলেন। বধিরদের শ্রবণশক্তি দান নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই তিনি টেলিফোন আবিষ্কার করেন। তাছাড়া তিনি ম্যাবেল হাবার্ড নামে একটি বধির মেয়েকে বিয়ে করেন।
বিজ্ঞানে এই বিষয় নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে কিন্তু গ্রাহামবেলই প্রথম টেলিফোনের সঠিক নীতি ধরতে পেরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন বায়ুর যেমন ঘনত্বের তারতম্য হয়; তেমনি শব্দ উৎপাদনে যদি বিদু্যৎ প্রবাহের তীব্রতার তারতম্য ঘটাতে পারি তাহলে টেলিগ্রাফে বার্তা পাঠানোর বদলে আমি শব্দধ্বনি পাঠাতে পারি। অনেক চেষ্টা করে তিনি একটা যন্ত্র তৈরি করলেন, যা আজ টেলিফোন নামে খ্যাত হয়েছে।
কিন্তু টেলিফোন আবিষ্কারক কে এই নিয়ে তুমুল হৈচৈ বাধে। কারণ একই আবিষ্কারের জন্য কাজ করেছেন তিনজন। তাতেই এত গোলমাল, যখন আবিষ্কার নিয়ে হৈচৈ তখন বেল ও তার সহকর্মী ওয়াটসন দুইজনে মিলে টেলিফোন যন্ত্র আবিষ্কার নিয়ে ব্যস্ত। ১৮৭৬ সালে ১০ মার্চ বিকালে রিসিভার লাগানো তারের এক প্রান্ত কানে লাগিয়ে ওয়াটসন ঘরে বসেই কাজ করছিলেন। হঠাৎ শুনতে পেলেন গ্রাহামবেলের কণ্ঠস্বর, তিনি আনন্দে ছুটে গেলেন গ্রাহামবেলের কাছে। তাকে জড়িয়ে ধরলেন, একদিন ব্রাজিলের সম্রাট ডন পেদ্রো কানে রিসিভার লাগিয়ে বসে আছেন। অন্য প্রান্ত থেকে গ্রাহামবেল হ্যামলেট থেকে দুটো বিখ্যাত লাইন টেলিফোনে আবৃত্তি করলেন থ "ঞড় নব ড়ৎ হড়ঃ :ড় নব"....... সম্রাট চেঁচিয়ে বললেন থ গু এড়ফ! ওঃ ংঢ়বধশং!
১৯২২ সালের ২ আগস্ট নিজের বাড়িতেই তিনি মারা যান। তার আবিষ্কৃত টেলিফোন আমাদের প্রতি মুহূর্তেই মনে করিয়ে দেয় বৈজ্ঞানিক গ্রাহামবেলকে।