বিজ্ঞান

পঞ্চম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশ | ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম
প্রশ্ন : আমাদের দেশে কৃষকরা কৃষিকাজে কেন অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে? এর ফলে পরিবেশের তিনটি বিপর্যয় লেখো। উত্তর : আমাদের দেশে জনসংখ্যা দ্রম্নত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হচ্ছে। অধিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষিজমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার বাড়ছে। এর ফলে পরিবেশে মারাত্মক বিপর্যয় ঘটছে। নিচে তা বর্ণনা করা হলো : ১. সার ও কীটনাশক উভয়ই রাসায়নিক পদার্থ। এ রাসায়নিক পদার্থ বৃষ্টি ও বন্যার পানির সঙ্গে পুকুর, খাল, বিল ও নদীতে গিয়ে পড়ছে। ফলে পানি দূষিত হচ্ছে। ২. কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। ফলে ফসল উৎপাদন কমে যায়। ৩. জমিতে কীটনাশক ব্যবহারে অনেক উপকারী জীব মারা যাচ্ছে এবং দিন দিন তাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে কীটনাশকের ব্যবহার পরোক্ষভাবে পরিবেশকে দূষিত হতে সাহায্যে করছে। তৃতীয় অধ্যায় ১. বরফসহ পানির গস্নাসের বাইরের অংশ কেন ভিজে যায় তা ব্যাখ্যা করো। উত্তর : বরফসহ পানির গস্নাসের বাইরের অংশে বাতাসে থাকা জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জমা হয় বলে সে অংশ ভিজে যায়। ঘনীভবন বাষ্পীভবনের বিপরীত প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় বাষ্পীভূত পানি তাপ হারিয়ে তরল পানিতে পরিণত হয়। বরফসহ পানির গস্নাসের বাইরের অংশ স্বাভাবিকভাবেই ঠান্ডা হয়। বায়ু যখন ওই ঠান্ডা গস্নাসের সংস্পর্শে আসে তখন বায়ুতে থাকা জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বিন্দু বিন্দু পানিতে পরিণত হয়। ফলে গস্নাসের বাইরের অংশ ভিজে যায়। ২. পানিচক্র ব্যাখ্যা করো। উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় পানি বিভিন্ন অবস্থায় পরিবর্তিত হয়ে ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমন্ডলের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে তাই পানিচক্র। এই চক্রের মাধ্যমে সর্বদাই পানির অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। সাগর ও নদীর পানি বাষ্পীভূত হয়ে জলীয়বাষ্পে পরিণত হয়। বাষ্পীভূত পানি ওপরে ওঠে ঠান্ডা ও ঘনীভূত হয়ে পানির বিন্দুতে পরিণত হয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানির বিন্দু একত্রিত হয়ে মেঘ সৃষ্টি করে। এই মেঘের পানিকণা বড় হয়ে বৃষ্টিপাত হিসেবে আবার ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে। শীতপ্রধান দেশে তুষার ও মেঘ থেকেই পৃথিবীতে পড়ে। বৃষ্টির পানি সাধারণত মাটিতে শোষিত হয় অথবা নদীতে গড়িয়ে পড়ে। মাটিতে শোষিত পানি ভূগর্ভস্থ পানি হিসেবে জমা থাকে। নদীতে গড়িয়ে পড়া পানি সমুদ্রে প্রবাহিত হয় এবং বাষ্পীভূত হয়ে আবার বায়ুতে ফিরে যায়। ৩. জীবের কেন পানি প্রয়োজন? উত্তর : পানি ছাড়া জীব বাঁচতে পারে না। উদ্ভিদের দেহের প্রায় ৯০ ভাগ পানি। উদ্ভিদ খাদ্য তৈরিতেও পানি ব্যবহার করে। মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ ও বিভিন্ন অংশে পরিবহণের জন্য উদ্ভিদের পানি প্রয়োজন। বেঁচে থাকার জন্য প্রাণীদেরও পানি প্রয়োজন। মানবদেহের ৬০-৭০ ভাগ পানি। অধিকাংশ প্রাণী পানি পান না করে অল্প কিছু দিন বেঁচে থাকতে পারে। আমরা যখন খাদ্য গ্রহণ করি তখন সেই পানি খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। পুষ্টি উপাদান শোষণ ও দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গে পরিবহণের জন্য পানি প্রয়োজন। পানি আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ৪. বাতাসে পানি আছে তা আমরা কীভাবে ব্যাখ্যা করতে পারি? উত্তর : বায়ুতে যে সবসময় কিছু পানি জলীয়বাষ্প অবস্থায় থাকে তা নিচের পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করা যায় : একটি কাচের গস্নাসে কয়েক টুকরা বরফ নিই। কিছুক্ষণ রেখে দেখা গেল গস্নাসের বাইরের গায়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি জমেছে। গস্নাসের ভেতর থেকে পানি অবশ্যই বাইরে আসতে পারে না। তাই গস্নাসের বাইরের ফোঁটা ফোঁটা পানি গস্নাসের বরফ থেকে আসেনি। বরফের ঠান্ডার কারণে গস্নাসটি ঠান্ডা হয়েছে। আর সে ঠান্ডার সংস্পর্শে বায়ুর জলীয়বাষ্প পানিকণায় পরিণত হয়ে গস্নাসের বাইরের গায়ে জমা হয়েছে। এ পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হয়, বায়ুতে সবসময়ই জলীয়বাষ্প তথা পানি থাকে। ৫. পুকুরের পানি থেকে আমরা কীভাবে নিরাপদ পানি পেতে পারি? উত্তর : পুকুরের পানিকে ফুটিয়ে অথবা রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিরাপদ পানিতে পরিণত করা যায়। প্রথমে এ পানিকে ছাঁকন বা থিতানোর মাধ্যমে পরিষ্কার করে নিতে হয়। নিচে প্রক্রিয়াগুলো ব্যাখ্যা করা হলো- ছাঁকন : পাতলা কাপড় বা ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে পানি পরিষ্কার করার প্রক্রিয়াই হলো ছাঁকন। থিতানো : একটি কলসি বা পাত্রে পুকুরের পানি নিয়ে রেখে দিলে। কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে পাত্রের তলায় তলানি জমেছে। ওপরের অংশের পানি পরিষ্কার হয়েছে। পানিতে থাকা ময়লা যেমন : বালি, কাদা ইত্যাদি সরানোর এই প্রক্রিয়াই হলো থিতানো। ফুটানো : পানি জীবাণুমুক্ত করার একটি ভালো উপায় হলো ফুটানো। জীবাণুমুক্ত নিরাপদ পানির জন্য ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে পানি ফুটাতে হবে। রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পানি বিশুদ্ধকরণ : এ ক্ষেত্রে ফিটকিরি, বিস্নচিং পাউডার, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ইত্যাদি পরিমাণমতো মিশিয়ে আমরা পানি নিরাপদ করতে পারি। ৬. ঠান্ডা পানির গস্নাসের গায়ে লেগে থাকা পানির কণা এবং শিশির কেন একই রকম? উত্তর : রাতে ঘাস, গাছপালা ইত্যাদির ওপর যে বিন্দু বিন্দু পানি জমে তাকে শিশির বলে। বায়ু যখন ঠান্ডা কোনো বস্তুর সংস্পর্শে আসে, তখন বায়ুতে থাকা জলীয়বাষ্প ঠান্ডা হয়ে পানির ফোঁটা হিসেবে জমা হয়। কাচের গস্নাসে বরফের টুকরা রাখলে গস্নাসটি ঠান্ডা হয়ে যায়। বাতাসের জলীয়বাষ্প ঠান্ডা গস্নাসের সংস্পর্শে এসে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে পানির কণায় পরিণত হয় এবং গস্নাসের বাইরের গায়ে তা বিন্দু বিন্দু পানি হিসেবে জমা হয়। গস্নাসের বাইরের গায়ে লেগে থাকা পানির কণা এবং শিশির একই রকম। কারণ উভয়ের মূল গঠন উপাদান পানি। বাতাসের জলীয়বাষ্প, গস্নাসের গায়ে লেগে থাকা পানি ও শিশির- পানির বিভিন্ন রূপ ছাড়া কিছুই নয়। প্রশ্ন : পানিদূষণ কাকে বলে? পানিদূষণ প্রতিরোধের উপায়গুলো লেখো। উত্তর : যেসব কারণে পানি পান করা ও অন্যান্য কাজে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়, তাকে পানিদূষণ বলে। পানিদূষণ প্রতিরোধের উপায়গুলো হলো- ১. কৃষিতে কীটনাশক এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো; ২. রান্নাঘরের নিষ্কাশন নালায় ও টয়লেটে রাসায়নিক বর্জ্য এবং তেল না ফেলা; ৩. পুকুর, নদী, হ্রদ কিংবা সাগরে ময়লা-আবর্জনা না ফেলা; ৪. সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা ময়লা এবং হ্রদ কিংবা নদীতে ভাসমান ময়লা-আবর্জনা কুড়িয়ে পানিদূষণ রোধ করো। \হপরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়