বিজ্ঞানী নিউটন

প্রকাশ | ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

শিক্ষা জগৎ ডেস্ক
নাম:স্যার আইজ্যাক নিউটন জন্ম:৪ জানুয়ারি, ১৬৪৩ মৃতু্য:৩১ মার্চ, ১৭২৭ স্যার আইজ্যাক নিউটন বলেছিলেন, 'আমি জানি না বিশ্বের কাছে আমি কীভাবে উপস্থাপিত হয়েছি, কিন্তু আমার কাছে নিজেকে মনে হয় এক ছোট বালক, যে কেবল সমুদ্র তীরে খেলা করছে এবং একটি ক্ষুদ্রতর এবং খুব সাধারণ পাথর সন্ধান করছে, অথচ সত্যের মহাসমুদ্র তার সম্মুখে পড়ে রয়েছে- যা অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেল।' অসম্ভব বিনয়ী বিশ্বখ্যাত এই বিজ্ঞানী ছিলেন প্রখ্যাত ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, প্রাকৃতিক দার্শনিক এবং আলকেমিস্ট। অনেকের মতে, নিউটন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানী। গাছ থেকে একটি আপেল পড়তে দেখে নিউটন প্রথম সর্বজনীন মহাকর্ষ বলের সূত্র নিয়ে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন বলে একটি বিখ্যাত গল্পে প্রচলিত রয়েছে। কার্টুনের মাধ্যমে আরও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে, আপেলটি আসলে নিউটনের মাথায় আঘাত করেছিল এবং এ কারণেই মহাকর্ষের বুদ্ধিটি তার মাথায় খেলে যায়। নিউটনের ভাইয়ের মেয়ের স্বামী এবং রয়েল মিন্টে তার সহকারী জন কন্ডুইট নিউটনের জীবনী লিখতে গিয়ে এই ঘটনাটির বর্ণনা দিয়েছেন। ১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে তার বিশ্বনন্দিত গ্রন্থ ফিলোসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা প্রকাশিত হয়- যাতে তিনি সর্বজনীন মহাকর্ষ এবং গতির তিনটি সূত্র বিধৃত করেছিলেন। বলবিজ্ঞানের ভিত্তিভূমি রচনা করেছেন নিউটন। রৈখিক এবং কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্রের মাধ্যমে তিনি এই ভিত্তি রচনা করেন। গণিতের জগতেও নিউটনের জুড়ি মেলা ভার। নিউটন এবং গটফ্রিড লাইবনিৎস যৌথভাবে ক্যালকুলাস নামে গণিতের একটি নতুন শাখার পত্তন ঘটান। ১৬৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জানুয়ারিতে জন্মগ্রহণ করেন এই মহান বিজ্ঞানী। তার জন্মস্থান লিংকনশায়ারের উল্‌সথর্প ম্যানরে। তিনি তার বাবা আইজ্যাকের মৃতু্যর তিন মাস পর জন্ম নেন। তার বাবা গ্রামের একজন সাধারণ কৃষক ছিলেন। জন্মের সময় নিউটনের আকার-আকৃতি ছিল খুবই ছোট। তার মা হানাহ্‌ এইসকফ প্রায়ই বলতেন, ছোট্টবেলার সেই নিউটনকে অনায়াসে একটি কোয়ার্ট মগের ভেতর ঢুকিয়ে দেওয়া যেত। নিউটনের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় বাড়ির পাশের এক ক্ষুদ্র্রায়তন স্কুলে। ১২ বছর বয়সে তাকে গ্রান্থামের ব্যাকরণ স্কুলে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে তিনি এক ওষুধ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতার বাড়িতে থাকতেন। এই স্কুলে নিউটন ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। চাচার উপদেশ শুনেই পরিবার থেকে তাকে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে পড়াশোনার জন্য পাঠানো হয়। নিউটন ট্রিনিটি কলেজ থেকে ১৬৬১ খ্রিষ্টাব্দে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি তার পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য কলেজের বিভিন্ন স্থানে ভৃত্যের কাজ করতেন। ট্রিনিটি কলেজে প্রথমে তিনি কেপলারের আলোক বিজ্ঞান বিষয়ক সূত্রের ওপর অধ্যয়ন করেন। এরপর অবশ্য তিনি ইউক্লিডের জ্যামিতির প্রতি মনোনিবেশ করেন। স্নাতক শিক্ষা গ্রহণকালে নিউটন একটি ছোট বইয়ের তাক বা এ ধরনের কোনো স্থানে তার সব বই সাজিয়ে রাখতেন। সে সময়ের লেখাগুলোর বিষয়ের মধ্যে রয়েছে: কৌণিক বিভাজন, বক্রসমূহের বর্গকরণ, সংগীতের অনন্য সুর সম্বন্ধে কিছু গাণিতিক হিসাব, ভিয়েটা এবং ভ্যান স্কুটেনের জ্যামিতিক সমস্যা, ওয়ালিস রচিত এরিথমেটিক অব ইনফিনিটিস বইয়ের ওপর কিছু মন্তব্য, গোলীয় আলোক গস্নাসের ঘর্ষণের ফলাফল, লেন্সের ত্রম্নটি এবং সব ধরনের মূল বের করার সূত্র। ১৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ট্রিনিটি কলেজ নিউটনকে ফেলো নির্বাচিত করে এবং এর দুই বছর পর তিনি সেখানকার গণিত বিভাগের লুকাসীয় অধ্যাপক নিযুক্ত হন। জীবনের শেষ ৩০ বছর নিউটন গাণিতিক মূলনীতিসমূহের ওপর খুব কমই মৌলিক অবদান রাখতে পেরেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে তার উৎসাহ এবং দক্ষতার কোনো অভাব তখনও ছিল না। ১৬৯৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি এক রাতে একটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে ফেলেন। এই সমস্যাটি বার্নোলি একটি প্রতিযোগিতায় প্রস্তাব করেছিলেন এবং এর সমাধানের সময় বরাদ্দ ছিল ৬ মাস। আবার ১৭১৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মাত্র কয়েক ঘণ্টায় একটি সমস্যার সমাধান করে ফেলেন। বিজ্ঞানী লাইবনিৎস এই সমস্যাটিকে ইংরেজ বিশেষজ্ঞদের জন্য রোমহর্ষক এবং দুঃসাধ্য বলে উলেস্নখ করেছিলেন। এ সময় দুইটি বিষয়ে তিনি বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন। একটি হলো তার কিছু জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার জ্যোতির্বিজ্ঞানী রয়েলের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে খাপ খায়নি। এ নিয়ে একটি বিতর্ক ছিল। অন্যটি হলো ক্যালকুলাস আবিষ্কার নিয়ে লাইবনিৎসের সঙ্গে বিতর্ক ও বিরোধ। তিনি প্রিন্সিপিয়া গ্রন্থটিকে পুনরায় সংশোধন করে ১৭১৩ খ্রিস্টাব্দে এর নতুন সংস্করণ প্রকাশ করেন। নিউটনের বৈজ্ঞানিক গবেষণাসমূহ তাকে প্রভূত সম্মান এনে দিয়েছিল। তিনি ইংল্যান্ডের বিচারালয়ে একজন জনপ্রিয় পরিদর্শক ছিলেন। ১৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নাইট উপাধিতে ভূষিত হন। সমগ্র মহাদেশ থেকেই তার জন্য বিভিন্ন সম্মাননা এসেছিল। তখনকার নেতৃস্থানীয় সব বিজ্ঞানীর সঙ্গেই তার যোগাযোগ ছিল। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য এত অধিকসংখ্যক বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান ছাত্রের আগমন ঘটতো যে তিনি বিরক্ত হয়ে যেতেন। ১৬৭০ থেকে ১৬৭২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত নিউটন আলোক বিজ্ঞানের ওপর বক্তৃতা প্রদান করেন। এ সময় তিনি আলোর প্রতিসরণ আবিষ্কার করেন। প্রিজম পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি এ আবিষ্কার করেছিলেন। ৭২৫ খ্রিস্টাব্দের পর নিউটনের স্বাস্থ্যের ব্যাপক অবনতি ঘটে। এর ফলে একজন ডেপুটি মিন্টে তার কাজ মওকুফ করার ব্যবস্থা করে দেন। ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রম্নয়ারি মাসে তিনি শেষবারের মতো রয়েল সোসাইটির সভাপতি হিসেবে কার্য পরিচালনা করেন। ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দ থেকেই তিনি এই সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ ৮৫ বছর বয়সে তিনি মৃতু্যবরণ করেন। তাকে লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবি-তে সমাধিস্থ করা হয়।