বিজ্ঞান

পঞ্চম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশ | ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম
১০। পরিবেশে কীভাবে খাদ্যজাল তৈরি হয়? উত্তর : পরিবেশে একাধিক খাদ্যশৃঙ্খল একত্রিত হয়ে খাদ্যজাল তৈরি হয়। যে কোনো বাস্তুসংস্থানে অনেক খাদ্যশৃঙ্খল থাকে। এসব খাদ্যশৃঙ্খল কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং বিভিন্ন খাদ্যশৃঙ্খল পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। বাস্তুসংস্থানের সব উদ্ভিদ ও প্রাণী কোনো না কোনো খাদ্যশৃঙ্খলের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- ঈগল, সাপ, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, ব্যাঙ ও অন্যান্য প্রাণী খেয়ে থাকে। এটি একটি খাদ্যশৃঙ্খল। আবার সাপ খরগোশ, ইঁদুর, ব্যাঙ ও অন্যান্য প্রাণী খায়। এটি আরেকটি খাদ্যশৃঙ্খল। এভাবে একাধিক খাদ্যশৃঙ্খল একত্রিত হয়ে খাদ্যজাল তৈরি করে। ১১। উদ্ভিদ ও প্রাণীর নির্ভরশীলতা কোন শক্তির কারণে গড়ে উঠেছে? উদ্ভিদ ও প্রাণীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ক্ষেত্র উলেস্নখ করো। উত্তর : উদ্ভিদ ও প্রাণীর নির্ভরশীলতা সৌরশক্তির কারণে গড়ে উঠেছে। উদ্ভিদ ও প্রাণীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ক্ষেত্র নিচে উলেস্নখ করা হলো- (র) প্রতিটি জীব শ্বাসকার্যে অক্সিজেন ব্যবহার করে ও কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে। সবুজ উদ্ভিদ খাদ্য তৈরিতে এই কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করে ও অক্সিজেন ত্যাগ করে। (রর) সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করে। প্রাণীরা খাদ্যের জন্য সবুজ উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। আবার মৃত জীবদেহ মাটিতে মিশে গিয়ে প্রাকৃতিকভাবে সারে পরিণত হয় এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। আর এ পুষ্টি উপাদানগুলো উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য একান্ত প্রয়োজন। (ররর) কীট-পতঙ্গ, পাখি ইত্যাদি প্রাণীর মাধ্যমে উদ্ভিদের পরাগায়ণ ঘটে। পরাগায়ণের জন্য ফল সৃষ্টি হয়, যা প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। (রা) অনেক প্রাণীর মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভিদের বীজ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং নতুন নতুন উদ্ভিদ আবাস সৃষ্টি হয়। আবার অনেক উদ্ভিদ আছে যেগুলো বিভিন্ন প্রাণী এবং কীটপতঙ্গের আবাসস্থল। ১২। পরিবেশের ওপর জীবের নির্ভরশীলতার দুটি উদাহরণ দাও। উত্তর : জীব বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশের মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদি উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। পরিবেশের ওপর জীবের নির্ভরশীলতার দুটি উদাহরণ নিচে উলেস্নখ করা হলো- (র) বায়ু ছাড়া জীব বেঁচে থাকতে পারে না। কারণ জীব তার শ্বাসকার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পরিবেশের উপাদান বায়ু থেকে পায়। (রর) পানি ছাড়া কোনো জীব বাঁচতে পারে না। পরিবেশের উপাদান মাটির ওপর ও নিচ থেকে জীব পানি সংগ্রহ করে। ১৩। তুমি কী কী কারণে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল তা পাঁচটি বাক্যে লেখো। উত্তর : আমি বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। যেমন- (র) উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় যে অক্সিজেন ত্যাগ করে আমি তা শ্বাসকার্যে ব্যবহার করে বেঁচে থাকি। (রর) উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ, যেমন- কান্ড, শাখা ও ফলমূল আমি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি। (ররর) আমি উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক তন্তু নির্মিত পোশাক পরিধান করি। (রা) আমি বাসস্থান ও বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরিতে উদ্ভিদ ব্যবহার করি। (া) উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করে আমি রোগের প্রতিরোধ ও প্রতিকার করি। ১৪। রাজুদের স্কুলের মাঠে বড় একটি বটগাছ আছে। গাছটি কোন কোন ক্ষেত্রে রাজু ও অন্যান্য প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল? উত্তর : উদ্ভিদ ও প্রাণী পরস্পর নির্ভরশীল। রাজুদের স্কুলের মাঠে থাকা বটগাছটি নানাভাবে রাজু ও অন্যান্য প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল। যেমন- (র) রাজু ও অন্যান্য প্রাণী শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে যে কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে বটগাছটি তা ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করে। (রর) পাখি, মৌমাছি ইত্যাদি বটগাছটির পরাগায়নে সাহায্য করে। (ররর) রাজু ও অন্যান্য প্রাণী, যেমন- পাখি গাছটির বীজের বিস্তরণে সাহায্য করে বলে গাছটির নতুন নতুন আবাস গড়ে ওঠে। (রা) বিভিন্ন প্রাণীর মৃতদেহ প্রাকৃতিকভাবে সারে পরিণত হয়, যা পুষ্টি হিসেবে ব্যবহার করে বটগাছটি বেড়ে ওঠে। ১৫। বাস্তুসংস্থান কাকে বলে? বাস্তুসংস্থানের উপাদানগুলোর ওপর মানুষ নির্ভরশীল কেন? একটি বাস্তুসংস্থানে ঈগলের সংখ্যা কমে গেলে পরিবেশে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে? উত্তর : কোনো স্থানের সব জীব ও জড় এবং তাদের মধ্যকার পারস্পরিক ক্রিয়াই হলো ওই স্থানের বাস্তুসংস্থান। মানুষ বাস্তুসংস্থানের জীব ও জড় উপাদানের ওপর খাদ্য ও বেঁচে থাকার বিভিন্ন নিয়ামকের জন্য নির্ভরশীল। যেমন- খাদ্যের জন্য মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন জড় উপাদানের মধ্যে মানুষের শ্বাস গ্রহণের জন্য বায়ু, পান করার জন্য পানি, পুষ্টির জন্য খাদ্য, ফসল ফলানো ও বাসস্থান তৈরির জন্য মাটি প্রয়োজন। তাছাড়া জীবনযাপনের জন্য বাসস্থান, আসবাবপত্র, পোশাক, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি প্রয়োজন। একটি বাস্তুসংস্থানের খাদ্যজালে থাকা ঈগলের সংখ্যা কমে গেলে ঈগল যেসব প্রাণীকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত সেগুলোর সংখ্যা বেড়ে যাবে। যেমন- ঈগলের খাদ্য হলো ইঁদুর, সাপ, কাঠবিড়ালি, পতঙ্গভোজী পাখি ইত্যাদি। ঈগলের সংখ্যা কমে গেলে ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে যাবে। ফলে ইঁদুর ফসলের ক্ষতি সাধন করবে, তৃণজাতীয় উদ্ভিদের পরিমাণ কমে যাবে যা ঘাসফড়িং, খরগোশ ও অন্য তৃণভোজী প্রাণীদের প্রভাবিত করবে। আবার ঈগলের সংখ্যা কমে গেলে পরিবেশের সাপের সংখ্যা বেড়ে যাবে, যা খরগোশের জীবন বিপন্ন করে তুলবে। অন্যদিকে ঈগলের সংখ্যা কমে গেলে পতঙ্গভোজী পাখির সংখ্যা বেড়ে গিয়ে ঘাসফড়িংয়ের জীবন বিপন্ন হবে। ১৬। উদ্ভিদ ও প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য কেন মাটি, পানি ও বায়ু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ? পাঁচটি বাক্য লেখো। উত্তর : উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য মাটি, পানি ও বায়ু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ- (র) মাটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল। (রর) উদ্ভিদ মাটি থেকে পানি সংগ্রহ করে খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার করে এবং প্রাণীর সে খাদ্য খেয়ে বেঁচে থাকে। (ররর) প্রাণীর মৃতদেহ মাটিতে মিশে প্রাকৃতিক সারে পরিণত হয়, যা উদ্ভিদ পুষ্টি দ্রব্য হিসেবে গ্রহণ করে। (রা) উদ্ভিদ ও প্রাণী বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে শ্বসনকার্যে ব্যবহার করে। (া) উদ্ভিদ বায়ুতে যে অক্সিজেন নির্গত করে তা প্রাণী গ্রহণ করে বেঁচে থাকে এবং প্রাণী দেহ থেকে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইড উদ্ভিদ খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার করে।