বিজ্ঞান

পঞ্চম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশ | ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

রোমানা হাবিব চৌধুরী, সহকারী শিক্ষক, ব্রাইট ফোর টিউটোরিয়াল হোম, চট্টগ্রাম
আমাদের পরিবেশ ১। খাদ্যজাল ও খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে পার্থক্য কী? উত্তর : খাদ্যজাল ও খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে পার্থক্য হলো- খাদ্যজাল : ক। যে কোনো বাস্তুসংস্থানে বিদ্যমান একাধিক খাদ্যশৃঙ্খল একটি অন্যটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে খাদ্যজাল তৈরি করে। খ। এটি বিভিন্ন খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে। গ। খাদ্যজালে দুই বা ততোধিক খাদ্যশৃঙ্খল থাকে। ঘ। খাদ্যজাল একটি বৃহৎ প্রক্রিয়া। ঙ। একটি পরিবেশে একটি খাদ্যজাল থাকে। খাদ্যশৃঙ্খল : ক। বাস্তুসংস্থানে উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে শক্তিপ্রবাহের ধারাবাহিক প্রক্রিয়াকে বলে খাদ্যশৃঙ্খল। খ। এটি জীব পরিবেশের উপাদানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতাকে প্রকাশ করে। গ। খাদ্যশৃঙ্খলে উৎপাদক হিসেবে সবুজ উদ্ভিদ ও খাদক হিসেবে দুই বা ততোধিক প্রাণী থাকে। ঘ। খাদ্যশৃঙ্খল একটি ক্ষুদ্র প্রক্রিয়া। ঙ। একটি পরিবেশে অনেক খাদ্যশৃঙ্খল থাকতে পারে। ২। উদ্ভিদ কীসের জন্য প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল? উত্তর : উদ্ভিদ তার খাদ্য তৈরি, বৃদ্ধি, পরাগায়ন ও বীজের বিস্তরণের জন্য প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদ খাদ্য তৈরির জন্য প্রাণীর ত্যাগ করা কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করে। পুষ্টি উপাদানের জন্যও উদ্ভিদ প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল। প্রাণীর মৃতদেহ প্রাকৃতিক সারে পরিণত হয়। এই সার পুষ্টি হিসেবে ব্যবহার করে উদ্ভিদ বেড়ে ওঠে। পাখি, মৌমাছি ইত্যাদি প্রাণী উদ্ভিদের পরাগায়নে সাহায্য করে। আবার পাখি, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী উদ্ভিদের বীজের বিস্তরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৩। মানুষ নির্ভর করে এমন তিনটি জড় বস্তুর উদাহরণ দাও। উত্তর : বেঁচে থাকার জন্য মানুষ বিভিন্ন জড় বস্তুর ওপর নির্ভর করে। এই জড় উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- বায়ু, পানি ও খাদ্য। মানুষ শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে বায়ু থেকে অক্সিজেন নেয়। পান করার জন্য মানুষের পানি প্রয়োজন। আবার দৈহিক পুষ্টির জন্য মানুষ খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল। ৪। খাদ্যশৃঙ্খলে কীভাবে সাপ এবং ঈগল একই রকম তা ব্যাখ্যা করো। উত্তর : বাস্তুসংস্থানে উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে শক্তিপ্রবাহের ধারাবাহিক প্রক্রিয়াই হলো খাদ্যশৃঙ্খল। খাদ্যশৃঙ্খলে সাপ ও ঈগল উভয়ই একই রকম তা ব্যাখ্যা করা হলো- খাদ্যশৃঙ্খলে সাপ এবং ঈগল উভয়ই মাংসাশী প্রাণী বলে তারা একই রকম অর্থাৎ একই স্তরের খাদক। বাস্তুতন্ত্রের দুটি জীব উপাদান হলো উৎপাদক ও খাদক। একমাত্র সবুজ উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে বলে তাদের উৎপাদক বলা হয়। প্রাণীরা খাদ্য উৎপাদন করতে পারে না বলে খাদক হিসেবে বিবেচিত। প্রথম স্তরের প্রাণীরা তৃণভোজী, যেমন- ঘাসফড়িং। দ্বিতীয় স্তরের প্রাণীরা মাংসাশী এবং প্রথম স্তরের খাদকদের খেয়ে বেঁচে থাকে। তৃতীয় স্তরের খাদকরা দ্বিতীয় স্তরের খাদকদের খেয়ে বেঁচে থাকে। খাদ্যশৃঙ্খলে সাপ খায় ব্যাঙকে আবার ঈগল খায় সাপকে। কাজেই ঈগল ও সাপ উভয়ই মাংসাশী প্রাণী এবং এরা একই রকম। ৫। নিচের শব্দগুলো নিয়ে গঠিত খাদ্যশৃঙ্খলের সঠিক ক্রম ব্যাখ্যা করো। ঈগল, সূর্য, ঘাস, পোকামাকড়, সাপ, ব্যাঙ। উত্তর : বাস্তুতন্ত্রের দুটি জীব উপাদান হলো উৎপাদক ও খাদক। সবুজ উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে বলে তাদের উৎপাদক বলা হয়। প্রাণীরা খাদ্য উৎপাদন করতে পারে না। এরা খাদক হিসেবে বিবেচিত। ঈগল, সূর্য, ঘাস, পোকামাকড়, সাপ, ব্যাঙ শব্দগুলো নিয়ে গঠিত খাদ্যশৃঙ্খলটি হলো- সূর্য-ঘাস-পোকামাকড়-ব্যাঙ-সাপ-ঈগল। সকল শক্তির উৎস সূর্য। এই শক্তি উৎপাদকের মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরের খাদকের দেহে পর্যায়ক্রমে সঞ্চারিত হয়। ঘাস সূর্যের আলো ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করে, পোকামাকড় ঘাস ও অন্যান্য উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে, ব্যাঙ পোকামাকড় খায়। একইভাবে সাপ ব্যাঙ খায় এবং ঈগল সাপ খায়। এভাবে খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে শক্তিপ্রবাহ সূর্য থেকে ঈগল পর্যন্ত সঞ্চারিত হয়। ৬। বায়ুর ওপর জীব কীভাবে নির্ভরশীল তা ব্যাখ্যা করো। উত্তর : বেঁচে থাকার জন্য জীব পরিবেশের বিভিন্ন জড় উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। জীবের অন্তর্ভুক্ত হলো মানুষ, অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ আর বায়ু গুরুত্বপূর্ণ একটি জড় উপাদান। বায়ুতে রয়েছে অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন ইত্যাদি গ্যাসীয় পদার্থ। বায়ুর এই উপাদানগুলোর জন্যই জীব বায়ুর ওপর নির্ভরশীল। যেমন- (র) প্রতিটি জীবের শ্বসন তথ্য শ্বাসের জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন। শ্বসনের ফলে উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড বায়ুতে নির্গত হয়। (রর) সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরিতে বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করে। (ররর) বায়ুতে থাকা নাইট্রোজেন উদ্ভিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। ৭। উদ্ভিদের জন্য বীজের বিস্তরণ কেন গুরুত্বপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করো। উত্তর : নতুন নতুন উদ্ভিদ আবাস গড়ে তোলার জন্য উদ্ভিদের বীজের বিস্তরণ গুরুত্বপূর্ণ। মাতৃ উদ্ভিদ থেকে বিভিন্ন স্থানে বীজের ছড়িয়ে পড়াই হলো বীজের বিস্তরণ। নতুন নতুন উদ্ভিদ আবাস গড়ে তুলতে বীজের বিস্তরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বীজের বিস্তরণ না ঘটলে কোনো উদ্ভিদ শুধু একটি নির্দিষ্ট স্থানেই জন্মাবে। অন্য কোথাও ওই উদ্ভিদকে আর পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ পৃথিবীর সব স্থানে শুধু একই ধরনের উদ্ভিদ জন্মাবে। ফলে অন্য উদ্ভিদের পুষ্টি ব্যাহত হবে। এছাড়া বীজের বিস্তরণ না ঘটলে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর খাদ্যের অভাব দেখা দেবে এবং পশুপাখির আশ্রয়স্থল ধ্বংস হবে। খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাবে অনেক প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটবে। ফলে জীববৈচিত্র্যে ভারসাম্য নষ্ট হবে। সুতরাং কোনো একটি উদ্ভিদের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে নতুন নতুন আবাস গড়ে তুলতে বীজের বিস্তরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৮। তোমার টেবিলের ওপরে রাখা গাছটি মারা যাচ্ছে। তোমার বন্ধুরা গাছটিকে জানালার পাশে নিয়ে রাখার পরামার্শ দিল। কেন? উত্তর : টেবিলে রাখা মরণাপন্ন গাছটির খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া চালু করার জন্য আমার বন্ধুরা গাছটিকে জানালার পাশে নিয়ে রাখার পরামর্শ দিল। সবুজ উদ্ভিদ পাতায় থাকা ক্লোরোফিলের সাহায্যে মাটির পানি, বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইড ও সূর্যালোকের উপস্থিতিতে শর্করাজাতীয় খাদ্য তৈরি করে। বাস্তুসংস্থানে থাকা উপাদানগুলোর মধ্যে একমাত্র সবুজ উদ্ভিদই খাদ্য উৎপাদক। কিন্তু সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে এ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকে। তাই টেবিলের ওপরে রাখা গাছটি মারা যাচ্ছিল। গাছটিকে জানালার পাশে নিয়ে এলে তা আবার সজীব হয়ে ওঠে। ৯। কীভাবে পরিবেশে খাদ্যশৃঙ্খল তৈরি হয়? উত্তর : বাস্তুসংস্থানে খাদ্য উৎপাদক সবুজ উদ্ভিদ ও খাদ্য গ্রহণকারী অন্যান্য প্রাণীর (খাদক) পারস্পরিক ক্রিয়ার ফলে খাদ্যশৃঙ্খল তৈরি হয়। সব প্রাণীর শক্তির জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদ সূর্যের আলো ব্যবহার করে নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করে। পোকা-মাকড় উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকে। আবার ব্যাঙ পোকা-মাকড়কে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। একইভাবে সাপ ব্যাঙ খায় এবং ঈগল সাপ খায়। এভাবেই শক্তি উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে প্রবাহিত হয়। বাস্তুসংস্থানে উদ্ভিদ থেকে প্রাণীতে শক্তিপ্রবাহের এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়াই হলো খাদ্যশৃঙ্খল। সবুজ উদ্ভিদ থেকে প্রতিটি খাদ্যশৃঙ্খলের শুরু। হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়