শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

সুধীরবরণ মাঝি শিক্ষক, হাইমচর সরকারি মহাবিদ্যালয় হাইমচর, চাঁদপুর য়
  ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন :পানির অভাবে প্রকৃতির ওপর কী ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : পানি অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। প্রকৃতির সজীবতা বজায় রাখতে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু পানির অভাবে প্রকৃতির বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। নদীর তীরে যেসব গাছপালা, বাগানবাড়ি, সবুজ বৃক্ষের সমারোহ গড়ে ওঠে সেগুলো পানির অভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এর ফলে মানুষ, মাছ, পশু-পাখি ও গাছ-তরুলতার অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ কেন প্রচুর সৌরশক্তি পেয়ে থাকে?

উত্তর : নিরক্ষীয় নিম্ন অক্ষাংশ অঞ্চলে সূর্য বছরের প্রায় সব সময়ই লম্বভাবে কিরণ দেয়। বাংলাদেশ নিরক্ষীয় বা ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত। এ কারণে বছরের অধিকাংশ সময়ই সূর্য এ দেশে লম্বভাবে কিরণ দেয়। যার ফলে বাংলাদেশ সহজেই প্রচুর সৌরশক্তি পেয়ে থাকে।

প্রশ্ন : ফেনী নদী কীভাবে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : ফেনী নদী পার্বত্য ত্রিপুরায় উৎপত্তি হয়েছে। এরপর ফেনী জেলায় প্রবেশ করেছে। সন্দ্বীপের উত্তরে ফেনী নদী বঙ্গোপসাগরের দিকে ধাবিত হয়েছে এবং বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।

প্রশ্ন : কীভাবে নাব্য সংকট দূর করা যায়?

উত্তর : দেশের নদ-নদীগুলো পলি পড়ে ভরাট হয়ে যায়। এর ফলে অনেক নদী শুকিয়ে যায়। এসব নদীতে তখন খনন সম্পাদন করে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করা যায় এবং পানির প্রবাহ সংরক্ষণের মাধ্যমে নাব্য সংকট দূর করা যায়।

প্রশ্ন : নদী শুকিয়ে গেলে জনবসতি হ্রাস পায় কেন?

উত্তর : নদী শুকিয়ে গেলে মানুষের কৃষি, বাণিজ্য, মৎস্য চাষ, যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। তখন মানুষের জীবিকা সংস্থান কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে নদীর তীরে গড়ে ওঠা বসতি ভেঙে যায়। নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষ তখন অন্যত্র জীবন ও জীবিকার সন্ধানে তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। তাই নদী শুকিয়ে গেলে জনবসতি হ্রাস পায়।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের স্রোতজ (ম্যানগ্রোভ) বা গরান বনভূমি সম্পর্কে যা জান লেখ।

উত্তর : বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলার উপকূলে জোয়ার-ভাটার লোনা ও ভেজা মাটিতে যেসব উদ্ভিদ জন্মায় তাদের স্রোতজ বা গরান বনভূমি বলা হয়। প্রধানত সুন্দরবনে এটি বেশি জন্ম নেয়। স্যাঁতসেঁতে লোনা পানিতে সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, ধুন্দল, কেওড়া, বায়েন, গরান ইত্যাদি বৃক্ষ জন্মে। বাংলাদেশে মোট ৪,১৯২ বর্গকিলোমিটার স্রোতজ (ম্যানগ্রোভ) বা গরান বনভূমি রয়েছে।

প্রশ্ন : ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোকে কেন প্রচুর জ্বালানি সম্পদ ব্যয় করতে হয়?

উত্তর : ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোতে সূর্য বছরে কয়েক মাস বাঁকাভাবে কিরণ দেয়। কখনো কখনো সূর্য প্রায় দেখাই যায় না। ফলে সেই দেশগুলো সূর্যের কিরণ পায় না। এর ফলে সেসব দেশের রাষ্ট্র ও জনগণকে বাড়ি-ঘর বসবাসের উপযোগী রাখতে প্রচুর জ্বালানি সম্পদ ব্যয় করতে হয়।

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন:জাহিদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ছুটিতে সে তার বিদেশি সহপাঠীদের সেখানকার বনভূমিতে বেড়াতে নিয়ে যায়। সেগুন, গর্জন, জারুল বৃক্ষেশোভিত বনভূমিটির সৌন্দর্য তাদের মুগ্ধ করে। ফেরার পথে জাহিদ তাদের অঞ্চলটির প্রধান নদীটির তীরে নিয়ে যায় এবং বলে যে, আমাদের এই নদীটি অফুরন্ত শক্তির উৎস।

ক. নাফ কী?

খ. ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদী সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা কর।

গ. অনুচ্ছেদে বর্ণিত বনভূমিটির বৃক্ষের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।

ঘ. জাহিদের করা মন্তব্যটির যথার্থতা তোমার পঠিত বিষয়বস্তুর আলোকে বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:

ক. নাফ একটি নদীর নাম।

খ. তিব্বতের মানস সরোবরে ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি হয়েছে। ১৭৮৭ সালের আগে ব্রহ্মপুত্রের প্রধান ধারাটি ময়মনসিংহের মধ্য দিয়ে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আড়াআড়িভাবে প্রবাহিত হতো। কিন্তু ১৭৮৭ সালে সংঘটিত ভূমিকম্পে ব্রহ্মপুত্রের তলদেশ উত্থিত হওয়ায় পানি ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে যায় এবং নতুন স্রোতধারার শাখা নদীর সৃষ্টি হয়। নতুন স্রোতধারাটি যমুনা নামে পরিচিত হয়।

গ. অনুচ্ছেদে বর্ণিত বনভূমিতে সেগুন, গর্জন, জারুল প্রভৃতি গাছ রয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, বনভূমিটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অংশের পাহাড়ি অঞ্চলের ক্রান্তীয় চিরহরিৎ এবং পত্রপতনশীল বনভূমি। এই বনভূমি উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এখানকার গাছগুলোর পাতা একত্রে ফোটেও না, আবার একত্রে ঝরেও না। ফলে সারা বছর বনভূমিগুলো সবুজ থাকে। সে কারণেই এসব বনকে চিরহরিৎ বা চিরসবুজ বনভূমি বলে। চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান ও সিলেট এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এই বনভূমির পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার বর্গকিলোমিটার। চাপালিশ, ময়না, তেলসুর, মেহগনি, জারুল, সেগুন, গর্জন ইত্যাদি এই বনভূমির উলেস্নখযোগ্য গাছ। সিলেটের পাহাড়ে প্রচুর বাঁশ ও বেত জন্মে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে রাবার চাষও হয়।

ঘ. জাহিদ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীকে উদ্দেশ্য করে বলেছে, আমাদের এই নদীটি অফুরন্ত শক্তির উৎস। নিচে জাহিদের করা মন্তব্যটির যথার্থতা পঠিত বিষয়বস্তুর আলোকে বিশ্লেষণ করা হলো :

নদী ও জলপ্রপাতের পানির বেগ ব্যবহার করে টারবাইন যন্ত্রের সাহায্যে যে বিদু্যৎ উৎপাদন করা হয় তাকে জলবিদু্যৎ বলা হয়। এটি নবায়নযোগ্য শক্তিসম্পদ। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাই নামক স্থানে কর্ণফুলী নদীর গতিপথে বাঁধ দিয়ে পাকিস্তান আমলে প্রথম জলবিদু্যৎ উৎপাদন শুরু করা হয়। সবচেয়ে কম খরচে এই বিদু্যৎ উৎপাদন করা যায়। বর্তমান বিশ্বে তেল, গ্যাস বা পারমাণবিক চুলিস্ন ব্যবহারের মাধ্যমে যে বিদু্যৎ উৎপাদন করা হয়, এর উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। সেই তুলনায় জলবিদু্যতের খরচ অনেক কম। সে কারণে দেশের পানি সম্পদ ব্যবহার করে বিদু্যৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য লাভজনক। উপরিউক্ত আলোচনা হতে এটি প্রতীয়মান হয় যে, জাহিদের করা মন্তব্য অর্থাৎ কর্ণফুলী নদীটি অফুরন্ত শক্তির উৎস কথাটি যথার্থ।

হ পরবর্তী অংশ আগামী সংখ্যায়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে