মেলানিন এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ। যা মেলানোসাইট নামক কোষ থেকে তৈরি হয়, যার কারণে মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর চামড়া, চুল ও চোখের মণি পাখির পালক কালো হয়। মেলানিনের অনুপস্থিতিতে চামড়ায় কোনো রঞ্জক পদার্থ থাকে না, ফলে চামড়া সাদা হয়। এটাই অ্যালবিনিজম নামে পরিচিত।
ত্বকে উপস্থিত বিশেষ কোষ মেলানোসাইট থেকে উৎপন্ন হয়। মেলানিন নামক রঞ্জক যেটি ত্বকের বর্ণায়নের জন্য দায়ী। এ কোষগুলো কোনোভাবে আহত হলে মেলানিনের উপাদান ব্যাহত হয়। কিছু অসুখের ক্ষেত্রে শুধু দেহের অংশবিশেষের ফলে আক্রান্ত হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দেহেই এর প্রভাব দেখা যেতে পারে। অতিরিক্ত মেলানিনের উপস্থিতি ত্বকের রং গাঢ় করে এবং মেলানিনের অভাবে ত্বকের রং ফ্যাকাশে করে। মেলানিনের পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে নেমে গেলে কিছু রোগের উৎপত্তি হতে পারে, যেমন- ভিটিলেগো বা শ্বেতি যাতে ত্বকে সাদা ছোপ দেখা দেয়, আলবিনিজাম ইত্যাদি যা ত্বকের রঙকে প্রভাবিত করে।
লক্ষণ ও উপর্সগ :
১. চুল, দাড়ি, গোঁফ, ভ্রম্ন এবং চোখের পাতা খুব কম বয়সে সাদা হয়ে যায়।
২. মুখের অভ্যন্তরীণ অঞ্চলের চামড়ার রং নষ্ট হয়ে যায়।
৩. ত্বকের বর্ণলোপ।
৪. ত্বকের এক বা একাধিক অঞ্চলের বর্ণলোপ।
৫. সমগ্র দেহের বর্ণলোপ।
কারণগুলো : ত্বকে কিছু অন্তর্নিহিত অবস্থার জন্য মেলানোসাইট ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও মেলানিনের উপাদান ব্যাহত হয়, তার ফলস্বরূপ মেলানিনের অভাব ঘটতে পারে।
উত্তরাধিকার সূত্রে ঘঠিত মেলানিনের অভাব হলে মেলানিন শরীরে কম থাকে বা শরীরে থাকে না বলেই চলে। যেমন- আলবিনিজম।
অটোইমিউন রোগের ফলে শরীরের আঞ্চলিক বা সামগ্রিক মেলানোসাইট ধ্বংস হয়ে যাওয়া। যেমন- শ্বেতি।
আলসার, পোড়া, ফোসকা, সংক্রমণ ইত্যাদি আঘাতের ফলে ত্বকের কোপ নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং আহত অঞ্চলের মেলানিন প্রতিস্থাপিত না হওয়া।
নির্ণয় ও চিকিৎসা :
যে পদ্ধতির মাধ্যমে এটি নির্ণয় করা যায়।
১. রোগের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ইতিহাস।
২. সাদা ছোপ সন্ধানে শারীরিক পরীক্ষা।
৩. ডায়াবেটিস বা থাইরয়েডের সমস্যা শনাক্তকরণে রক্ত পরীক্ষা।
৪. আক্রান্ত ত্বকের বায়োপসি।
যে কারণে মেলানিনের অভাব ঘটেছে তার ওপরে এর চিকিৎসা নির্ভর করে। চিকিৎসক যে সব পরামর্শ দিয়ে থাকেন, সেগুলো হলো- কটিকোষ্টরয়েড ক্রিম, ন্যারো-ব্যান্ড আল্ট্রাভায়োলেট-বি থেরাপি, ফটোকেমোথেরাপি, লেসার ট্রিটমেন্ট।
এ রোগের ঘরোয়া কিছু প্রতিকার হলো- সানস্ক্রিনের ব্যবহার ও কনসিলার প্রভৃতি কসমেটিক্সের ব্যবহার।
ত্বক থেকে স্থায়ীভাবে মেলানিন কমানোর সব থেকে দ্রম্নত উপায় হলো লেজার চিকিৎসা। কিন্তু এ বিকল্পটি খুবই ব্যয়বহুল। এর বিকল্প হিসেবে কিছু ত্বক উজ্জ্বল করার ক্রিম দোকান থেকে অথবা একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে কিনতে পারেন। প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকার যেমন- হলুদ, অ্যালোভেরা, টমেটো, শশা, লেবু, আলু ইত্যাদিও ত্বকে মেলানিন হ্রাস করতে ব্যবহার করা হয়। মেলানিন ত্বককে ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
মেলানিন কমানোর কিছু ঘরোয়া প্রতিকার-
১. আলু ত্বকের ওপর এবং কালো ছোপের ওপর খুব ভালো কাজ করে। আলুর পেস্ট ত্বকে লাগালে কিছু দিনের মধ্যেই এর প্রভাব দেখা যাবে। এর ফলে ত্বকে মেলানিনের পরিমাণ কমে।
২. হলুদ, মেলানিনের মাত্রা কমাতে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করার একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এর পেস্টকে জলের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে, গলায় এবং হাতে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন, তারপরে ধুয়ে ফেলুন।
৩. শসা ত্বকে মেলানিনের মাত্রা কমানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায়। কিন্তু এটি যথেষ্ট ধীরে কাজ করে। শসাকে কেটে নিয়ে অথবা এর পেস্ট বানিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। এ উপায়টি অসুখের ছাপ ত্বক থেকে সরাতেও কাজে লাগে।
৪. অ্যালোভেরা ত্বকের সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। এটি ত্বককে উজ্জ্বল এবং সুস্থ রাখার জন্য ত্বকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানের জোগান দেয়। এ ছাড়া এটির প্রভাবে ত্বকে মেলানিনের মাত্রা কমে যায় এবং ত্বক আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। অ্যালোভেরার পেস্ট ত্বকে লাগানোর পর সেটিকে শুকোতে দিন, যাতে সব প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো ত্বকে যেতে পারে এবং সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে।