বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিজ্ঞানের যত কথা

তেজস্ক্রিয়তা
শিক্ষা জগৎ ডেস্ক য়
  ০৫ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

তেজস্ক্রিয়তা হলো কোনো ভারী মৌলিক পদার্থের একটি গুণ যেগুলোর নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি বিকরিত হয়।

আবিষ্কার: ফরাসি বিজ্ঞানী অঁতোয়ান অঁরি বেকরেল ১৮৯৬ সালে এক্স-রে নিয়ে গবেষণা করার সময় এমন একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রাকৃতিক ঘটনা আবিষ্কার করেন- যা সারা বিশ্বের বিজ্ঞান জগতে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করে। তিনি দেখতে পান যে, ইউরেনিয়াম ধাতুর নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবিরত বিশেষ ভেদন শক্তিসম্পন্ন রশ্মি বা বিকিরণ নির্গত হয়। তার নামানুসারে এই রশ্মির নাম দেওয়া হয় বেকারেল রশ্মি। তিনি লক্ষ্য করেন যে, মৌল থেকে এই রশ্মি নির্গত হয়, তা একটি সম্পূর্ণ নতুন মৌলে রূপান্তরিত না হওয়া পর্যন্ত এই রশ্মি নির্গমন অব্যাহত থাকে। পরবর্তীকালে মাদাম কুরি ও তার স্বামী পিয়ের কুরি ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে দেখতে পান যে রেডিয়াম, পোলোনিয়াম, থোরিয়াম, অ্যাক্টিনিয়াম প্রভৃতি ভারী মৌলের নিউক্লিয়াস থেকেও বেকরেল রশ্মির মতো একই ধরনের রশ্মি নির্গত হয়- যা এখন তেজস্ক্রিয় রশ্মি নামে পরিচিত। যে সব মৌল থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয় তাদের তেজস্ক্রিয় মৌল বলে। তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গমনের এই ঘটনাকে তেজস্ক্রিয়তা বলে।

বৈশিষ্ট্য : তেজস্ক্রিয় পদার্থ সাধারণত- আলফা, বিটা ও গামা এই তিন ধরনের তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই পজিট্রন, নিউট্রন, নিউট্রিনো, ইত্যাদিও নির্গত হতে পারে। তেজস্ক্রিয়তা একটি সম্পূর্ণ নিউক্লিয় ঘটনা, এর মাধ্যমে নিউক্লিয়াসের ভাঙনের ফলে একটি মৌল আরেকটি নতুন মৌলে রূপান্তরিত হয়।

তেজস্ক্রিয়তার উৎস: তেজস্ক্রিয়তার উৎসকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- প্রাকৃতিক, মানুষের সৃষ্ট ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশগত।

প্রাকৃতিক উৎস- মহাশূন্য থেকে ইলেকট্রন, প্রোটন ও কয়েকটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস প্রায় আলোর বেগে পৃথিবীতে আঘাত হানে। এদের মহাজাগতিক রশ্মি বলে। এই রশ্মিগুলো বৈদু্যতিক চার্জযুক্ত। প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা অল্প মাত্রায় বায়ুমন্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে চলে আসে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা যত বেশি হয়, এর মাত্রা ততই বাড়তে থাকে। প্রাকৃতিক উৎসের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে রেডন গ্যাস। এটি বাতাস থেকে ৮ গুণ ভারী।

মানুষের সৃষ্ট- চিকিৎসায় এক্স-রে ও অন্যান্য বিকিরণ থেরাপির মেশিন তেজস্ক্রিয়তার উলেস্নখযোগ্য উৎস। শিল্প ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি ও দ্রব্যের মান যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন কমপোনেন্ট ব্যবহার হয় যেগুলো থেকে বিপজ্জনক বিরণের সৃষ্টি হয়। সামরিক নিউক্লিয়ার চুলস্নী, পারমাণবিক মারণাস্ত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র থেকে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় বিপুল পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পদার্থ আশপাশের বিরাট এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

পারিপার্শ্বিক পরিবেশ- আমাদের আশপাশের প্রায় প্রত্যেক বস্তু থেকেই কমবেশি বিকিরণ হচ্ছে। আমাদের বাড়িঘর, খাদ্য, পানীয় এমনকি আমাদের নিজের শরীর থেকেও তেজস্ক্রিয় রশ্মির বিকিরণ হচ্ছে। এই বিকিরণ খুবই কম মাত্রা- যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়।

ব্যবহার: ১. ক্যান্সার রোগ নিরাময়ের কাজে তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহার করা হয়।

২. উন্নত বীজ তৈরির গবেষণায় তেজস্ক্রিয়তা সফলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

৩. খনিজ পদার্থে বিভিন্ন ধাতুর পরিমাণ নির্ণয়ে ওই ধাতুর তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ তেজস্ক্রিয় প্রদর্শক হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে।

৪. ঘড়ির কাঁটায় তেজস্ক্রিয় থোরিয়ামের সঙ্গে জিঙ্ক সালফাইড মিশিয়ে ঘড়ির কাঁটা ও নম্বরে প্রলেপ দেওয়া হয় ফলে এরা অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে।

৫. তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ থেকে ফিশন প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত তাপ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে টারবাইন ও জেনারেটরের মাধ্যমে বিদু্যৎ উৎপাদন করা হয়।

৬. নির্মাণ বা উৎপাদন শিল্পে কাগজ, পস্নাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন বস্তুর পুরুত্ব, ঘনত্ব ও উপাদানের সঠিক পরিমাণ নির্ণয়ে আলফা ও বিটা রশ্মিকে ব্যবহার করা হয়।

৭. কার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে জীবাশ্মসংক্রান্ত নমুনা ও শিলাখন্ডের বয়স নির্ধারণ করা হয়।

তেজস্ক্রিয়তার বিপদ: ১. এই রশ্মি জীবদেহে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

২. উচ্চ মাত্রার তেজস্ক্রিয় বিকিরণ মানবদেহে নানা রকম ক্যান্সারের জন্ম দিতে পারে।

৩. দীর্ঘদিন মাত্রাতিরিক্ত তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সংস্পর্শে থাকলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, মানসিক বিকার এমন কি বিকলাঙ্গতাও দেখা দিতে পারে।

৪. এর ক্ষতিকর প্রভাব বংশ পরস্পরায়ও পরিলক্ষিত হয়। যেমন- তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে বিকালঙ্গ শিশুর জন্ম হতে পারে।

৫. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পদার্থ মানব সভ্যতার জন্য হুমকি স্বরূপ।

তেজস্ক্রিয়তার প্রতিকার ও চিকিৎসা: ১. প্রখর সূর্যকিরণে (দুপুর ১২-২টা) বাহিরে যাওয়া থেকে বিরত থাকা।

২. যতটুকু সম্ভব বৃষ্টির জলকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা।

৩. ক্লোরোফিল ও অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা।

৪. খাবারে আয়োডিন ব্যবহার করা (আয়োডিনযুক্ত লবণ)।

৫. দিনের বেলায় বাহিরে বের হলে সান-গস্নাস ব্যবহার করা।

৬. বিভিন্ন রেডিয়েশন থেরাপি অতিমাত্রায় গ্রহণ না করা।

৭. এক্স-রে ও রেডিয়েশন হয় এমন সব মেশিন থেকে দূরে থাকা।

৮. দিনের বেলায় বাহিরে বের হলে শরীর ঢেকে রাখা বা সান-লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<107658 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1