প্রশ্ন : উদাহরণসহ ক্রিয়াপদের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।
উত্তর : যে পদ দিয়ে কোনো কাজ করা, হওয়া ইত্যাদি বোঝায় সেগুলোকে ক্রিয়াপদ বলে। যেমন : লেখে, পড়ে, যায়, খায় ইত্যাদি।
অর্থের দিক থেকে ক্রিয়াপদ দুই প্রকার :
১. সমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়াপদের প্রয়োগে বাক্যের অর্থ সবটুকু প্রকাশ পায়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন : ক্লাস শুরু হয়েছে, ফল বেরিয়েছে।
২. অসমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়াপদের সাহায্যে বাক্যের অর্থ সবটুকু প্রকাশ হয় না, সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশের জন্য আরও কিছু ক্রিয়ার প্রয়োজন পড়ে, সেগুলোকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন: পরীক্ষার জন্য তৈরি হয়ে এসো, ভালো ফল হলে সবাই খুশি। এসব বাক্যে 'হয়ে', 'হলে'- এসব ক্রিয়াপদ পর্যন্ত বললে অর্থের সম্পূর্ণ প্রকাশ হয় না। তাই এগুলো অসমাপিকা ক্রিয়াপদ।
গঠনের দিক থেকেও ক্রিয়াপদকে তিন ভাগ করা যায় :
১। মৌলিক ক্রিয়া : যেসব ক্রিয়াপদ মৌলিক ধাতু থেকে গঠিত হয়, তাকে মৌলিক ক্রিয়া বলে। যেমন : সে ভাত খায় (খা+য়)।
২। যৌগিক ক্রিয়া : অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে অন্য কোনো ধাতুযোগে যে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়, তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন : সে পাস করে গেল।
৩। প্রযোজক ক্রিয়া : যে ক্রিয়া একজনের প্রযোজনা বা উদ্যোগে অপরজন কর্তৃক সম্পাদিত হয়, তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে। যেমন : শিক্ষক ছাত্রকে পড়ান।
বাক্যে ব্যবহারের সময় ক্রিয়ার কর্ম থাকা না-থাকার দিক থেকে ক্রিয়াপদকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় :
১. সকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার কর্ম থাকে, তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন : ছাত্ররা বই পড়ে। এখানে 'পড়ে' ক্রিয়ার কর্ম 'বই'। সে জন্য 'পড়ে' সকর্মক ক্রিয়া।
২. অকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার কর্ম থাকে না, তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: সে বাড়ি যায়। এখানে 'যায়' ক্রিয়ার কোনো কর্ম নেই বলে তা অকর্মক ক্রিয়া। ('বাড়ি' কর্ম নয়, অধিকরণ)
৩. দ্বিকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে, তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন: শিক্ষক ছাত্রকে অঙ্ক করান। এখানে 'ছাত্রকে' ও 'অঙ্ক'- এই দুটি কর্ম আছে বলে 'করান' ক্রিয়াটি দ্বিকর্মক ক্রিয়া।
প্রশ্ন : যোজক কাকে বলে? যোজক কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা কর।
উত্তর : যোজক : যেসব শব্দ একটি বাক্যের সঙ্গে অন্য একটি বাক্যের বা বাক্যের অন্তর্গত একটি পদের সঙ্গে অন্য পদের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায়, তাকে যোজক বলে। যোজকের কাজ হলো একাধিক শব্দ, পদবন্ধ, বাক্যকল্প বা বাক্যকে জুড়ে দেওয়া বা সম্পর্কিত করা। যেমন :
এতগুলো বই আর খাতা ওই ব্যাগে ধরবে?
গস্নাসটা ভালো করে ধর, নইলে ভেঙে যাবে।
অর্থ ও সংযোজনের ধরন ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে যোজক শব্দকে নিচের ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো :
১. সাধারণ যোজক
২. বিকল্প যোজক
৩. বিরোধমূলক যোজক
৪. কারণবাচক যোজক ও
৫. সাপেক্ষ যোজক।
সাধারণ যোজক : যে যোজক দুটি শব্দ বা বাক্যকল্পকে জুড়ে দেয়, তাকে সাধারণ যোজক বলে। আর, এবং, ও, বা, কিংবা তথা- এগুলো সাধারণ যোজক। যেমন :
দুটি শব্দের সংযোগক : সুখ ও সমৃদ্ধি কে না চায়? অলি আর কলি একে অন্যের বন্ধু।
দুটি বাক্যকল্পের সংযোগ : আমাদের সমাজ আর ওদের সমাজ এক রকম নয়।
দুটি বাক্যের সংযোগ : জলদি দোকানে যাও এবং একটা পাউরুটি কিনে আন।
বিকল্প যোজক : যে যোজক একাধিক শব্দ বা বাক্যকল্প বা বাক্যের বিকল্প নির্দেশ করে, তাকে বিকল্প যোজক বলে। যেমন : মৌসুমী হয় ট্রেনে, না হয় বাসে যাবে।
সারা দিন খুঁজলাম, অথচ কোথাও গরুটা পেলাম না।
বিরোধমূলক যোজক : যে যোজক দুটি বাক্যের
সংযোগ ঘটিয়ে দ্বিতীয়টির সাহায্যে প্রথম বাক্যের বক্তব্যের সংশোধন বা বিরোধ নির্দেশ করে, তাকে বিরোধমূলক যোজক বলে। যেমন :
এত বৃষ্টি হলো, তবু গরম গেল না।
তোমাকে খরব দিয়েছি, কিন্তু তুমি আসনি।
কারণবাচক যোজক : যে যোজক এমন দুটি বাক্যের মধ্যে সংযোগ ঘটায়, যার একটি অন্যটির কারণ নির্দেশ করে, তাকে কারণবাচক যোজক বলে। যেমন :
জিনিসের দাম বেড়েছে, কারণ হরতাল-অবরোধ চলছে।
খুব ঠান্ডা লেগেছে, তাই আইসক্রিম খাচ্ছি না।
সাপেক্ষ যোজক : যে যোজক একে অন্যের পরিপূরক হয়ে বাক্যে ব্যবহৃত হয়, তাকে সাপেক্ষ বা শর্তবাচক যোজক বলে। প্রথাগত ব্যাকরণে এগুলোকে বলে নিত্যসম্বন্ধীয় অব্যয়। যেমন :
যত গর্জে তত বর্ষে না।
যথা ধর্ম তথা জয়।
প্রশ্ন : আবেগ শব্দ কাকে বলে? কত প্রকার ও কী কী? উদাহরণসহ আলোচনা কর।
উত্তর : যেসব শব্দের সাহায্যে মনের নানা ভাব বা আবেগ প্রকাশ করা হয়, সেগুলোকে বলা হয় আবেগ শব্দ। এ ধরনের শব্দ বাক্যের অন্য শব্দের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে স্বাধীনভাবে বাক্যে ব্যবহৃত হয়। মানুষের বিচিত্র আবেগের প্রকাশ অনুসারে আবেগ শব্দকে আট ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো-
১. সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ ২. প্রশংসাসূচক আবেগ শব্দ ৩. বিরক্তিসূচক আবেগ শব্দ ৪. ভয় ও যন্ত্রণাসূচক আবেগ শব্দ ৫. বিস্ময়সূচক আবেগ শব্দ ৬. করুণাসূচক আবেগ শব্দ ৭. সম্বোধনসূচক আবেগ শব্দ ৮. আলংকারিক আবেগ শব্দ
সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ : যে শব্দের সাহায্যে অনুমোদন, সম্মতি, সমর্থন ইত্যাদি ভাব প্রকাশ পায়, তাকে সিদ্ধান্তসূচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন : বেশ, তুমি যা বলছ, তা-ই হবে।
প্রশংসাসূচক আবেগ শব্দ : যেসব শব্দ প্রশংসার মনোভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়, সেগুলোকে প্রশংসাবাচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন : বাঃ! চমৎকার একটা গল্প লিখেছ!
বিরক্তিসূচক আবেগ শব্দ : যেসব শব্দ ঘৃণা, অবজ্ঞা, বিরক্তি ইত্যাদি মনোভাব প্রকাশে ব্যবহৃত হয়, সেগুলোকে বিরক্তিসূচক শব্দ বলে। যেমন: ছি! ছি! এটা তুমি কী বললে!
ভয় ও যন্ত্রণাসূচক আবেগ শব্দ : যেসব শব্দ আতঙ্ক, যন্ত্রণা ও ভয় প্রকাশে ব্যবহৃত হয়, সেগুলোকে ভয় ও যন্ত্রণাবাচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন :
আঃ! কী বিপদ।
বিস্ময়সূচক আবেগ শব্দ : যেসব শব্দ বিস্মিত বা আশ্চর্য হওয়ার ভাব প্রকাশ করে, সেগুলোকে বলা হয় বিস্ময়সূচক আবেগ শব্দ। যেমন :
আরে! তুমি আবার কখন এলে!
করুণাসূচক আবেগ : যেসব শব্দ করুণা, সহানুভূতি ইত্যাদি মনোভাব প্রকাশ করে, সেগুলোকে করুণাসূচক আবেগ শব্দ বলে। যেমন :
হায়! হায়! এ অনাথ শিশুদের এখন কে দেখবে!