রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

বিজ্ঞানের যত কথা

হাম
শিক্ষা জগৎ ডেস্ক য়
  ২৬ জুন ২০২০, ০০:০০
বিজ্ঞানের যত কথা
বিজ্ঞানের যত কথা

হাম ভাইরাসজনিত একটি রোগ। শিশুরাই হামে বেশি আক্রান্ত হয়। এক বছর থেকে ১৮ মাস বয়সি শিশুদের হামের ভ্যাকসিন দেওয়া যায়। হাম সাধারণত শীত ও বসন্তকালে অধিক হয়ে থাকে। তবে শীতের শেষে এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে ৮ মাস থেকে ৫ বছর বাচ্চাদের মধ্যে এর আক্রমণের প্রকোপ বেশি দেখা দেয়।

হামের লক্ষণ: হাম হলে প্রথমে জ্বর হয় ও শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে বা হালকা ব্যথা লাগে। প্রথম এক-দুই দিন অনেক তীব্র জ্বরও হতে পারে। চোখ-মুখ ফুলে উঠতে পারে। চোখ লাল হয়ে যেতে পারে, চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে। নাক দিয়ে পানি পড়তে পারে এবং হাঁচিও হতে পারে। শরীরের্ যাশ বা ছোট ছোট লালচে গুটি/ফুসকুড়ি দেখা দেয় এবং দ্রম্নতই তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ সময় বিশেষত শিশুরা কিছুই খেতে চায় না এবং ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে। নিউমোনিয়ার প্রকাশ পেতে পারে। শ্বাসলানিতে শৈষ্মি ঝিলিস্নর প্রদাহ এবং অত্যন্ত সর্দিভাব থাকে। চোখ জলপূর্ণ ও রোগীর মুখমন্ডল লাল বর্ণ ধারণ করে।

হামের প্রকারভেদ : বিভিন্ন প্রকারের হাম রোগ হতে পারে।

(১) মৃদু আকারের হাম।

(২) কৃষ্ণ বর্ণেও হাম

(৩) রক্তস্রাবি হাম

(৪) উদ্ভিদহীন হাম ইত্যাদি।

হামের আক্রমণের প্রকৃতি:

সরল হাম: সরল জাতীয় হামে অল্প অল্প জ্বর হয়। হাম বের হলে জ্বর কমে যায় এবং রোগী আস্তে আস্তে আরোগ্যের দিকে আসে।

কঠিন হাম জ্বর: হঠাৎ জ্বর হয় এবং প্রচন্ড তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, প্রচুর ঘাম হয় কিন্তু জ্বর চলতে থাকে এবং জ্বরের কোনো বিরাম নেই। জ্বর দেরিতে ও ধীরে কমতে থাকে; হাম সারতে দেরি হয়। রোগী প্রলাপ বকতে থাকে, চক্ষের প্রদাহ, মাথার যন্ত্রণা, কানে পুঁজেরভাব এমন কী রক্ত আমাশয়ের লক্ষণ দেখা দেয়। এ জাতীয় হাম হলো কঠিন জাতীয় হাম।

হাম বসে যাওয়া: হাম যদি বসে যায় তবে ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। নানা প্রকার জটিল উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন : হাম বসে গিয়ে উদারাময়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আক্ষেপ, মস্তিষ্ক প্রদাহ বা মেনিঞ্জাইটিস, হাইড্রোসিল, উন্মাদনা ইত্যাদি। এছাড়াও হাজল, ব্রঙ্কাইটিস, পক্ষঘাত, মৃগী, শোথ ও কানে পুঁজের মতো মারাত্মক উপসর্গ প্রকাশ করে ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।

হাম হলে করণীয়: হাম হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সাধারণত তিন দিনের চিকিৎসাতেই এই রোগের জ্বর ভালো হয় এবং সাত দিনের মধ্যেই হামে আক্রান্ত রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে। হামে আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। আর একটু পর পর ভেজা তোয়ালে/গামছা বা নরম কাপড় দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিতে হবে। রোগীর বেশি জ্বর হলে বমিও হতে পারে। তবে এতে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। এ ক্ষেত্রে ওষুধ খেতে হবে। তবে কোনোভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোগীকে ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।

বিশ্রাম ও পানি: হাম হলে রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে হয়। অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। আর স্বাভাবিক খাবার দাবারের পাশাপাশি রোগীকে বেশি বেশি তরল খাবারও দিতে হবে।

চিকিৎসা না হলে: সময়মতো চিকিৎসা করানো না হলে হাম থেকে নিউমোনিয়া, কানে ইনফেকশন এমনকি মস্তিষ্কে ম্যালিডাইসিস রোগ হতে পারে।

প্রতিরোধ:(১) হামের টিকা সঠিক সময়ে গ্রহণ করতে হবে। শিশুর উপযুক্ত বয়সে টিকা গ্রহণ করা অতি জরুরি।

(২) অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর পরিচর্যা নিতে হবে।

(৩) হাম রোগ যেহেতু ছোঁয়াছে এ জন্য রোগীকে আলাদা ঘরে রাখা দরকার। রোগীকে সর্বদা পূর্ণ বিশ্রাম ও মশারির মধ্যে রাখা ভালো। এ সময় রোগীকে তরল জাতীয় খাদ্য প্রদান করতে হবে। তবে লঘুপাচ্য যেমন : ডিমের পোচ, বয়েল প্রভৃতি প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন হবে। সাবু, বার্লি, ফলের রস, গস্নুকোজ প্রভৃতি পথ্য হিসেবে দেওয়া যায়; তবে টক খেতে দেওয়া উচিত নয়। সর্দি ও নিউমোনিয়ার লক্ষণ না থাকলে চিরতার ভিজানো জল দেওয়া যাবে। মেথি ভিজিয়ে সেই জল পান করতে দিলে রোগীর শরীরের ব্যথা দূর হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে