মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

রমজানে দ্রব্যমূল্য কি নিয়ন্ত্রিত থাকবে?

আমাদের বাংলাদেশের চিরায়িত নিময় অনুযায়ী এ দেশের মানুষের বা ব্যবসায়ীদের মাঝে একটি প্রচলন চলে এসেছে রমজান মাস এলেই আমাদের নিত্যব্যবহার্য সব দ্রব্য ক্রেতা সাধারণের হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। কিন্তু কেন? এর জন্য আমাদের কোথায় দুর্বলতা রয়েছে। সারা বছর যদি এক নিয়মে চলতে পারে তাহলে রমজান মাসে কেন চলে আবার উল্টো পথে। আসলেই কি রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে? এমন প্রশ্ন রমজান মাস এলেই এখন কমন একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আলকামা সিকদার
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
রমজানে দ্রব্যমূল্য কি নিয়ন্ত্রিত থাকবে?

সবাই জানে এটি মুসলমান জাতির জন্য একটি মহিমান্বিত মাস। এ মাসে মুসলমান জাতি সারা বছরব্যাপী উপোস থাকে আলস্নাহর হুকুম পালনের নিমিত্তে। আর তাই, এ মাসে খানাপিনার জন্যও থাকে বিশেষ ব্যবস্থা বা অন্য সব মাসের চেয়ে একটু উন্নতমানের খাবার খাওয়া হয়। আবার সন্ধ্যা বেলায় ইফতারের জন্যও থাকে বিশেষ ধরনের খাবার। যা সারা বছরের কোনো মাসেই খাওয়া হয় না। তাই এ মাসে খরচও একটু বেশি মাত্রায় হয় মুসলামনের ঘরে ঘরে। রোজা ও ইফতারিতে এসব নানা দ্রব্যসামগ্রী কিনতে হয় হিসাববিহীন। তাই আমাদের এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা আছে যারা সারা বছর মুখিয়ে থাকে কবে রমজান মাস আসবে।

আমাদের বাংলাদেশের চিরায়িত নিময় অনুযায়ী এ দেশের মানুষের বা ব্যবসায়ীদের মাঝে একটি প্রচলন চলে এসেছে রমজান মাস এলেই আমাদের নিত্যব্যবহার্য সব দ্রব্য ক্রেতা সাধারণের হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। কিন্তু কেন? এর জন্য আমাদের কোথায় দুর্বলতা রয়েছে। সারা বছর যদি এক নিয়মে চলতে পারে তাহলে রমজান মাসে কেন চলে আবার উল্টো পথে। আসলেই কি রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে? এমন প্রশ্ন রমজান মাস এলেই এখন কমন একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পৃথিবীর বড় বড় মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, তারা রমজান মাস এলে সব দ্রব্যমূল্য ক্রেতা সাধারণের হাতের নাগালে এনে দেয়, যাতে সহজে গরিব, মধ্যবিত্ত, নিন্মবিত্ত সবাই ক্রয় করতে পারে। যা আমাদের বাংলাদেশের নিয়মের চাইতে উল্টো।

রমজান মাস এলেই এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাজারের সব পণ্যই ঊর্ধ্বমুখী করে। আর এর দায় চাপিয়ে দেয় সরকার বা আমদানিকারকদের ওপর। সত্যিই কি এমনটি হয়? যদি সারা বছর আমদানিকারকরা নিয়মানুযায়ী আমদানি করতে পারে তাহলে কেন রমজান এলেই এমন হয়? এটি কি ভেবে দেখেছেন কেউ কখনো।

সারা বছর যদি আমরা সয়াবিন, ডাল, লবণ, চিনি, মশলা, পিঁয়াজ, ময়দা ইত্যাদি পণ্য হাতের নাগালে নির্ধারিত দামে পেয়ে থাকি তাহলে কেন রমজান মাস এলেই এসব পণ্যের দাম হুহু করে বাড়তে থাকে? আসলে আমরা এটাকে কখনো আমলেও নেই না।

আমরা গত বছরের রমজানের দিকে তাকালে নিশ্চই দেখতে পাব রমজান আসার আগের মাস থেকেই সব ভোগ্যপণ্যের দাম হঠাৎ করেই ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেল। নাভিশ্বাস উঠে গেল ক্রেতাদের মাঝে। বিশেষ করে সয়াবিন তেল, ছোলা, মসুরডাল, চিনি, ময়দাসহ রমজানের নিত্যব্যবহার্য সব পণ্যই দিন গড়াতে থাকল আর দাম বাড়তে থাকল। বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারের নজরে আনলেও কাজের কাজ কিছুই হলো না সাধারণ জনতার জন্য। লোক দেখানো মনিটরিং ব্যবস্থার নামে চলল বাজারে বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কাজ। আসলে কি তখন ওই ব্যবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব হয়েছিল।

সরকারের পোষাপালিত কিছু ব্যবসায়ীর কারণে বাজারের সব পণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া হওয়ায় সাধারণ পাবলিকের পকেট কেটে টাকা চলে গিয়েছিল ওই সব অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে। সরকারের পোষাপালিত ব্যবসায়ী, বড় বড় রাঘবোয়ালদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো সয়াবিন তেলসহ আমদানিনির্ভর সব পণ্যের সিন্ডিকেট। যেখানে সাধারণ ছোট ব্যবসায়ীরা হয়ে পড়েছিল জিম্মি। আর ওই সব ব্যবসায়ীদের কারণেই আজ বাংলাদেশের ব্যাংক, বীমা, বাজারব্যবস্থাসহ সব ক্ষেত্রেই চলছে ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা। হাজার হাজার লাখ লাখ কোটি টাকা সরকারের মৌন সমর্থনের কারণে তারা সহজেই পাচার করে নিজেরাও পারি জমিয়েছে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বড় বড় সব উন্নত রাষ্ট্রে। বাধাহীনভাবে পরিবার নিয়ে বসবাস করছে আরাম আয়েসে।

আমরা কি এখনো এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পেরেছি! বর্তমান সরকারের এই রমজানে বিশেষ নজর রাখার জন্য পরামর্শ হচ্ছে, যে সব ব্যবসায়ীরা আমদানি করে থাকে তাদের দিকে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো। সত্যি কি তারা এই সময়ে এসে আমদানি করতে হিমশিম খায় নাকি আগের আমদানি করা পণ্য গুদামজাত করে কৃত্তিম সংকট তৈরি করে বাজার চাহিদা বাড়িয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে ছলচাতুরির আশ্রয় নেয়। তাহলেই বেরিয়ে আসবে গর্তের সাপ।

সামনে আসছে রমজান মাস। সিয়াম সাধনার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। রমজানের নিত্যব্যবহার্য সব পণ্যই যেন সহজে কিনতে পারে ক্রেতা সাধারণ, সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে।

বিশেষ নজর রাখতে হবে স্বৈরাচারী সরকারের ওই সব প্রেতাত্মা ব্যবসায়ীদের দিকে। তারা যেন কোনোভাবেই সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে। কৃত্তিম সংকট যেন তৈরি করতে না পারে তার জন্য বড় বড় শহর ছাড়াও সাধ্য অনুযায়ী দেশের প্রতিটি বাজারে ভোক্তাদের কথা বিবেচনা করে বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া, আমদানিনির্ভর সব পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়ে আমদানি সহজ করতে হবে। আমদানিকারকদের সহজে সব পণ্য আনার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আর এর জন্য সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। স্বৈরাচারী পুরনো ব্যবসায়ীদের সব সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে নতুন ক্রেতাবান্ধব আমদানিকারকদের দ্বারা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে।

আর সরকার যদি এখনই ক্রেতা সাধারণের স্বার্থে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারে বা ব্যর্থ হয় তাহলে আবার নতুন কোনো সিন্ডিকেট তৈরি হবে। যদি এমনটিই হয় তাহলে এ বাংলাদেশি জাতি কখনোই মুক্তি পাবে না এমন নির্মম ঠান্ডা নির্যাতনের হাত হতে। তাই আশা করব, সরকার এসব কিছু বিচেনায় নিয়ে সুদূর প্রসারি চিন্তাভাবনা করে বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় জনসাধারণের কথা ভেবে এবং উন্নত ও স্বাচ্ছ জাতি গঠনের লক্ষ্যে একটি সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সামনে আসছে রমজান, এ রমজানের পবিত্রতা বজায় রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি স্বচ্ছাতার মনোভাব প্রত্যাশা করে সবার প্রতি জানাই আসন্ন রমজানের শুভেচ্ছা।

আলকামা সিকদার : গণমাধ্যমকর্মী

ধষশধসধংযরশফবৎ৮৯৬@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে