মানব পাচার রোধ করতে উদ্যোগ নিতে হবে
প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
মানব পাচারের ঘটনা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। উন্নততর কর্মসংস্থান ও জীবিকার খোঁজে একদিকে যেমন বিদেশে পাড়ি জমাতে আগ্রহীর সংখ্যা বাড়ছে, তেমনি এ সুযোগের ফায়দা নিতে মানব পাচার সিন্ডিকেট সক্রিয়। দালাল চক্রকে কাজে লাগিয়ে সংঘটিত হচ্ছে অবৈধ পথে কর্মী পাঠানো, মানব পাচারের মতো অপরাধ। ফলে, এ সংক্রান্ত পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই।
সম্প্রতি খবরে প্রকাশ, ইউরোপে রঙিন স্বপ্ন গড়ার আকাঙ্ক্ষায় দেশ ছেড়ে দালালের প্রতারণায় লিবিয়া গিয়ে পৌঁছায় পাঁচ বাংলাদেশি। সেখানে মানব পাচারকারী এক চক্রের খপ্পরে পড়েন। নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন তারা। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, পাচারের শিকার ব্যক্তিদের ভাষ্য- লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে মানব পাচার চক্রের সদস্যরা তাদের জিম্মি করে অত্যাচার করে। নির্যাতিত ব্যক্তিদের দিয়ে বাংলাদেশে স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয়। দেশ থেকে টাকা পাঠানোর পরে তাদের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পাঠানোর জন্য বোটে তুলে দেয়। সাগরে তাদের বোট নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে তিউনিসিয়ার কোস্ট গার্ড তাদের উদ্ধার করে। এরপর তাদের আলজেরিয়া সীমান্তে নিয়ে গেলে তারা সেখানে অনুপ্রবেশের দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খাটেন। পরে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং আলজেরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তা নিয়ে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক।
আমরা বলতে চাই, অবৈধ পথে বিদেশ গমন, উন্নত জীবনের আশায় দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার ঘটনা নানা সময় সামনে এসেছে। নির্যাতন, মৃতু্যসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক বলছেন, ইউরোপে পাঠানোরে প্রলোভন দেখিয়ে যাদের লিবিয়া নেওয়া হয়, তাদের সবাইকে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখালেও তারা চাকরি পান না। উল্টো অধিকাংশকেই লিবিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি রেখে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এরপর তাদের জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় অর্থ। তবে সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেওয়া দরকার, এত কিছুর পরেও ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরোপের স্বপ্নে লিবিয়া যাওয়ার প্রবণতা থামছে না। তাই সার্বিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে; তেমনি এই প্রবণতা রোধে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সাধারণ মানুষ ও বিদেশগামীদের প্রচার প্রচারণাসহ যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সচেতন করতে হবে।
মনে রাখা দরকার, নানা সময় মানব পাচার সংক্রান্ত যে বিষয় উঠে আসছে তা উদ্বেগের। মানব পাচার বাংলাদেশের অন্যতম পীড়া। নানাভাবে মানব পাচারের ঘটনা ঘটছে। মূলত জীবন ও জীবিকার কারণে, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্র্যের পীড়নে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। উৎকণ্ঠার বিষয় হলো, এসব মানুষের বেশিরভাগই প্রতারিত হচ্ছে, হচ্ছে সর্বস্বান্ত। অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রাপথে মারা যাচ্ছে। এমন মরীচিকার পেছনে ছুটতে গিয়ে সাগর পথে বিদেশে পাড়ি জামাতে গিয়ে নৌকাডুবিতেও প্রাণ হারাচ্ছে। এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
সর্বোপরি, মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে, নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে পাঁচ বাংলাদেশির দেশে ফেরার ঘটনা আমলে নিতে হবে। মানব পাচার ঠেকাতে পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোও জরুরি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সাধারণ মানুষকে যেন দালালরা বিভ্রান্ত করতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। মানব পাচার বন্ধে সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ ও পরিকল্পিত উদ্যোগ অপরিহার্য।