বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২
পাঠক মত

পথশিশুরা অবহেলিত ও নির্যাতিত

জাফরিন সুলতানা শিক্ষার্থী পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
পথশিশুরা অবহেলিত ও নির্যাতিত

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষৎ। শিশুদের ভালোবাসা, আদর, মায়া-মমতায় সিক্ত করে রাখা উচিত। আগামীর বিকশিত ও উন্নত জাতি নির্মাণের লক্ষ্যে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা উচিত। তাদের একাংশ কেন এত অবহেলিত ও অপমানিত? কেন তাদের রাস্তার ছেলে, টোকাই, জন্মপরিচয়হীন নামে সম্বোধন করা হয়? কেন তারা চরম নির্যাতিত ও সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্ত? এসব প্রশ্নের উত্তর জানে না সংগ্রামী ও কঠিন জীবনের ভুক্তভোগী সেই নিষ্পাপ পথশিশুরা। উন্নয়নশীল বাংলাদেশে নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র পরিবারগুলোর জীবনযাপনের মান খুবই নিম্নমানের এবং তারা শিশুদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ। এছাড়াও বিবাহ বিচ্ছেদ, পিতা মাতার অকালমৃতু্যসহ নানা কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানের-ভরণপোষণের দায়িত্ব না নেওয়ায় অনেক শিশু পথশিশু হিসেবে বেড়ে উঠতে বাধ্য হয়। 'স্ট্রিট সিচুয়েশন ইন বাংলাদেশ-২০২৪' প্রতিবেদন অনুসারে দেশে বর্তমানে মা-বাবাহীন পথশিশুর সংখ্যা ৩৪ লাখের বেশি, যারা একা রাস্তায় বসবাস করতে বাধ্য হয়। প্রতিবেদনটিতে জন্মপরিচয়হীন, ও অবহেলিত শিশুদের করুন জীবনযাপন ও জীবিকা নির্বাহের মাধ্যমগুলো তুলে ধরা হয়েছে। জীবিকা নির্বাহে ২০.৯% পথশিশুরা বর্জ্য সংগ্রহ করে, চা-দোকান, কারখানা ও ওয়ার্কশপে কাজ করে ১৪.৮%, গাড়ি ও নির্মাণ খাতে কাজ করে ১৬% ও ভিক্ষাবৃত্তি করে ১৮.৪%। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পথশিশুদের ৫১ ভাগ অশ্লীল কথার শিকার হয়, ২০% পথশিশু শারীরিক নির্যাতন ও ১৪.৫% যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। এছাড়াও সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক অ্যানহান্সমেন্ট প্রোগ্রাম নামের একটি সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পথশিশুদের প্রায় ৪৪% মাদকাসক্ত, ৪১% শিশুর ঘুমানোর জন্য বিছানা নেই, ৪০% শিশু গোসল করতে পারে না, ৫৪% শিশু অসুস্থ হলে তাদের দেখার মতো কেউ নেই। শীতকাল জনসাধারণের মনে আনন্দের জোয়ার আনলেও পথশিশুদের জন্য শীতকাল মানে চরম দুদর্শার সময়। হিমশীতল রাতে করুণ অবস্থায় কুয়াশামাখা পথের এক কোণে কাঁপতে থাকে নিষ্পাপ পথশিশুরা। তাদের কপালে জোটে না শীত নিবারণের জন্য সামান্য উষ্ণ কাপড়টুকুও। ফলে অনেক পথশিশু বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয় এবং পথেই মৃতুবরণ করে। পথশিশুরাও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। নিষ্পাপ ও অবহেলিত পথশিশুরা উপযুক্ত পরিচর্যা ও সুযোগ পেলে দেশের উন্নত ভবিষ্যৎ নির্মাণে শক্তিশালী কারিগর হিসেবে অবদান রাখতে পারবে। আর তার জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি সংস্থার কার্যকরী উদ্যোগ। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা ও সমাজের সচেতন নাগরিকদের উচিত পথশিশুদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র, পুষ্টিকর খাবার ও স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। তাদের জন্য বিশেষ স্কুল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। সর্বোপরি তাদেরকে পারিবারিক সংস্পর্শে আনতে হবে এবং তাদের প্রতি সমাজের মানুষদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বাড়ানোর জন্য প্রচারণা চালাতে হবে।

মোছা. শেফাতুন নেছা

শিক্ষার্থী

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

গণপরিবহণে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক

আমাদের সমাজে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে গণপরিবহণে। প্রতিদিন লক্ষাধিক নারী বাস, ট্রেন, অটোরিকশা এবং অন্যান্য গণপরিবহণ ব্যবহার করে যাতায়াত করেন। কিন্তু, তাদের নিরাপত্তা প্রায়শই হুমকির মুখে পড়ে। নারীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, নিগ্রহ এবং অশোভন আচরণ প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং আমাদের সমাজের জন্য লজ্জার। গণপরিবহণে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নির্দিষ্ট সিট বরাদ্দ করা উচিত, বিশেষ করে নারীদের জন্য। ট্রেনে নারীদের জন্য আলাদা সিট থাকা উচিত, যাতে তারা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারেন। গণপরিবহণে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং অন্যান্য সুরক্ষাব্যবস্থা স্থাপন করা উচিত, যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তা দ্রম্নত প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়া, যাত্রীদের প্রতি শিষ্টাচারের শিক্ষা এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নারীদের জন্য জরুরি পরিস্থিতিতে সাহায্যের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট হেল্পলাইন চালু করা যেতে পারে। এই বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আমাদের সকলের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি। যাতে নারীরা গণপরিবহণে নিরাপদে চলাচল করতে পারে।

জাফরিন সুলতানা

শিক্ষার্থী

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে