তিস্তা সংকট সমাধানে দ্রম্নত পদক্ষেপ জরুরি

প্রকাশ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের 'দুঃখ' তিস্তা নদীর পানিবণ্টন সংক্রান্ত সমস্যা অনেক পুরনো। অভিন্ন এই নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশের অধিকার। কিন্তু বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যা পায় না। ফলে, প্রতিবেশী দেশের কারণে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে, কীভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক হয়- সেই প্রশ্ন এসে যায়। বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ৫৪টি অভিন্ন নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি উত্তোলনের ফলে এ সংকটের কোনো সমাধান হচ্ছে না। অন্যদিকে, এই সংকট সমাধান না হওয়ার পেছনে ভারতের একতরফা মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে না পাওয়ার কারণে জলবায়ু পরিবর্তন ও ভূ-রাজনৈতিক সমস্যা বাড়ছে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, বাংলাদেশের দুঃখ তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যা সমাধানে যত দেরি হবে এই সংকট ততই বাড়বে। সঙ্গত কারণেই প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবে- এটাই প্রত্যাশিত। সংশ্লিষ্টদেরও এই বিষয়ে জোরালোভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সম্প্রতি রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও ন্যায্য পানির হিস্যার দাবিতে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের কর্মসূচির বিষয়টি সামনে এসেছে। এছাড়া, ভারত যদি তিস্তার ন্যায্য হিস্যা না দেয় তাহলে বিকল্প চিন্তা করার কথাও বলছেন বিশ্লেষকরা। সংশ্লিষ্টদের এটা অনুধাবন করা দরকার, তিস্তা শুধু একটি নদী নয়, এটি উত্তরবঙ্গের লাখো মানুষের জীবন-জীবিকার প্রশ্ন। তাই, এই ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। যে কোনো দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনের প্রশ্নে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতার সম্পর্ক জরুরি। বলা দরকার, তিস্তা নদীর পানিবণ্টন বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে একটি ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। ৪১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা নদী বিশেষ করে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষি ও সেচব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের জীবিকা নির্বাহে সহায়ক এবং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অথচ এই সংকটের সমাধান হচ্ছে না- যা প্রতিবেশী দেশের কাছে কাম্য হতে পারে না। তিস্তা নদী নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত হয়েছিল ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের সময়। সেই সময় নদীর অববাহিকা দুটি অংশে বিভক্ত হয়। একটি ভারতের এবং অপরটি নবগঠিত রাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ)-এর অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর এ ইসু্য আবার আলোচনায় আসে। ১৯৮৩ সালে ভারত এবং বাংলাদেশ একটি অস্থায়ী পানিবণ্টন চুক্তি করে। এই চুক্তি অনুযায়ী, তিস্তার পানির ৩৯ শতাংশ ভারতের এবং ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশের জন্য নির্ধারিত হয়। তবে, এই চুক্তি কখনো স্থায়ী চুক্তিতে রূপান্তরিত হয়নি। মনে রাখা দরকার, তিস্তা নদী বাংলাদেশ এবং ভারতের উভয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, তিস্তা অববাহিকায় কৃষি উৎপাদনে এই নদী ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এটা লক্ষ্য করা জরুরি, পানি ঘাটতির কারণে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, পানির ঘাটতির কারণে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদন হারায়। এছাড়া, এটাও আলোচনায় আসছে, ভারতের ৫৪টি নদী বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাই এটা করুণা নয়। বরং তিস্তার পানির হিস্যা বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার। সর্বোপরি, তিস্তা সংকট নিরসন না হওয়ার কারণে তিস্তা পাড়ের লাখ লাখ মানুষ বন্যায়-খরায় অসহায় জীবনযাপন করছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। বাড়ছে সংকট। ফলে, দ্রম্নত এই সংকট নিরসনে ভারতকে বুন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। তিস্তার পানিবণ্টন সংকট নিরসন হবে এবং বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যা বুঝে পাবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।