কেন অগ্নিনির্বাপক প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়া উচিত

সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পারি। তাই ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এ বিষয়ে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আগুনের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে এখনই আমাদের সক্রিয় হতে হবে। আগুন লাগলে কেবল ফায়ার সার্ভিসের ওপর নির্ভর করা যথেষ্ট নয়। আমাদের প্রত্যেকেরই প্রাথমিক অগ্নিনির্বাপক জ্ঞান থাকতে হবে। যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা গড়ে তুলতে পারলে অনেক প্রাণ ও সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব।

প্রকাশ | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

মো. সাইদুর রহমান
আগুন একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ- যা অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে দক্ষতা অর্জন এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অগ্নিনির্বাপক প্রশিক্ষণ কেবল আগুন নেভানোর কৌশল শেখানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি জীবনরক্ষা, সম্পদ সুরক্ষা এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। প্রত্যেক ব্যক্তির, বিশেষত অফিস, কারখানা, বিপণিবিতান ও আবাসিক ভবনের কর্মীদের অগ্নিনির্বাপক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অগ্নিকান্ডের সময় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়- যার ফলে, প্রাণহানির শঙ্কা বাড়ে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শেখা যায় কীভাবে আগুন লাগলে দ্রম্নত পদক্ষেপ নিতে হয়, কোন ধরনের আগুনের ক্ষেত্রে কী ধরনের অগ্নিনির্বাপক ব্যবহার করতে হয়, এবং কীভাবে নিরাপদে স্থানত্যাগ করতে হয়। গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, দেশে অগ্নিকান্ডের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৩ ফেব্রম্নয়ারি, ২০২৫ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স,পটুয়াখালী কর্তৃক আয়োজিত অগ্নিনির্বাপক বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে এই তথ্য জানা যায়, ২০১৮ সালে দেশে ১৯ হাজারের বেশি অগ্নিকান্ড ঘটেছিল- যা ২০২৪ সালে বেড়ে ২৬,৬৫৯-এ পৌঁছেছে। অর্থাৎ দিনে গড়ে ৭৩টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে- যা দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। 'ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ইচ্ছে করলেই আগুন লাগার পর সম্পূর্ণ রক্ষা করতে পারবে না। একবার আগুন লাগলে, তারা কেবল ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনতে (মিনিমাইজ করতে) পারে। এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে পৌঁছাতে আমাদের ৩০ মিনিটের বেশি সময় লেগে যায়। আর এই ৩০ মিনিটই আগুনে সবকিছু পুড়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্যক্তিরা যদি আগুন নেভানোর বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান রাখেন, তাহলে তাদের প্রচেষ্টায় ক্ষতির পরিমাণ আরও কমানো সম্ভব।' একজন প্রশিক্ষকের এই মত আমলে নেওয়া দরকার। এছাড়া অনেকেই অভিযোগ করেন যে, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিভে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছান। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, যদি দ্রম্নত তথ্য না দেওয়া হয়, তাহলে তারা কীভাবে সময়মতো পৌঁছাবেন? এই প্রশ্নও বিবেচ্য। এ কথার মাধ্যমে বোঝা যায়, অগ্নিনির্বাপক প্রশিক্ষণের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ জানতে পারবেন, ৯৯৯ অথবা ১০২ এবং স্থানীয় ফায়ার স্টেশনের ফোন নাম্বারে কল করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। আগুনের ধরন বুঝে প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে হবে। সাধারণত সব আগুন একভাবে নেভানো যায় না। আগুনের ধরন অনুযায়ী নির্দিষ্ট অগ্নিনির্বাপক ব্যবহার করতে হয়। যেমন : পানির মাধ্যমে সাধারণ আগুন (কাঠ, কাগজ) নেভানো যায়, তবে ইলেকট্রিক বা তেলজাতীয় আগুনে পানি ব্যবহার বিপজ্জনক। ফোম ব্যবহার করা হয় তরল দাহ্য পদার্থের আগুন নেভাতে। কার্বন ডাই- অক্সাইড (ঈঙ২) বা ড্রাই কেমিক্যাল পাউডার (উঈচ) ব্যবহার করা হয় বৈদু্যতিক আগুনে এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার শিখতে পারবে। যেমন: ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ফায়ার হোস, অগ্নিনির্বাপক কম্বল ইত্যাদির সঠিক ব্যবহার জানা। অনেক জায়গায় এগুলো থাকলেও, ব্যবহার না জানার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়- যা সংকটময় মুহূর্তে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। প্রশিক্ষণের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অগ্নিনির্বাপক প্রশিক্ষণের ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বিশেষত শিল্পপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি। অগ্নিনির্বাপক প্রশিক্ষণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি জীবন রক্ষার চেষ্টার দক্ষতা। সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পারি। তাই ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এ বিষয়ে আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আগুনের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে এখনই আমাদের সক্রিয় হতে হবে। আগুন লাগলে কেবল ফায়ার সার্ভিসের ওপর নির্ভর করা যথেষ্ট নয়। আমাদের প্রত্যেকেরই প্রাথমিক অগ্নিনির্বাপক জ্ঞান থাকতে হবে। যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা গড়ে তুলতে পারলে অনেক প্রাণ ও সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব। তাই, অগ্নিনির্বাপক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা শুধু একটি প্রয়োজনীয় দক্ষতা নয়, এটি একটি সামাজিক দায়িত্বও বটে। মো. সাইদুর রহমান : শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়