রমরমা মাদক ব্যবসা প্রতিকারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি
প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
মাদক ছড়িয়ে পড়ছে- বিভিন্ন সময়েই পত্রপত্রিকায় এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে। মাদকদ্রব্যের ব্যবহার বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। এটাও আলোচিত। বলার অপেক্ষা রাখে না, মাদকদ্রব্যের ব্যবহার বাড়লে তা ভয়ানক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে। শুধু শহর নয়, গ্রাম পর্যায়ে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, প্যাথেডিনসহ নানা নেশাজাতীয় দ্রব্য ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি যখন খবরে উঠে এসেছে, প্রকাশ্যে রমরমা মাদক ব্যবসা, তখন পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের তা আমলে নেওয়া জরুরি।
তথ্য মতে, একটি-দুটি এলাকা নয়, রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি চলছে। জানা যায়, ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রেতারা সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে, খুপড়ি ঘরে বা মহলস্নার দোকানে ঘুরে ঘুরে মাদক বিক্রি করছে। আরও ভয়ানক বিষয় হলো ক্রেতাদের তালিকায় কিশোর-তরুণই বেশি! মাদক কারবারীরা লোকালয়ে ঘুরে ঘুরে মাদক বিক্রি করলেও সবাই নির্বিকার। অন্যদিকে, শনিবার বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) বলেছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' চলছে। ফলে, অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি মাদকের বিস্তার রোধেও সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
বলা দরকার, মাদক সংক্রান্ত তথ্য ভয়ানক পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে। ভুলে যাওয়া চলবে না, মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে থাকে। এর নেতিবাচক দিকগুলো আমলে নিতে হবে। মাদকের জন্য সমাজ ও পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসা, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধের ঘটনাও ঘটছে। সঙ্গত কারণেই মাদক রোধে কঠোর হতে হবে।
কারণ, অতীতেও মাদক বিরোধী অভিযান, মাদকের বিরুদ্ধে জেহাদের ঘোষণাসহ অনেক আওয়াজ শোনা গেলেও সর্বনাশা মাদকের ব্যবহার কমেনি। উপরন্তু পাড়া-মহলস্নায়, অলি-গলিতে এর বিস্তৃতি লাভ করেছে। ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় ৫৮৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার তদন্ত চলছে। এজাহারভুক্ত অনেক আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। এছাড়াও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন ৮৩ জন 'গডফাদার'। তাদের শীর্ষ পর্যায়ের সহযোগী রয়েছে এক হাজার ১৮৫ জন। উৎকণ্ঠার বিষয় হলো, তালিকাভুক্ত এসব শীর্ষ ব্যবসায়ী মূলত সীমান্ত ও আকাশপথে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য দেশে আনছেন বলে জানা যাচ্ছে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মাদকের বিস্তার রোধে কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।
এর আগে বারবার এমন আলোচনা উঠে এসেছে- নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অবলীলায় জড়িয়ে পড়ছে মাদকের সঙ্গে। সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে যেমন আইনের আওতায় আনতে হবে, তেমনিভাবে মাদকের বিস্তার রোধে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথার্থ বাস্তবায়ন জরুরি।
সর্বোপরি, মাদকের ভয়াবহতাকে সামনে রেখে কার্যকর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। শুধু সব ধরনের মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করাই নয়, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে ঘুরে মাদক বিক্রির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দ্রম্নত কার্যকর উদ্যোগ জরুরি। একইসঙ্গে মাদকের বিস্তার রোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা তৎপর হবে এমনটি কাম্য।